কোনো সম্মাননা উদ্দীপনা বাড়ায়, কিছু সম্মাননা বয়ে আনে লজ্জা

সম্মাননা প্রদান প্রথার উৎপত্তি কবে থেকে? নিশ্চয় সভ্যতার আঁতুরঘরেই এর সূচনা। একজন আর একজনকে সম্মান করার মধ্যে অনেক কিছুই সুপ্তভাবে সুবিন্যস্ত থাকে। যার সুফল সমাজই বহন করে। তাই বলে অর্থের বিনিময়ে সংবর্ধিত করা বা সম্মাননা প্রদানের মধ্যে তেমন কিছু থাকে না। ন্যূনতম আত্মতৃপ্তিও যেখানে অনুপস্থিত সেখানে সম্মানিত হওয়ার প্রসঙ্গটিও পাত্রভেদে লজ্জার কারণ হওয়ায় সঙ্গত।

আমাদের দেশে রাজধানীভিত্তিক বহু গ্যাঙ গড়ে উঠেছে, যাদের মূল ব্যবসা সম্মাননা প্রদান। ভুঁইফোড় সংগঠন দেখিয়ে অর্থের বিনিময়ে নানা নামে এরা সম্মাননা ক্রেস্ট প্রণয়ন প্রস্তুত করে কিছু ব্যক্তিকে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানায়। সমসাময়িক কোনো বিষয়ে আলোচনার নামে ব্যনাারও করে। ২০ জনকে সম্মাননার জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করে। প্রত্যেকের নিকট থেকে যদি ৫ হাজার টাকা করে তোলে তাহলে মোট অঙ্কটা দাঁড়ায় এক লাখ। যাবতীয় খরচ বাবদ ৪০ হাজার বাদ গেলেও আয়োজকের লাভ থাকে ৬০ হাজার। মাসে না হোক, দু মাস অন্তর এদের এ ধরনের আয়োজন থাকেই। স্থানীয় সরকার পর্যায়ে জনপ্রনিধিরাই শুধু ওদের খোদ্দের নন, সমাজের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনকারীদের কারো কারো ওদের খোদ্দের হতে দেখা যায়। অবশ্য কিছু ব্যক্তি আছেন যারা ওই ক্রেস্টে মেডেল পাওয়ার সংখ্যায় রেকর্ড গড়ার দৌড়েও সামিল। আলমডাঙ্গার একজন তো এক ধরনের উদাহরণই হয়ে দাঁড়িয়েছেন। কারো কারো কাছে তা হাস্যকর হলেও কেনা বা অর্থের বিনিময়ে পাওয়া ক্রেস্টে আলমারি ভরিয়ে তোলা ব্যক্তির কি তাতে কিছু আসে যায়? যায়, যখন মূল্যায়নের কাতারে দাঁড়িয়ে অবমূল্যায়নই অনিবার্য তখন বিবেকবানদের জন্য কিছুটা তো আসে-যায়ই। তবে কিছু ক্ষেত্রে বুঝে ওঠার আগেই এমন একজন কিছু সম্মানে ভূষিত হওয়ার আমন্ত্রণ পেয়ে বসেন, তিনি না বুঝে সম্মাননা নিতে গিয়ে বোঝেন ব্যাচারা বিক্রি হয়ে গেছেন। তাকে দেখিয়ে অর্থদাতাদের গুণীর কাতারে এনেছেন। পরিস্থিতির শিকার প্রকৃত গুণী একবারই হন, বার বার হওয়ার ক্ষেত্রে অর্থটা অবশ্য অন্যরকমই দাঁড়ায়। যদিও যখন বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তির নামে কোনো ক্রেস্ট দেয়ার প্রস্তাবনা আসে তখন সেই প্রস্তাবদাতা এবং নিজেকে একটু মেপে দেখলে নিশ্চয় পরিস্থিতির শিকার হতে হয় না।

অবশ্যই স্বীকৃতি গুণীর উৎকর্ষতা মেলে ধরতে উৎসাহিত করে। তাই বলে অর্থের বিনিময়ে স্বীকৃতি? সেটা যারা নেন তাদের বুঝতে হবে, উৎকর্ষকতায় ঘাটতি রয়েছে। মেকি মালা সকলের গলায় মানায় না। তা নেয়া সাজেও না। শিক্ষিতের ক্ষেত্রে শিক্ষার আলোয় খোলা দৃষ্টির দাঁড়িপাল্লায় মেপেই পা ফেলতে হয়। অন্যথায় শিক্ষার কোনো মূল্যায়ন থাকে না। মনে রাখা দরকার, মেকি আর খাটির তফাত যোজন-যোজন।