স্টাফ রিপোর্টার: টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় গত শুক্রবার এক অজ্ঞাত তরুণীর লাশ উদ্ধার করেছিলো পুলিশ। এবার তার পরিচয় মিলেছে। নাম, রূপা (২৫)। পুলিশ বলছে, তাকে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের পর হত্যা করে রাস্তায় ফেলে দেয়া হয়। এ ঘটনায় গ্রেফতার বাসের তিন শ্রমিক আজ মঙ্গলবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
রূপার বাড়ি সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার আসানবাড়ি গ্রামে। তিনি বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে ঢাকা আইডিয়াল’ কলেজে এলএলবি শেষ পর্বে পড়াশোনা করছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন তিনি। তার কর্মস্থল ছিলো শেরপুর জেলা।
পুলিশ ও ওই তরুণীর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার রুপা বগুড়ায় শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নেন। পরে বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার জন্য সন্ধ্যা ৭টার দিকে ছোঁয়া পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। রাত ১০টা পর্যন্ত রূপার সাথে তার বড় ভাই হাফিজুর রহমান প্রামাণিকের মুঠোফোনে যোগাযোগ ছিলো। কিন্তু এরপর থেকে রূপার ফোন বন্ধ পাওয়া যায় বলে জানান হাফিজুর। পরের দিন শনিবার কোনো খোঁজ না পেয়ে হাফিজুর ময়মনসিংহ যান এবং ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানায় এ ব্যাপারে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
অন্যদিকে শুক্রবার রাতে পুলিশ টাঙ্গাইলের মধুপুর বনাঞ্চল থেকে এক অজ্ঞাত তরুণীর লাশ উদ্ধার করে। শনিবার টাঙ্গাইলে ময়নাতদন্ত শেষে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় কবরস্থানে অজ্ঞাত পরিচয় লাশ হিসেবে তার দাফন করা হয়। ওই দিনই পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মধুপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করে। লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে হাফিজুর গতকাল সোমবার রাতে মধুপুর থানায় যান। সেখানে লাশের ছবি দেখে তা বোন রূপার বলে শনাক্ত করেন তিনি।
শুক্রবার রাতে ছোঁয়া পরিবহনের যে বাস বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ গিয়েছিলো, সেই একই বাস সোমবার মধুপুর অতিক্রম করার সময় পুলিশ আটকায়। এরপর ওই বাসের চালক হাবিব (৪৫), সুপারভাইজার সফেদ আলি (৫৫) এবং বাসের সহকারী শামীম (২৬), আকরাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীরকে (১৯) আটক করে পুলিশ। থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে বাসের তিন সহকারী রূপাকে ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে।
এ ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছে, ওই দিন বাসে রূপাসহ ছয় থেকে সাতজন যাত্রী ছিলেন। অন্য যাত্রীরা সিরাজগঞ্জ মোড় এবং বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্তে নেমে যান। বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার সময় রূপা একাই বাসে ছিলেন। বাসটি টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার কাছাকাছি এলে বাসের সহকারী শামীম জোর করে রূপাকে বাসের পেছনের আসনে নিয়ে যায়। এ সময় রূপা তার কাছে থাকা পাঁচ হাজার টাকা ও মুঠোফোন শামীমকে দিয়ে দেন এবং ক্ষতি না করতে অনুরোধ করেন। সেই অনুরোধ উপেক্ষা করে শামীম, আকরাম ও জাহাঙ্গীর তাকে ধর্ষণ করে। রূপা চিৎকার শুরু করলে ধর্ষকেরা তার মুখ চেপে ধরে। একপর্যায়ে ঘাড় মটকে রূপাকে হত্যা করা হয়। পরে মধুপুর উপজেলা সদর পেরিয়ে বন এলাকা শুরু হলে পঁচিশ মাইল এলাকার রাস্তার পাশে লাশটি ফেলে দেয়া হয়।
গ্রেফতার হওয়া বাসের তিন সহকারী শামীম, আকরাম ও জাহাঙ্গীরকে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে টাঙ্গাইল বিচারিক হাকিম আদালতে নেয়া হয়। আকরাম ও জাহাঙ্গীরের বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে। শামীমের বাড়ি মুক্তাগাছার নন্দীবাড়ি। এই তিনজন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। টাঙ্গাইলের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম গোলাম কিবরিয়া জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেছেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিকুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চালক হাবিব ও সুপারভাইজার সফেদ আলি ধর্ষণ ও হত্যায় জড়িত ছিলেন না বলে দাবি করেছে। তাদের দাবি, তারা শুধু লাশ ফেলতে সহায়তা করেছে। তাদের আগামীকাল বুধবার আদালতে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন ওসি।