হুইপের প্রতিনিধি জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি করছেন চিকিৎসার তদারকি
স্টাফ রিপোর্টার: সৌদি আরবে বিক্রি হওয়া নারী ছালমা খাতুনের পাশে দাঁড়িয়ে আইনগতসহ যাবতীয় সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ। গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ছালমা খাতুনের শয্যাপাশে দাঁড়িয়ে চিকিৎসার খোঁজখবর নেয়ার পাশাপাশি নগদ ১০ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করেন। যতো দ্রুত সম্ভব দালাল হাবলুকে ধরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির লক্ষ্যে আইনে সোপর্দ করার প্রতিশ্রুতি পূর্বেই দিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ। তবে গতকাল শেষতথ্য পাওয়া পর্যন্ত তাকে গ্রেফতারের খবর পাওয়া যায়নি।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছালমা খাতুনের শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটছে। চিকিৎসক এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, শরীরে আঘাত গুরুতর। পুরোপুরি সুস্থ হতে কিছুটা সময় লাগবে। তাছাড়া প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজও চলছে। গতপরশু শুক্রবার ছালমা খাতুনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাতীয় সংসদের হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপির প্রতিনিধি হিসেবে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহায়মেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিক গতকাল সকালে হাসপাতালে ছালমা খাতুনের চিকিৎসার খোঁজ নেন। ওয়ার্ড থেকে কেবিনে নেয়ার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ব্যায়ভারও গ্রহণ করেন। এ সময় অনিক জোয়ার্দ্দার বলেন, হুইপ মহোদয় বিদেশে নির্যাতনের শিকার নারীর বর্ণনা শুনে দুঃখ প্রকাশ করে চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয়ভার গ্রহণের ইচ্ছে ব্যক্তকরে আমাকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বলেছেন। সে মতে ওষুধ পণ্য কিনে দেয়া হচ্ছে।
এদিকে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছালমা খাতুনের শয্যাপাশে দাঁড়িয়ে ঘটনার বর্ণনা শোনেন। তিনি ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিষয়টি নিশ্চিত করার লক্ষে যাবতীয় আইনগত সহযোগিতার আশ্বাস দেয়ার পাশাপাশি নগদ ১০ হাজার টাকা প্রদান করেন। প্রয়োজনে আরও অর্থ দেয়া হবে বলেও তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, তোমার পাশে পুরো চুয়াডাঙ্গা রয়েছে। ভেঙে পড়ার কারণ নেই। অবশ্যই হাবলু দালালদের উপযুক্ত শাস্তিই হবে। আল জাহান এজেন্সির সনদ বাতিলসহ তার সত্ত্বাধিকারীদেরও আইনের আওতায় নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত: চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার শিবপুর গ্রামের জিনারুল ইসলাম ও তার স্ত্রী ছালমা খাতুনকে ভালোবেতনে গৃহপরিচারিকার চাকরির কথা বলে দেড় লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় পাঁচকমলাপুরের আকছার আলীর ছেলে হাবলু। জিনারুলকে না পাঠিয়ে ছালমাকে সৌদি আরবে পাঠানোর মাসখানেকের মাথায় ছালমা বুঝতে পারে হাবলু গং তাকে ৬ লাখ টাকার বিনিময়ে দু বছরের জন্য বিক্রি করে দিয়েছে। এটা জানার পর ছালমা যখন দাসত্ব খাটতে অস্বীকৃতি জানায় তখনই শুরু হয় নির্মম নির্যাতন। কয়েক মাস ধরে নির্যাতনের শিকার হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। দুদফা হাসপাতালে নেয়ার পর সাংবাদিকদের সহযোগিতায় সেখানে বাংলাদেশের দূতাবাসে পৌঁছায়। গত বুধবার তাকে দেশে ফেরত নেয়া সম্ভব হয়। বৃহস্পতিবার বাড়ি ফেরেন ছালমা। শুক্রবার ভর্তি করা হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। খবর পেয়ে জেলা পুলিশের তরফে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন হাসপাতালে ছালমার শয্যাপাশে দাঁড়িয়ে ঘটনার বর্ণনা শুনে তাৎক্ষণিকভাবে দালাল হাবলুকে দ্রুত গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতি দেন।