শাহাবুদ্দিন রিংকু/রহমান রনজু: কেজি কেজি দুধ দেয়া গাভীগুলো স্রষ্টার নামে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের সড়কে ছেড়ে রাখা হলেও বেওয়ারিশ নয়। গোয়ালা আছে, আছে গোয়ালিনীও। কারো কোনো ক্ষতি করলেও নেই শুধু সেই গরু খোয়াড়ে দেয়ার রেওয়াজ। দোকানের মালামাল মুখে নিয়ে দৌড় দেয়া গরুর মালিককে ছিড়ে খাওয়ার মতো খিস্তিখাউর করেন দোকানি। কিছুক্ষণ পর থেমে যান তিনিও। চুয়াডাঙ্গা শহরবাসীর কাছে এ ছবি বহুদিন ধরেই চেনা। বদলাবে কবে কেউ জানেন না।
চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের বেশ ক’জন গোয়ালা আর গোয়ালিনী আছেন যারা স্রষ্টার ওপর ভরসা করেই গাভী পালন করেন। বাছুর হলেই দুধ দুয়ে ছেড়ে দেন রাস্তায়। রাতে বাছুর বেঁধে রাখলেও গাভী বাইরেই থাকে। তাতে যেন গোয়ালার আসে যায় না। রাতে চোরে ভোরে ফিরলেও বাছুর এমন কৌশলে বাধা থাকে সেখনে গিয়ে দুধ দেয়ার সুযোগ পায় না গাভী। গোয়ালা দুধ দুয়ে নিয়ে সকালে বাছুর ও গাভী ছেড়ে দেয় এক সাথে। গাভীগুলোও যেন বুঝে গেছে গোয়ালা বা গোয়ালিনীর দরদ। সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরে। তখনই বাছুর ঘরে আটকে রাখাল ছাড়াই গাভী খেদিয়ে দেয় ফের পথে। শহরে বেওয়ারিশের মতো ঘুরে বেড়ানো গরুগুলো রাস্তার পাশে দিব্যি শুয়ে জাবর কাটালেও দুর্বৃত্তের সেদিকে নজর দেয়ার তেমন উদাহরণ নেই। তবে এসব গাভী বাছুরগুলোর মধ্যে যেগুলোর বিচরণ সরকারি কলেজ রোডে সেগুলোর মধ্যে দু একটা মৃত্যুফাঁদরুপি ড্রেনে পড়ে হাবুডুবু খেয়েছে বহুবার। কয়েকটির তো কয়েক রাত ড্রেনেই পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ফায়ার স্টেশন ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্য ডেকে ড্রেনের স্লাব খুলে গাভী উদ্ধারের উদাহরণও রয়েছে বেশ কটা। সড়কে ও সড়কের ধারে ঘুরে গাভী-বাছুরগুলো কী খায়? আগে না হয় কলার খোসাও ফেলতো অনেকে, এখন দোকানির বাড়ির ছাগলের জন্য সে খোসাও তো দুর্লভ। এসব গরু খায় কি? এ প্রশ্ন তুলতেই এক রশিক বললেন, শহরের সাহসী গোয়ালা- গোয়ালীনির গরুগুলো ঘাসের বদলে বোধ হয় এখন কাগজই খায়। কুকুরের মতো ডাস্টবিনেও ভিড় করে ওইসব গরুর কোনো কোনোটি।
চুয়াডাঙ্গায় বেওয়ারিশের মতো ছেড়ে রাখা গাভীগুলোর প্রায় সবই উন্নত জাতের। কোনটি ঠিক কতো কেজি করে দুধ দেয় তা নিশ্চিত করে জানা না গেলেও দু-দশ কেজির কম বোধ হয় কোনটিই দুধ দেয় না। গাভীগুলো চুয়াডাঙ্গা শহরবাসীর হয়তো দুধের জোগানে অবদান রাখছে, কিন্তু গাভীর বাছুরের গবরের কারণে পথচারীসহ ছোটবড় পরিবহনগুলোকে যে প্রায়ই বড় ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে তা কি গোয়ালা-গোয়ালীনিরা দেখছেন?