স্টাফ রিপোর্টার: শোক দিবসকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করেছিলো জঙ্গি গোষ্ঠী। ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর রোডে শোক দিবসের কর্মসূচিতে হামলার লক্ষ্যেই বঙ্গবন্ধুর বাড়ি থেকে মাত্র ৩শ গজ দূরে পান্থপথে হোটেল ওলিও (ইন্ট্যা:) তে অবস্থান নিয়েছিলো আত্মঘাতী জঙ্গি। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে শোক দিবসের কর্মসূচি শুরু হওয়ার তিনঘণ্টা আগে রাত সাড়ে ৩টার দিকে ওই হোটেলে জঙ্গির অবস্থান শনাক্ত করে সেটিকে ঘিরে ফেলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। পরে হোটেল ঘিরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শুরু হয় পুলিশের মূল অভিযান ‘অপারেশন অগাস্ট বাইট’। সকাল ৯ টা ৪০ মিনিটে সেখানে বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সাইফুল ইসলাম (২৭) নামে এক জঙ্গি আত্মঘাতী হন।
নিহত সাইফুল শিবির কর্মী ছিলেন বলে পুলিশ দাবি করেছে। খুলনার ডুমুরিয়ায় তার বাড়ি। তিনি খুলনা বিএল কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ছিলেন। সাইফুলের বাবা আবুল খায়ের মোল্লা ডুমুরিয়ায় স্থানীয় জামায়াত ইসলামের একজন নেতা বলে পুলিশের দাবি। বোমার বিস্ফোরণে হোটেল ওলিওর চারতলার একটি অংশের দেয়াল ভেঙে নিচে পড়ে যায়। হোটেল থেকে ১২ জন বোর্ডার ও হোটেল ম্যানেজারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে কলাবাগান থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশের আইজি একেএম শহীদুল হক বলেন, কাউন্টার টেররিজম ইউনিট জানতে পেরেছিলো যে শোক দিবসকে কেন্দ্র করে ৩২ নম্বর রোডে মিছিল আসবে। জঙ্গিরা সেখানে বোমা ফাটাবে। শতশত মানুষ মেরে ফেলবে। কাউন্টার টেররিজম ইউনিট তাদের ফলো করেছে। তাদের আস্তানা আমরা শনাক্ত করতে পারি। হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে তল্লাশির এক পর্যায়ে একটি রুম থেকে রেসপন্স পাওয়া যায়। তাতে মনে হয়েছে সেখানে জঙ্গির উপস্থিতি রয়েছে। তাকে আমরা সারেন্ডার করতে বলি। বাধ্য হয়ে পুলিশ অপারেশন শুরু করে। তখন সে বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়।
আইজিপি বলেন, জামায়াত-শিবির না হলে জাতির পিতার শোক দিবসে এ রকম ঘটনা ঘটাতে পারতো না। জামায়াত-শিবিরসহ যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে তারা আবারও এ রকম হামলা করেছে। সেসব পরিকল্পনা আমরা নস্যাত করেছি। শোক দিবসের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করেই তারা এ রকম হামলার পরিকল্পনা করেছে।
ধানমন্ডির রাসেল স্কয়ার সংলগ্ন ৫৭/১/সি, পশ্চিম পান্থপথে চার তলা বিশিষ্ট হোটেল ওলিও (ইন্ট্যা:)। হোটেলটির মালিক ফয়জুর রহমান ওলিও। ভবনটির নিচতলা ও দোতলায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও দোকান ভাড়া দেয়া আছে। তিন তলা ও চার তলায় হোটেল। সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে ওই হোটেলের চতুর্থ তলার ৩০১ নম্বর কক্ষে একজন সন্দেহভাজন জঙ্গির অবস্থানকে কেন্দ্র করে চারদিক ঘিরে ফেলে পুলিশ, সোয়াট, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও ডিবি। নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ পান্থপথ মোড় থেকে রাসেল স্কয়ার পর্যন্ত সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। হোটেলের আশেপাশের সকল প্রতিষ্ঠান ও দূরপাল্লার পরিবহন কাউন্টারগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে লোকজনকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। সকালে পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযানটির নাম দেয়া হয় ‘অপারেশন অগাস্ট বাইট’।