মেহেরপুরে গো-হাটে ইচ্ছেমতো খাজনা আদায়! অসহায় ক্রেতা-বিক্রেতারা

স্টাফ রিপোর্টার: মেহেরপুর জেলার গো-হাটগুলোতে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের কাছ থেকে ইজারাদারের ইচ্ছেমতো খাজনা আদায় করা হচ্ছে। শতকরা দুই টাকা থেকে শুরু করে ৫ টাকা পর্যন্ত খাজনা আদায় করা হচ্ছে। এতে ক্রেতা-বিক্রেতারা ক্ষুদ্ধ হলেও কোনো প্রতিকার নেই। হাট ইজারাদারদের দাবি কোনো পণ্যের কী পরিমাণ খাজনা আদায় করতে হবে তার কোনো তালিকা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা হয়নি। ফলে নিজেরাই মূল্য নির্ধারণ করে খাজনা আদায় করছি। দ্বায় স্বীকার করে জেলা প্রশাসক জানালেন দ্রুত একটি কমিটি গঠন করে খাজনার পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে। সারা বছর গবাদিপশুর হাটগুলোতে কেনাবেচা কম থাকে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশু কেনাবেচার জন্য বিপুল সংখ্যক গরু-ছাগল হাটগুলোতে তোলা হয়। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাড়িত খাজনা নিয়ে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন হাট ইজারাদাররা।

মেহেরপুর সদর উপজেলার সবচাইতে বড় ছাগলের হাট বরাদী বাজার। খাজনা আদায়কে কেন্দ্র করে সেখানে ক্রেতা-বিক্রেতা ও ইজারাদারদের মধ্যে চলে বাগবিতণ্ডা। প্রতি হাটেই খাজনা নিয়ে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন ক্রেতা-বিক্রেতারা। ইচ্ছেমাফিক খাজনা আদায়ের প্রতিবাদ করলেই ইজারাদারের লোকজন হুমকি দেয়। পেশিশক্তির বলে তারা খাজনা আদায় করছেন। বুধবার বারাদী হাটে ছাগল প্রতি খাজনার বিষয়ে জানতে চইলে ইজারাদার রফিকুল ইসলাম ক্ষুব্ধ হন। খাজনা আদায়ের নীতিমালা আছে কি-না এবং বিক্রি দামের কতো ভাগ পরিমাণে খাজনা আদায় করতে হবে সে প্রশ্নের কোনো সদুত্তোর দিতে পারেননি ইজারাদার। অবশ্য ক্যামেরায় তার কথাবার্তা রেকর্ড হচ্ছে বুঝতে পেরে কৌশলে সেখান থেকে সটকে পড়েন। পরে ইজারাদারের এক প্রতিনিধি এসে সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

বারাদী ছাগল হাটের ক্রেতা পূর্ব মালসাদহ গ্রামের জাকির হোসেন বলেন, আমী ১৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি খাসি ছাগল কিনেছি। খাজনা দিয়েছি ৭৫০ টাকা। বিক্রেতার কাছ থেকেই ৩৫০ টাকা টাকা খাজনা নিয়েছে। খাজনা কম নিতে বলায় ইজারাদারের আদায়কারীদের ধমক খেয়েছি। তাদের কাছে তো ক্রেতা-বিক্রেতারা অসহায়। অবশ্য কয়েকজন ছাগল ব্যাপারী ইজারাদারদে সুনাম করলেন। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তেমন খাজনা নেয়া হয় না বলে জানালেন তারা।

বারাদী ছাগল হাটে খাজনা আদায়ের কয়েকটি রসিদ ঘেটে দেখা গেছে, শতকরা ৫ শতাংশ হারে খাজনা আদায় করা হচ্ছে। আবার বিক্রেতাদের কাছ থেকেও নেয়া হচ্ছে খাজনা। নিয়মানুযায়ী পণ্য কিংবা সম্পদ বিক্রেতারাই শুধুমাত্র হাটের খাজনা পরিশোধ করবেন। এদিকে সরকারি হাটবাজার ব্যবস্থাপনা নীতিমালায় স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে ইজারাদারকে অনুমোদিত টোল রেইট (খাজনা দর) তালিকা বাজারে দৃশমান স্থানে জনগণের জ্ঞাতার্থে টানিয়ে রাখতে হবে। কিন্তু তার প্রতিফলন কোনো হাটেই দেখা মেলেনি।

বারাদী হাটের মতোই একই চিত্র মেহেরপুর জেলার সবচেয়ে বড় পশুহাট বামন্দী-নিশিপুর পশুহাটে। এখানেও ক্রেতা-বিক্রেতার উভয়ের কাছ থেকেই খাজনা আদায় করা হচ্ছে। গরুর ক্রেতাদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে শতকরা ২ টাকা হারে। আর ছাগলের ক্রেতাদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে শতকরা ৫ টাকা হারে খাজনা। আবার বিক্রেতাদের কাছ থেকেও নেয়া হচ্ছে খাজনা। অবশ্য হাট ইজারাদার ইচ্ছেমতো খাজনা আদায়ের কথা স্বীকার করে বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাজনা আদায়ের নিয়ম-নীতির কোনো কাগজপত্র সরবরাহ করা হয়নি।

দায় স্বীকার করে জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহ বলেন, নিয়ম মেনে খাজনা আদায় করা হচ্ছে না, এ বিষয়টি জানা ছিলো না। খুব দ্রুত একটি কমিটি গঠন করে কোনো পণ্যে/সম্পদের কী পরিমাণ খাজনা আদায় করা হবে তা তালিকা তৈরি করে হাট ইজারাদারদের সরবরাহ করা হবে।

Leave a comment