নজরুল প্রয়াণ দিবস আজ

স্টাফ রিপোর্টার: ‘যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে!/ অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে-/ বুঝবে সেদিন বুঝবে।/ …. গাইতে বসে কণ্ঠ ছিড়ে আসবে যখন কান্না,/ বলবে সবাই- সেই যে পথিক তার শোনানো গান না?’ (কাজী নজরুল ইসলাম; অভিশাপ)।

আজ ১২ ভাদ্র, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪১ তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৬ সালের এদিনে মৃত্যুবরণ করেন চির তারুণ্যের প্রতীক এই কবি। কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। সেখানেই চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন তিনি। তুরস্কে কামাল পাশার নেতৃত্বে প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা, রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব আর ভারতবর্ষে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের তরঙ্গকে নজরুল তার সাহিত্যে বিপুলভাবে ধারণ করেছেন। সেই সময়ে ধর্মান্ধ মুসলমানদের তিনি পুনর্জাগরণের ডাক দিয়েছেন এবং এক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিলো একজন বলিষ্ঠ নেতার মতো। কাজী নজরুল ইসলাম প্রেমের কবি, বিরহ-বেদনা ও সাম্যের কবি। বাংলা সাহিত্য-সঙ্গীত তথা সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান পুরুষ। তবে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে তার লেখনী ধূমকেতুর মতো আঘাত হেনে জাগিয়ে দিয়েছিলো ভারতবাসীকে। তিনি পরিণত হন বিদ্রোহের কবিতে। আজও তার নানা ধরনের লেখার মাঝ থেকে বিদ্রোহের পংক্তিমালা বাঙালির হৃদয়ে অনাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের দুন্দুভি বাজিয়ে চলে। তার কবিতা ‘চল চল্ চল’ বাংলাদেশের রণসঙ্গীত।

বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করে বাংলা সঙ্গীত জগতকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। প্রেম, দ্রোহ, সাম্যবাদ ও জাগরণের কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও গান শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামে জাতিকে উদ্বুব্ধ করেছে। মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিলো প্রেরণার উত্স। নজরুলের কবিতা, গান ও সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিলো। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃত লেখক। তার লেখনি জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তার কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে।

কর্মসূচি: জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশন ও বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে।

কার্পাসডাঙ্গা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আজ রোববার কার্পাসডাঙ্গা নজরুল স্মৃতি সংসদের আয়োজনে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে নজরুলের প্রতিকৃতিতে পুষ্প অর্পণের মধ্যদিয়ে দিবসটির কর্মসূচি শুরু করা হবে। এরপর সাড়ে ৩টার দিকে কার্পাসডাঙ্গায় মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি কমপ্লেক্সে ভবনে আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে। আলোচনাসভায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ উপস্থিত থাকবেন। আলোচনাসভায় উপস্থিত থাকবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল হাসান, উপজেলা আ.লীগ সভাপতি সিরাজুল আলম ঝন্টু, পারকৃষ্টপুর-মদনা ইউপি চেয়ারম্যান এসএম জাকারিয়া আলম, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান মুন্সি আবু সাইফসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। এরপর সাড়ে ৪টার দিকে কাজী নজরুল ইসলামের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। বিকেল ৫টার দিকে নজরুল শিল্পীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।