‘অতি লোভে তাতি নষ্ট’ তো আছেই। তারপর প্রতিটিক্ষেত্রেই দরকার সতকর্তা। চলার পথে কোনো আচমকা বাঁকে কতোটা ভোগান্তির বোঝা বাড়াবে আগাম বলা মুশকিল বলেই মুহূর্তের জন্যও বেখেয়াল হওয়ার জো নেই। বিশেষ করে আমাদের মতো জনসংখ্যা বিস্ফোরণের সমাজে মুখোশধারীর অবস্থান পরতে পরতে। তারপর প্রতারণা করে পালাতে পারলেই যখন পিছু নেয়ার কেউ নেই, তখন প্রতারকের সংখ্যা বৃদ্ধিই সঙ্গত। যদিও প্রতারণার ফাঁদ পেতে যে সমাজে সহজেই প্রতারণা করা যায়, সেই সমাজে প্রতাকের উৎপাত অসর্তকের অন্দরেও পৌঁছায়।
ধার-কর্য করে দেড় লাখ টাকা দিয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা কিনে রাস্তায় বেরিয়েছিলো কিছু টাকা রোজগারের জন্য। উঠতি বয়সী চালক অটো কেনার আড়াই দিনের মাথায় দু প্রতারকের খপ্পরে পড়ে অটো হারিয়ে এখন দিশেহারা। গতপরশু সোমবার দুপুরের ঘটনা। চুয়াডাঙ্গা শহীদ হাসান চত্বর থেকে দু প্রতারক রোগী বহনের কথা বলে অটোরিকশা বা ইজিবাইক ভাড়ায় নেয়। সদর হাসপাতালে নেয়ার পর রোগী ও রোগীর সাথে থাকা কিছু মাালামাল নামাতে সহযোগিতার জন্য চালককে অনুরোধ জানিয়ে একজনের পায়ে ব্যথার ভান ধরে অটোতেই বসে থাকে। হাসপাতালের দোতলা থেকে রোগী নামাতে গিয়ে সন্দেহ হলেও ব্যাচারা তার অটোটা রক্ষা করতে পারেনি। মুহূর্তের মধ্যেই অটো নিয়ে চম্পট দিয়েছে দু প্রতারক। কৌশলে অভিনবত্ব থাকলেও বোকা বানিয়ে ধোকা দেয়াটা নতুন নয়।
প্রতারক অটো চোর দুজনকে শনাক্ত করার জন্য শহীদ হাসান চত্বরের ও হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ যথেষ্ট। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই ফুটেজ দেখে প্রতারক শনাক্ত করে সত্যি সত্যিই কি পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রতারক ধরতে সক্ষম হবেন? ক’দিন আগেও হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক বৃদ্ধা রোগীর গলায় থাকা সোনার চেন খুলে নিয়ে পালানো দু নারী প্রতারকের ছবি পুলিশ সংগ্রহ করেছে। ঘটনার প্রায় দেড়-দু মাস পার। সেই দু নারীর হদিস করতে পারেনি পুলিশ। পত্রিকায় প্রকাশের পরও তাদের পরিচয় জানাতে তেমন কাউকে এগিয়ে আসতেও দেখা যায়নি। এরপর সাপে কাটা এক শিশুর পিতার নিকট থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়া প্রতারকের ছবিও সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে। বাস্তবে ধরা সম্ভব হয়নি, আদৌ ধরা সম্ভব হবে কি-না তা শুধু অনিশ্চিতই নয়, প্রশ্নিবিদ্ধও বটে।
অটোরিকশা বিজ্ঞানের স্রোতে ভেসে আসা ক্ষুদ্রযান। এ যানবাহন জনস্বার্থে রাস্তায় নামানো হলেও রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে অসুত করে রাখা হয়েছে। শ্যালোইঞ্জিনচালিত অবৈধযানের তুলনায় ব্যাটারিচালিত এ যানবহন অনেকটাই নিরাপদ। যদিও ওর আলো এবং চালকসহ নানা সমস্যার কারণে সড়কটাই হয়ে উঠেছে মৃত্যুপুরী। এরপর প্রতারকদের অপতৎপরতা ওই যান ও চালকের জন্য নিরাপত্তাহীনতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিকারে দরকার প্রতারক পাকড়াও করে আইনে সোপর্দ করার ক্ষেত্রে কর্তব্যরতদের আন্তরিকতা ও চলকদের বাড়তি সতকর্তা।