চুয়াডাঙ্গা দৌলাতদিয়াড়ের কামরুলের মৃতদেহ আলমডাঙ্গার শ্যামপুর জিকে ক্যানেল থেকে উদ্ধার
স্টাফ রিপোর্টার: অন্যের ইজিবাইক ভাড়ায় নিয়ে উপার্জনের জন্য রাস্তায় বের হয়ে হত্যার শিকার হয়েছে চুযাডাঙ্গা দৌলাতদিয়াড় কোরিয়াপাড়ার কামরুল ইসলাম (২৪)। গতকাল মঙ্গলবার সকালে আলমডাঙ্গার শ্যামপুর জিকে ক্যানেল থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় কৃষক খালে দেয়া পাটজাগ দেখতে গেলে লাশ দেখে পুলিশে খবর দেন।
পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, যাত্রী সেজে ছিনতাইকারীরা তাকে নির্জন স্থানে নিয়ে সন্ধ্যার পর গলাটিপে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক নিয়ে পালিয়েছে। পরশু সোমবার সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে কারমরুল ইসলাম দৌলাতদিয়াড় দক্ষিণপাড়ার এরশাদের ইজিবাইক ভাড়ায় নিয়ে নিজে ভাড়া মারার উদ্দেশে বের হয়েছিলো সে। সন্ধ্যায় আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়া নতুনবাজারে মামা ওমর ফারুকের সাথে তার দেখা হয়। কথা হয়। তখন ইজিবাইকে ছিলো এক নারীসহ দুজন পুরুষ। একজন পুরুষের বয়স মধ্য হলেও অপরজন প্রায় বৃদ্ধ। সন্ধ্যায় ছেলে কামরুল ইসলামের মোবাইলফোনে রিং দিয়ে কথা বলেন পিতা আব্দুস সালাম। তখনও কামরুল ইসলাম ছিলো হাটবোয়ালিয়ায়। রাত ৮টার দিকে যখন আবারও ফোন করেন পিতা আব্দুস সালাম, তখন কামরুল ইসলামের মোবাইলফোন বন্ধ।
আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারী ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের কতিপয় কৃষক গ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা বালির ক্যানেল নামের জিকে সেচ প্রকল্পের ক্যানেলে পাটের জাগ দেখতে গেলে উপুড় অবস্থায় একটি লাশ পানিতে ভাসতে দেখেন। ঘটনাটি সাথে সাথে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান আলমডাঙ্গা থানা পুলিশকে জানালে আলমডাঙ্গা থানার ওসি (তদন্ত) লুৎফুল কবীর সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। সকাল ৯টার দিকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান। সে সময় উদ্ধারকৃত যুবকের লাশের পরিচয় কেউ বলতে পারেন নি। অজ্ঞাত যুবকের লাশের গলায় একটা কালসিটে দাগ ছিলো। কোমরে দড়ি বাঁধা ছিলো। শরীরের অন্য কোথাও আঘাতের তেমন চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়নি। লাশের নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিলো। গলায় দাগ ও নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে দেখে অনেকের ধারণা রাতেই গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যার পর লাশ পানিতে ফেলে দেয়া হয়েছে। এদিকে, এ লাশ উদ্ধারের সংবাদ পেয়ে চুয়াডাঙ্গা শহরের দৌলতদিয়াড় থেকে আলমডাঙ্গা থানায় ছুটে যান সালাম উদ্দীন। তিনি নিজের ছেলে কামরুল ইসলামের লাশ দাবি করেন। আলমডাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ আকরাম হোসেন বলেন, এ লাশ উদ্ধারের ঘটনাটির রহস্য উন্মোচনে তদন্ত চলছে। আশা করা হচ্ছে দ্রুত এই হত্যার রহস্য উন্মোচন সম্ভব হবে। হত্যাকা-ে জড়িতদেরও দ্রুত চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ লাশ ময়নাতদন্তের উদ্দেশে চুয়াডাঙ্গা মর্গে প্রেরণ করেন। ময়নাতদন্ত শেষে বাদ আছর লাশ দৌলতদিয়াড়ের স্থানীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে। গতকাল এ সংবাদ লেখা অবধি লাশ উদ্ধারের ঘটনায় থানায় কোনো এজাহার দায়ের করা হয়নি।
এদিকে পারিবারিকসূত্রে জানা গেছে, আব্দুস সালামের ৩ ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে কামরুল ইসলাম ছিলো সকলের বড়। গ্রামের প্রাইমারির গ-ি পেরিয়েই তাকে নামতে হয় উপার্জনের পথে। পূর্বে বিভিন্ন কাজ করলেও বেশ কিছুদিন ধরে সে ভাড়ায় নেয়া ইজিবাইক চালিয়ে বেশ ভালোই রোজগার করছিলো। পরিশ্রমী কামরুল ইসলাম বছর দু আগে ডিঙ্গেদহ কাবিলনগরে বিয়ে করে। সন্তান হয়নি। গত পরশু সোমবার সকাল আনুমানিক ৮টার দিকে ইজিবাইক নিয়ে বের হওয়ার পর আর ফেরেনি। গতকাল মঙ্গলবার ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে তার লাশ যখন নেয়া হয় বাড়িতে। তখন নিকজনদের আহাজারিতে শোকের ছায়া নেমে আসে। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে পিতা বলেন, ছেলে সারাদিন ফেরেনি শুনে সন্ধ্যায় ওর ফোনো করি। কথা হয়। বলে হাটবোয়ালিয়ায়। কিছুক্ষণপরই ফিরবো বলেও জানায়। রাত ৮টার দিকে ফোন দিয়ে যখনই ফোন বন্ধ পেয়েছি তখন থেকেই ওর খোঁজ করতে থাকি।