চাই চাই উপজেলা চাই স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল গোটা এলাকা

দর্শনাকে উপজেলাকরণের দাবিতে আলোর মিছিল জনসমূদ্রে পরিণত
দর্শনা অফিস: কোনো কিছুর দাবি পূরণের ক্ষেত্রে স্মরণকালের রেকর্ড ভাঙলো দর্শনা তথা ৬ ইউনিয়নবাসী। যেকোনোমূল্যে দর্শনাকে উপজেলায় উন্নীত করণের ক্ষেত্রে আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। দাবি পূরণের জন্য মাঠে নেমেছে সর্বস্তরের মানুষ। এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। ন্যায্য অধিকার আদায়ে মাঠ ছাড়তে নারাজ আন্দোলনকারীরা। উপজেলা করণ আন্দোলনে এখন সর্বস্তরের মানুষ হয়েছে সোচ্চার। দলমত নির্বিশেষে সকলেই দাঁড়িয়েছে এক কাতারে। এ দাবি এখন দাবিই নয় এ হলো অধিকার। এ অধিকার আদায়ে সব ধরনের আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়তে প্রস্তুত এলাকাবাসী। সরকার দাবি পূরণ না করা পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত রাখার অঙ্গীকারে আটুট দর্শনা উপজেলা আন্দোলন মঞ্চের নেতৃবৃন্দ। দেড়শ বছরের পুরোনো শহর দর্শনা ভৌগলিকভাবে সীমানা খুব দীর্ঘ না হলেও ইতিহাস, ঐতিহাসিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ ভূখ- গঠিত হওয়ার পূর্ব থেকেই অত্যান্ত সমৃদ্ধ ও সম্ভাবনাময়ী একটি শহর। ১৯৩৮ সালে এশিয়ার মহাদেশের ২য় বৃহত্তর ও দেশের সর্ববৃহত কেরুজ চিনিকল দর্শনায় প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকেই এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক ভীত আরো মজবুত হয়। দর্শনায় কাস্টমস স্থাপিত হয় ১৯৫৮ সালে। পরপরই ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম শুরু হয়। ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর প্রথম বাংলাদেশের ভূখ-ে দর্শনা থেকে জগতি পর্যন্ত ৫৩ দশমিক ১১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হয়। সেই থেকে ‘দর্শনা জংশন’ দেশের বুকে আলাদা একটা মহিমা নিয়ে পরিচিতি লাভ করতে থাকে। দর্শনায় দেশের একমাত্র আন্তর্জাতিক রেলপথ যার মাধ্যমে ১৯৬৫ সালের পূর্বে ভারতের সাথে যাত্রিবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয় দর্শনা স্টেশন থেকে। বর্তমানে যা দর্শনা আন্তর্জাতিক স্টেশন নামে পরিচিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় দর্শনার ভূমিকা ইতিহাসের পাতায় আজও সমাদৃত। মুক্তিযুদ্ধের সময় টেলিফোন বা টেলিগ্রাফে দর্শনার কোর্ড (ছদ্ম নাম) ছিলো উওঘএঅ। যুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতে পারাপার ও প্রশিক্ষণের ট্রানজিট পয়েন্ট ছিলো দর্শনা। তাছাড়া মহান মুক্তিদ্ধুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ গৌরবময় ভূমিকা ছিলো এ এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। সরকারের কোষাগারে রাজস্ব দেয়ার দিক থেকেও দর্শনা অনেক এগিয়ে। কেরুজ চিনিকল, ডিস্টিলারি বিভাগ, রেল স্টেশন, কাস্টমস, ব্যাংক, বীমা, ইমিগ্রেশনসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি বছর সরকার প্রায় ৩শ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়ে থাকে। দর্শনার সাংস্কৃতিক পরিচয় আজও দেশব্যাপী সুনাম অর্জন করছে। দর্শনার এক সময়ের প্রশাসনিক পরিচয় ছিলো ইউনিয়ন যা ১৯৯১ সালে পৌরসভায় রূপান্তরিত হয়। বর্তমানে দর্শনা পৌরসভা ‘২য় শ্রেণির’ মর্যাদাপ্রাপ্ত। রাজনৈতিকভাবেও দর্শনার অবস্থান বেশ মজবুত। চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর, চুয়াডাঙ্গা জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদুল ইসলাম আজাদ, চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের সাবেক প্রসাশক মাহফুজুর রহমান মঞ্জু, ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহাসিন আলী, জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা আনোয়ারুল ইসলাম বাবু, জেলা বিএনপির অন্যতম নেতা বিশিষ্ট শিল্পপতি হাজি ইঞ্জিনিয়ার মোখলেসুর রহমান তরফদার টিপু, জেলা কমিউনিস্টপার্টির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড শহিদুল ইসলাম, দর্শনা পৌরসভায় তিনবার নির্বাচিত মেয়র মতিয়ার রহমান, ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী শাহ মিন্টু, জাকারিয়া আলমসহ বিভিন্ন দলের কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের বসবাস দর্শনায়। পারকৃষ্ণপুর-মদনা, কুড়–লগাছি, বেগমপুর, নেহালপুর, গড়াইটুপি ও তিতুদহ ইউনিয়ন নিয়ে দর্শনাকে উপজেলায় উন্নীতকরণের ক্ষেত্রে সকলের রয়েছে আন্তরিক মনোভাব। উপজেলা করণের দাবিতে ইতঃপূর্বে দীর্ঘ ৫ কিলোমিটার সড়কে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে স্মরণকালের রেকর্ড ভেঙেছে। তাছাড়া সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ফেসবুকে দর্শনা উপজেলা আন্দোলন নামে একটি ফেসবুক আইডিসহ বিভিন্ন ব্যক্তি নামের আইডি থেকে দর্শনাকে উপজেলার করণের দাবির আন্দোলনের ঝড় তুলেছে। অব্যাহত আন্দোলনের অংশ হিসেবে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় দর্শনা সরকারি কলেজ শহীদ মিনার চত্বরে সমবেত হয় আন্দোলনকারীরা। হাতে হাতে মমবাতি নিয়ে সমবেত স্থল যেন হয়ে উঠে জনসমূদ্র। জাতীয় সঙ্গীত ও বিশাল আকারের মমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্যদিয়ে আলোর যাত্রা শুরু হয়। সন্ধ্যায় বিদ্যুত লোডশোডিং চলাকালীন মশাল ও মমবাতির আলো যেন আলোকিত হয়ে উঠে গোটা শহর। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বিশাল আলোর মিছিল শেষ করা হয় কেরুজ স্মৃতিস্তম্ভে। স্মৃতিস্তম্ভে শফথ বাক্য পাঠ করান অবসরপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ, শিক্ষাবিধ দর্শনার প্রিয় ব্যক্তিত্ব মোশাররফ হোসেন। আলোর মিছিলে অংশ নেয়, বেগমপুর, তিতুদহ, নেহালপুর, গড়াইটুপি, পারকৃষ্ণপুর-মদনা ও কুড়ুলগাছি ইউনিয়নসহ দর্শনার সর্বস্থরের মানুষ। এছাড়া অংশ নিয়েছে, সবকটি রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শ্রমিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
দর্শনা শহীদ মিনার চত্বরে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত আলোচনাকালে শিক্ষাবিধ মোশাররফ হোসেন বলেন, দর্শনা আমার প্রাণের শহর। এ শহর উপজেলায় উন্নীত হোক এ দাবি আমারো। ইতোমধ্যেই পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রকে পূর্ণাঙ্গ থানায় উন্নীতকরণের কাজ শেষের দিকে পৌঁছেছে। ইউপি চেয়ারম্যান জাকারিয়া আলম বলেন, দর্শনাকে উপজেলা করণের ক্ষেত্রে সকল আন্দোলন কর্মসূচিতে ছিলাম, আছি এবং থাকবো ইনশাল্লাহ। তবুও দর্শনাকে উপজেলায় উন্নীত করতে হবে।
উপজেলা আন্দোলনের মুখপত্র আনোয়ার হোসেন বলেন, দর্শনা অনেক আগেই উপজেলা হওয়ার উচিত ছিলো। তবে এখন সময় এসেছে আমাদের প্রাণের দাবি পূরণের। দর্শনাকে উপজেলায় উন্নীতকরণের ক্ষেতে সকলকে আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের আহ্বান করা হলো। কবি ও সাহিত্যিক আবু সুফিয়ান বলেন, উপজেলার দাবিতে আজ জেগেছে এলাকাবাসী। এ আন্দোলন সফল হবেই হবে। দর্শনা উপজেলায় উন্নীত হবে এটাই আমার চাওয়া। দর্শনা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব গোলাম ফারুক আরিফ বলেন, দর্শনা আমার অহংকার, আমার গর্ব। দর্শনা উপজেলা হোক এ আমার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন। এ স্বপ্ন পূরণে আমরা আজ একসাথে মাঠে নেমেছি।
বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান বুলেট বলেন, দর্শনাকে উপজেলা করণের দাবিতে দলমত নির্বিশেষে আন্দোলন কর্মসূচিতে আমরা মাঠে রয়েছি। এ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ছাড়বো না আন্দোলনের মাঠ। দর্শনা সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি হারুন অর রশিদ বলেন, দর্শনাকে উপজেলা করণের দাবিতে গোটা এলাকার মানুষ আজো আন্দোলনের মাঠ ছাড়েনি। দর্শনা তথা ৬ ইউনিয়নের মানুষ তাদের ন্যায্য দাবি আদায় করেই ঘরে ফিরবে। জেলা পরিষদের সদস্য মুন্সি সিরাজুল ইসলাম বলেন, উপজেলা দাবি শুধু দর্শনাবাসীর নয়, এ দাবি ৬ ইউনিয়ন তথা দর্শনাবাসীর। এ দাবি পূরণ হতেই হবে। উপজেলা যুবলীগের যুগ্মআহ্বায়ক আ. হান্নান ছোট বলেন, দর্শনা সম্ভাবনাময়ি একটি শহর। এ শহরকে উপজেলা করণের সবধরনের যোগ্যতা রয়েছে। তাই উপজেলা দিতেই হবে। যুবলীগ নেতা শেখ আসলাম আলী তোতা বলেন, দর্শনা উপজেলার দাবি আমাদের ন্যায্য দাবি। এ দাবি মেনে নিয়ে অনতিবিলম্বে দর্শনাকে উপজেলা ঘোষণা দেয়া হোক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, আ.লীগ নেতা হাজি জয়নাল আবেদীন, দর্শনা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর শোনিত কুমার গায়েন, জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম, দর্শনা পৌর জাসদের সভাপতি আক্তার খান শান্তি, সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া জাকির, দর্শনা মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন, দর্শনা পুরাতন বাজার দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আশরাফ আলম বাবু, দর্শনা বাসস্ট্যান্ড দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন আহম্মেদ সেন্টু, কামরুজ্জামান যুদ্ধ, মাহবুবুর রহমান মুকুল, সাজ্জাদ হোসেন, শামীম আহমেদ, রাণি শাহ, কেরুজ শ্রমিক নেতা ফিরোজ আহমেদ সবুজ, যুবলীগ নেতা ফারুক হোসেন, আজাদ, বিল্লাল হোসেন, ছাত্রলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম ববি, আরিফ মল্লিক, নাহিদ পারভেজ, তোফাজ্জেল হোসেন তপু, আলামিন, লোমান, প্রভাত, রায়হান, মোহাম্মদ প্রমুখ।