ধর্ষক গুরুর ১০ বছর করে ২০ বছরের জেল

 

মাখাভাঙ্গা মনিটর: দুই নারী ভক্তকে ধর্ষণের দায়ে ভারতের হরিয়ানার ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিংকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যজুড়ে টান টান উত্তেজনা আর কড়া নিরাপত্তার মধ্যে গতকাল সোমবার রোহতকের জেলে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে এ রায় ঘোষণা করা হয়। দোষীকে দুই মামলায় ১০ বছর করে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। তার সাজা পর্যায়ক্রমে কার্যকর হবে।

এরআগে স্থানীয় সময় বেলা ২টা ২৫ মিনিটে হেলিকপ্টারে করে রোহতক থেকে থেকে ১০ কিলোমিটার দূরের সানোরিয়া কারাগারে যান সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের বিচারক জগদীপ সিংহ। এ কারাগারে আটক আছেন ধর্মগুরু রাম রহিম। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই কারাগারে বিচার কাজ পরিচালনা করা হয়।

আনন্দবাজার জানায়, ভারতের স্থানীয় সময় দুপুর পৌনে দুটো নাগাদ জেলে প্রবেশ করেন দু পক্ষের আইনজীবীরা। এরপর আড়াইটা বাজার আগে রোহতকে পৌঁছান বিচারপতি জগদীপ সিং। বেলা আড়াইটার কিছু সময় পর থেকে শুরু হয় শুনানি। শুনানির সময় দুই পক্ষকে ১০ মিনিট করে সময় দেয়া হয়। যুক্তি তর্ক শেষ হওয়ার পর বিচারপতি সবাইকে নীরবতা পালন করতে বলেন। এরপর সাজা ঘোষণা করেন বিচারপতি।

রাম রহিমের আইনজীবী দাবি করেন, রাম রহিম একজন সমাজকর্মী। তিনি জনগণের কল্যাণে কাজ করেন। তাই তার অপরাধকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখতে পারেন বিচারক। এর আগে বাদীপক্ষ রাম রহিমের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে। একপর্যায়ে রাম রহিম কান্না করে বিচারকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। গত শুক্রবার ধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন ভারতের স্বঘোষিত ধর্মগুরু রাম রহিম সিং। এরপরই পাঞ্জাব-হরিয়ানায় সহিংসতা শুরু হয়। হরিয়ানার পঞ্চকুলায় রাম রহিমের ভক্তদের লাগামছাড়া সহিংসতায় নিহত হন ৩৮ জন। আহত হন ২৫০ জনের বেশি। তখন থেকেই কারাগারের আশপাশে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। সাজা ঘোষণার দিন হরিয়ানার সব স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। মুঠোফোনের ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা হয়। ধর্মগুরুর ভক্তরা যাতে কারাগারের আশপাশে যেতে না পারেন, সে জন্য সেখানে অবস্থান নিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী এবং হরিয়ানা পুলিশ। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীও প্রস্তুত। এদিকে সিরসায় রাম রহিমের প্রধান ডেরা সচ সউদে এখনো ৩০ হাজার ভক্ত অবস্থান করছেন।

স্বঘোষিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের বিরুদ্ধে প্রায় ৪০০ জন ভক্তের অণ্ডকোষ কেটে ফেলাসহ আশ্রমের ৪০-৪৫ জন তরুণীর সঙ্গে নিয়মিত যৌনাচার চালানোর অভিযোগ রয়েছে। মূল অভিযোগকারিনীকে নিজের বিশেষ গুহায় ডেকে নিয়ে পাশে আগ্নেয়াস্ত্র রেখে ধর্ষণ করার অভিযোগ রয়েছে।

১৯৯৯ সালে তার বিরুদ্ধে দুই শিষ্যকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিলো। বার বার বেনামি চিঠিতে অভিযোগ পেয়ে ২০০২ সালে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই রাম রহিম সিংয়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের করে। দীর্ঘ ১৫ বছর পর গত শুক্রবার সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে সেই মামলায় রাম রহিমকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।

ভারতে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে জেলে আরেক ধর্মগুরু!

মাখাভাঙ্গা মনিটর: রাম রহিম সিং-ই প্রথম নন, তার আগে আরো একজন ধর্মগুরু ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন। তিনি হলেন ৭৬ বছর বয়সী আসারাম বাপু। ১৬ বছর বয়সী এক স্কুল পড়ুয়া ছাত্রীকে ধর্ষণে অভিযুক্ত হয়ে তিনি এখন রাজস্থানের জেলে। ৪ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি জেলে রয়েছেন। তবে তার মামলায় রয়েছে ধীরগতি। এ বিষয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট গুজরাট সরকারের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

গুজরাট সরকারকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেছেন, এ মামলায় কেন এই বিলম্ব? আপনারা নির্যাতিত (বালিকাকে) দেখতে যাননি। কিন্তু কেন আমাদের বলুন? এর পাশাপাশি এ মামলায় একটি অগ্রগতি রিপোর্ট দিতে রাজ্য সরকারকে আদেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।  ২০১৩ সালের শুরুতে নিজের আশ্রমে ১৬ বছর বয়সী ওই বালিকাকে আশারাম বাপু ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ করা হয়। এরপর ওই বছর আগস্ট থেকে রাজস্থানের জেলে আছেন আশারাম বাপু। এই ধর্মগুরুর বয়স এখন ৭৬ বছর। ঘটনার দু মাস পরে আশারাম বাপু ও তার ছেলে নারায়ণ সাইয়ের বিরুদ্ধে দুই বোনকে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। বলা হয়, তারা গুজরাটের সুরাটে তাদের আশ্রমে ওই দুই বালিকাকে ধর্ষণ করেছেন। এ মামলাটি গান্ধীনগরের আদালতে মুলতবি অবস্থায় রয়েছে।

এদিকে আশারাম বাপুর জামিন আবেদনের শুনানি চলছে সুপ্রিম কোর্টে। এ সময় রাজ্য সরকারকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেন আদালতের বিচারক। তার জবাবে গুজরাট সরকার জানায়, মামলার বিলম্বের জন্য দায়ী তথাকথিত ‘ধর্মগুরু’। এ বছরের শুরুর দিকে সুপ্রিম কোর্ট কোনো কালবিলম্ব না করে নির্যাতিত বালিকার কাছ থেকে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ ও অন্য প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে তাদের বক্তব্য রেকর্ড করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু এখনও ৪০ জনের বেশি সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়নি। বিভিন্ন কারণে আশারাম বাপুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন সুপ্রিম কোর্ট।

উল্লেখ্য, আশারাম বাপু ও তার ছেলে জেলে থাকা অবস্থায় এ মামলার ৬ জন সাক্ষীর ওপর হামলা হয়েছে। এর মধ্যে নিহত হয়েছেন দুজন।

 

 

ধর্ষক গুরুর বিরুদ্ধে লেখা সাধ্বীর সেই চিঠি

মাখাভাঙ্গা মনিটর: এক নারী ভক্তকে ধর্ষণ করায় ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে ভারতের হরিয়ানার কথিত ধর্মগুরু রাম রহিমের। এখন থেকে ১৫ বছর আগে এক সাধ্বী এই কথিত ধর্মগুরুর নির্যাতনের বিরুদ্ধে চিঠি লিখেছিলেন ওই সময়ের প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী ও পাঞ্জাব-হরিয়ানা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে। বেনামে লেখা চিঠিতে ওই নারী অভিযোগ করেন, হরিয়ানার শহর সিরসায় ডেরা সচ সউদ গোষ্ঠীর প্রধান কার্যালয়ে রাম রহিম তাকে যৌন নির্যাতন করেন।

২০০২ সালের মে মাসে সেই চিঠিটি দেশ সেবক নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করে। পরে অবশ্য সিবিআই জানায়, চিঠিটি প্রকাশের কারণে ওই পত্রিকার সাংবাদিক রামচন্দ্র ছত্রপতিকে হত্যা করা হয়। কী ছিলো ওই চিঠিতে, তা সম্প্রতি প্রকাশ করেছে আনন্দবাজার পত্রিকা। তা হুবহ তুলে ধরা হলো।

শ্রী অটল বিহারি বাজপেয়ি প্রধানমন্ত্রী, নয়াদিল্লি আমি পাঞ্জাব থেকে আসা মেয়ে। সিরসার (হরিয়ানা) ডেরা সচ সউদে একজন সাধ্বী হিসেবে সেবা করে চলেছি ৫ বছর ধরে। আমার মতো আরও কয়েক শ মেয়ে এখানে রয়েছেন, যারা প্রতি দিন ১৮ ঘণ্টা করে সেবা করে চলেছেন। কিন্তু এখানে আমরা যৌন নির্যাতনের শিকার। ডেরায় মেয়েদের ধর্ষণ করেন ডেরা মহারাজ (গুরমিত সিংহ)। আমি একজন স্নাতক। ডেরা মহারাজের ওপরে আমার পরিবারের অন্ধবিশ্বাস। পরিবারের সেই অন্ধবিশ্বাসের জেরেই আজ আমি একজন সাধ্বী। সাধ্বী হওয়ার বছর দুয়েক পর একদিন রাত ১০টা নাগাদ হঠাৎ এক মহিলা ভক্ত আমার ঘরে আসেন। জানান, মহারাজ আমাকে ডেকেছেন। মহারাজ স্বয়ং ডেকে পাঠিয়েছেন শুনে খুব উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েছিলাম। সাধ্বী হওয়ার পর সেটাই তার সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎ। সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে তার ঘরে ঢুকি। দেখলাম, ওনার হাতে একটা রিমোট এবং টিভিতে তিনি ব্লু  ফিল্ম দেখছেন। বিছানায় তার বালিশের পাশে একটা পিস্তল রাখা ছিলো। এসব দেখে আমি ভয় পেয়ে যায়। ভীষণ নার্ভাস হয়ে পড়েছিলাম। এরপর মহারাজ টিভিটা বন্ধ করে দেন। আমাকে ঠিক তার পাশে নিয়ে গিয়ে বসান। খাওয়ার জন্য এক গ্লাস জল দেন। তারপর খুব আস্তে করে বলেন, ডেকে পাঠানোর কারণ, আমাকে তিনি নিজের খুব কাছের বলে মনে করেন। এটাই ছিলো আমার প্রথম অভিজ্ঞতা। এরপরই তিনি এক হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে তার আরও কাছে টেনে নেন। কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বলেন, আমাকে তিনি হৃদয়ের গভীর থেকে ভালোবাসেন। আমার সঙ্গে সহবাস করতে চান। বলেন, তার শিষ্যা হওয়ার সময়ই আমার সমস্ত সম্পদ, আমার শরীর এবং আত্মা তার কাছে উৎসর্গ করেছি এবং তিনি তা গ্রহণও করেছেন। আমি বাধা দিলে তিনি বলেন, ‘আমি ঈশ্বর, এতে তো কোনো সন্দেহ নেই।’ আমি তাকে বলি, ঈশ্বর কখনো এ রকম করেন না। আমাকে বাধা দিয়ে তিনি বলেন, ১. শ্রীকৃষ্ণও ঈশ্বর। তার ৩৬০ জন গোপী ছিলেন। যাদের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণ প্রেমলীলা করতেন। আমাকেও সবাই ঈশ্বর বলে মানে। এতে এত অবাক হওয়ার কিছু নেই। ২. আমি তোমাকে এখনই এই পিস্তল দিয়ে খুন করতে পারি। তোমার লাশ এখানেই পুঁতে দেবো। তোমার পরিবারের প্রতিটা সদস্য আমার অন্ধ ভক্ত। তুমি খুব ভালো করেই জানো, তারা কখনোই আমার বিপক্ষে যাবেন না। ৩. সরকারের ওপরেও আমার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। পাঞ্জাব, হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী এবং কেন্দ্রের অনেক মন্ত্রীও আমার কাছে আসেন। আমার প্রতি তাদের ভক্তি দেখান। রাজনীতিবিদেরা আমার কাছ থেকে সাহায্য নিতে থাকেন। সুতরাং, তারাও আমার বিরুদ্ধে কোনো রকম পদক্ষেপ করবেন না। আমি তোমার পরিবারের সদস্যদের সরকারি চাকরি কেড়ে নেবো এবং তাদের সেবাদার দিয়ে খুন করাবো। আর সেই খুনের কোনো প্রমাণ থাকবে না। তুমি খুব ভালো করেই জানো, ডেরা ম্যানেজার ফকিরচাঁদকেও আমি গুন্ডা দিয়ে খুন করিয়েছি। এখনো সেই খুনের কিনারা হয়নি। ডেরার দৈনিক আয় এক কোটি। এই টাকা দিয়ে আমরা রাজনীতিক নেতা, পুলিশ, এমনকি বিচারক সকলকেই কিনে ফেলতে পারি। ঠিক এরপরই মহারাজ আমাকে ধর্ষণ করেন। তিন বছর ধরেই মহারাজ এভাবে আমাকে ধর্ষণ করে আসছেন। প্রতি ২৫ থেকে ৩০ দিন অন্তর আমার পালা আসে। আমি জানতে পেরেছি, আমার মতো যতজন সাধ্বীকে তিনি তলব করেছেন, তাদের সবাইকেই ধর্ষণ করেছেন। বেশির ভাগেরই বয়স এখন ৩০ থেকে ৪০। বিয়ের বয়স পেরিয়ে গিয়েছে। তাদের কাছে এখন ডেরার এই আশ্রয় ছাড়া আর কোনো অবলম্বন নেই। এই নারীদের বেশির ভাগই শিক্ষিত। কারও স্নাতক তো কারও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি রয়েছে। কিন্তু তারা তা সত্ত্বেও এই নরকবাস করছেন। কারণ একটাই, মহারাজের ওপরে তাদের পরিবারের অন্ধবিশ্বাস। আমরা শাদা পোশাক পরি, মাথায় স্কার্ফ বাঁধি, পুরুষদের দিকে চেয়ে দেখি না। পুরুষদের সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন হলে ৫-১০ ফুট দূরত্ব বজায় রাখি। কারণ, এসবই মহারাজের ইচ্ছা। তার কথামতোই আমরা এখানে চলাফেরা করি। সাধারণ মানুষ আমাদের দেবী গণ্য করেন। কিন্তু তারা জানেন না, ডেরাতে আমরা আসলে রক্ষিতা। ডেরা এবং মহারাজের আসল সত্যিটা আমি আমার পরিবারকে জানানোর চেষ্টা করেছিলাম। তাতে তারা আমাকেই বকাবকি করে। জানায়, ডেরায় স্বয়ং ঈশ্বরের (মহারাজ) বাস। সুতরাং, এর থেকে ভালো জায়গা আর নেই। এবং ডেরা সম্পর্কে যেহেতু আমার মনে খারাপ ধারণা জন্মেছে, তাই আমার উচিত ‘সদ্গুরু’-র নাম করা। শেষ পর্যন্ত আমাকে মহারাজের সমস্ত আদেশ পালন করতেই হয়, কারণ আমি সব মিলিয়ে অসহায়।

এখানে কাউকেই অন্যদের সঙ্গে বেশি কথা বলতে দেয়া হয় না। পাছে ডেরার সত্য ফাঁস হয়ে যায়, তাই টেলিফোনেও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেয়া হয় না। কোনো সাধ্বী যদি মহারাজের এই আচরণ ফাঁস করে দেন, তাহলে মহারাজের আদেশমতো তাকে শাস্তি দেয়া হয়। কিছুদিন আগে, ভাতিন্দার এক তরুণী মহারাজের এই সমস্ত নির্যাতনের কথা পরিবারকে জানান। মহারাজের নির্দেশে সমস্ত সাধ্বী মিলে তাকে বেধড়ক পেটান। মেরুদণ্ডে গুরুতর চোট নিয়ে তিনি এখন শয্যাশায়ী। তার বাবা ডেরায় কাজ করতেন। কাজে ইস্তফা দিয়ে বাড়ি ফিরে যান। মহারাজের ভয়ে এবং আত্মসম্মানের কথা ভেবে মুখ খোলেননি।

একই ভাবে, এই নির্যাতনের শিকার হন কুরুক্ষেত্রের এক তরুণীও। ডেরা ছেড়ে বাড়ি চলে যান তিনি। তার কাছ থেকে এসব কথা জানার পর তার ভাইও ডেরার কাজ থেকে ইস্তফা দিয়ে চলে যান। পাঞ্জাবের সঙ্গরুর এক তরুণী সাহস করে বাড়ি ফিরে ডেরার ভয়ংকর দিকটা সবাইকে জানিয়েছিলেন। পরদিনই ডেরার অস্ত্রধারী সেবাদার বা গুন্ডারা তার বাড়িতে পৌঁছে যান। মুখ খুললে তাকে খুনের হুমকি দেন। একইভাবে মানসা, ফিরোজপুর, পাতিয়ালা ও লুধিয়ানা থেকে এখানে আসা তরুণীরাও ভয়ে ডেরা নিয়ে কিছু জানাতে চাননি। তারা ডেরা ছেড়ে চলে গিয়েছেন। কিন্তু তারপরও খুন হওয়ার ভয়ে মুখ বন্ধ করে আছেন। সিরসা, হিসার, ফতেয়াবাদ, হনুমানগড় এবং মেরঠের তরুণীরাও মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন।

আমিও যদি আমার নাম জানাই, তাহলে আমাকে এবং আমার পরিবারকে খুন করা হবে। সাধারণ মানুষের স্বার্থেই এই সত্য আমি সামনে আনতে চাই। এই মানসিক চাপ আর নির্যাতন সহ্য করতে পারছি না। খুব বিপদে রয়েছি। সংবাদমাধ্যম বা সরকারি কোনো সংস্থা যদি তদন্ত চালায়, তাহলে অন্তত ৪০ থেকে ৫০ জন সাধ্বী এগিয়ে এসে এই সত্য জানাবেন, আমি নিশ্চিত। আমাদের ডাক্তারি পরীক্ষা করা হোক। আমরা আদৌ সাধ্বী কি-না, তা জানা হোক। পরীক্ষায় যদি প্রমাণ হয় যে আমদের কুমারীত্ব নেই, তাহলে তদন্ত করে জানা হোক, কে আমাদের সতীত্ব হরণ করেছেন। তাহলেই সত্য বাইরে আসবে। মহারাজ গুরমিত রাম রহিম সিংহই যে আমাদের জীবন নষ্ট করেছেন, তার প্রমাণ মিলবে।

কী আছে ধর্ষকগুরু গুরমিত সিংয়ের শেষ সিনেমায়?

মাখাভাঙ্গা মনিটর: ধর্ষকগুরু’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের কথিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিংকে নিজের দুই নারী শিষ্যাকে ধর্ষণের দায়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সোমবার আদালতের রায়ের পর রোহতক জেলার সুনারিয়া কারাগারে তার জেল জীবন শুরু হয়েছে। বর্তমানে পুরো ভারতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন স্বঘোষিত এই ধর্মগুরু। বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এ ধর্মগুরু শুধু ধর্মীয় ক্ষেত্রেই পরিচিত নন। তিনি সিনেমার পর্দায় নায়ক, গায়ক এবং পরিচালকও বটে। ২০১৪ সাল থেকে তিনি সিনেমা প্রযোজনা ও অভিনয়ে নামেন। তার প্রথম ছবি ‘মেসেঞ্জার অফ গড’ সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। ছবি মুক্তির প্রথম সপ্তাহেই ছবির বক্স অফিস কলেকশন ছিলো ১০০ কোটি রুপি । যা সে সময়ে মুক্তি পাওয়া রনবীর কাপুরের ‘রয়’ ছবিকেও ছাপিয়ে যায়। প্রথম ছবিতেই ‘অসামান্য’ সাফল্য পাওয়ায় একের পর এক ছবিতে অভিনয় করেন ধর্মগুরু রাম রহিম। এ পর্যন্ত তার ৫টি ছবি মুক্তি পেয়েছে। এর মধ্যে মেসেঞ্জার অফ গড, দ্য লায়ন হার্ট, জয়তু ইঞ্জিনিয়ার অন্যতম।

আসুন জেনে নেই গুরমিত সিংয়ে সর্বশেষ মুক্তি পাওয়া ছবি ‘জয়তু ইঞ্জিনিয়ারে’ কী আছে- সিনেমাটির অফিসিয়াল ট্রেলারের প্রথম দৃশ্যে দেখা যায়- বিস্তৃর্ণ মাঠে টয়লেট সারছেন অসংখ্য মানুষ। এদের মধ্যে একজন আবার একটু উঁচু ময়লার স্তুপে বসে সারছেন প্রাতকর্ম। অন্য দুজন তাকে উদ্দেশ্য করে গান শুরু করে দিয়েছে। গানের কথাগুলো এরকম- ‘তেরে স্বপ্নকো রানি কব আয়ে গা? যায়ে গি তো সাম, তব আয়ে গা?’ (তোর স্বপ্নের রানি কবে আসবে? সন্ধ্যা শেষ হলে তবেই কি আসবে?’) এখানে ওই ব্যক্তির শৌচকর্মে ধীর গতির কারণে আসলে তাকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে। গানে গানে একপর্যায়ে তাকে ‘জোর’ লাগাতেও বলছে ওই দুই ব্যক্তি। একজন আবার ওই অবস্থাতেই সেলফি তুলছেন। অবশেষে চলে আসে শৌচকর্মে লিপ্ত ব্যক্তির ‘স্বপ্নের রানি’ (হালকা হওয়ার অশ্লীল শব্দ)। বির্তকিত ধর্মগুরু গুরমিতের এই সিনেমার ট্রেলারে আরও দেখা যায়- একটি বাইকে করে আসছেন গ্রামের স্কুলের হেডমাস্টার (গুরমিত)। তার পেছনে পেছনে ছুটছে গ্রামের ছেলে-মেয়েরা। ছেলে-মেয়েদের স্কুলে আসার জন্য মাইকে ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু ছেলে-মেয়েরা স্কুলে না গিয়ে পাশের পুকুরে লাফিয়ে পড়ে গোসল করায় ব্যস্ত। ছেলে-মেয়েদের পরিবর্তে একপাল গরুকে স্কুলে ঢুকতে দেখা যায়। এরপর দেখা যায় বস্তাপচা অশ্লীল অ্যাকশন দৃশ্য। চার মিনিট এক সেকেন্ডের এই ট্রেলারটি গুরমিত রাম রহিমের ভেরিফাইড ইউটিউব চ্যানেল (Saint MSG) থেকে নেয়া হয়েছে। ট্রেলারে আরও দেখা যায়- হেডমাস্টারের থাকার কোয়ার্টার ব্যবহৃত হচ্ছে মুরগির খোয়াড় হিসেবে। মাস্টার মশায় আবার হাডুডু খেলাও পারদর্শী। সে দৃশ্যও আছে ট্রেলারে। আছে হলি খেলার দৃশ্য, যেখানে মাস্টার মশায় (গুরমিত) একটি কম বয়সী মেয়ে নজরে আসে হেডমাস্টার সাহেবের। তিনি বিশেষভাবে রাঙিয়ে দেন সেই মেয়েকে। এছাড়া, গ্রামের মুখিয়াকে চড় মারা, ক্ষেতে কাজ করা, অলস গ্রামবাসীকে কর্মঠ বানানো ইত্যাদি দৃশ্যও আছে ওই ট্রেলারে।

প্রসঙ্গত, ১৯৬৭ সালে ১৫ আগস্ট রাজস্থানের গঙ্গানগরে শ্রীগুরুসর মৌদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন গুরমিত রাম রহিম সিং। মাত্র ৭ বছর বয়স থেকেই বাড়ি ছেড়ে শিখ ধর্মের এক গুরুর কাছে প্রতিপালিত এবং শিখ ধর্মের দীক্ষিত হতে থাকেন। সেখানে থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করে ১৯৯০ সালে ২৩ সেপ্টেম্বর ডেরা সৌদার প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন এবং সর্বধর্ম সমন্বয়ক হিসেবে নিজের প্রচার শুরু করেন। মূলত দলিত ও পিছিয়ে পড়া মানুষই তাকে নিজেদের গুরু হিসেবে মনে করতে শুরু করেন। প্রথম দিকে তেমন জনপ্রিয়তা না পেলেও পরবর্তীতে আস্তে আস্তে নিজের অবস্থান পাকা করতে শুরু করেন। এর কারণ হচ্ছে, তিনি বিভিন্ন রক্তদান শিবির করতেন, যৌনকর্মীদের পুনর্বাসন করতেন, অর্থাভাবে পড়াশোনা করতে না পাড়া ছেলে-মেয়েদের পড়ানোর খরচ বহন করতেন। হরিয়ানা ও পাঞ্জাবে যেখানে সরকারি পরিসেবা নেই সেখানে তার অর্থ সাহায্যে হাসপাতাল, বাজার ও পরিবহনও চলতো প্রায় বিনামূল্যে। বৃক্ষরোপণ নিয়েও রাম রহিমের সারা বছরই কর্মসূচি চলে। রক্তদান শিবির ছিল তার ডেরার প্রধান কাজ। ২০০৩ সালে পৃথিবীর বৃহত্তম রক্তদান শিবির করে গিনেজবুক অব রেকর্ড-এ নাম লিখিয়েছেন রাম রহিম সিং ইনসান। হরিয়ানার সারদায় ৮০০ একর জমির ওপর তৈরি হওয়া কর্মসংস্থান প্রকল্পে প্রায় ২০ হাজার কর্মীর কর্মসংস্থান করেছেন। সেখানে অর্গ্যানিক মধু ও নুডলস তৈরি হয়। হরিয়ানা ও পাঞ্জাবে তার ডেরা সৌদার প্রায় ৫ হাজার ক্যাম্প অফিস আছে। আর সেই ক্যাম্প অফিসের নথিভুক্ত ভক্তের সংখ্যা ৫ কোটি।

এতো বড় ভক্ত-অনুগামী থাকায় স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের চোখে ভোটের মধু খেতে ‘প্রিয়পাত্র’ হয়ে উঠেছিলেন গুরুমিত। যদিও নিজে কংগ্রেস আদর্শে বিশ্বাস বলে দাবি করতেন। কিন্তু ২০১৪ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে সমর্থন করায় হরিয়ানায় বিজেপি জয় পেয়েছিলো। একইভাবে ২০১৫ সালে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনেও প্রকাশ্যে রাম রহিম সিং ইনসান সমর্থন জানিয়েছিলো বিজেপিকে। সেখানে জয় হয়েছিলো বিজেপিরই। এমন কি বিহার বিধানসভা নির্বাচনেও প্রকাশ্যেই বিজেপির হয়ে ভোট ভিক্ষা করেছিলেন গুরমিত রাম রহিম সিং।

Leave a comment