চুয়াডাঙ্গা জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিকসভা অনুষ্ঠিত

 

কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য মনোগ্রামযুক্ত ড্রেস চালুর সিদ্ধান্ত

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলার সকল কলেজে শিক্ষার্থীদের জন্য এবার মনোগ্রামযুক্ত নির্দিষ্ট রঙের পোশাক (কলেজ ড্রেস)  চালু হতে যাচ্ছে। পোশাক দেখে ছাত্র-ছাত্রীদের শনাক্ত ও স্বতন্ত্র পরিচয় নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য কলেজ কর্তৃপক্ষকে ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে আলাপ করে পোশাকের ধরন ও রঙ নির্বাচন করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

গতকাল রোববার জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিগগিরই এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার শুরুতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জসীম উদ্দীন মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে গতমাসের সভার কার্যবিবরণী উপস্থাপন করেন। আলোচনার মাধ্যমে কার্যবিবরণী অনুমোদন করা হয়।

আলোচনা পর্বের শুরুতেই পুলিশ সুপার মো. নিজাম উদ্দীন সম্প্রতি কুড়ালগাছি গ্রামের ধর্ষণের শিকার ১০ বছরের প্রতিবন্ধী শিশুর চিকিৎসা নিয়ে সদর হাসপাতালের চিকিৎসকদের অবহেলার বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এতোদিন যা ভারতীয় সিনেমায় দেখে এসেছি, তা চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে দেখতে হবে ভাবতেই পারেনি। পুলিশ সুপার অভিযোগ করেন, ধর্ষণের শিশুর শরীর থেকে যখন রক্ত চুইয়ে পড়ছে তখন তাকে চিকিৎসা না দিয়ে চিকিৎসক ও হাসপাতালের লোকেরা চেয়ারে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। পুলিশ সুপারের উদ্যোগে শেষ পর্যন্ত শিশুটির চিকিৎসা নিশ্চিত হয়। পুলিশ সুপার এজন্য প্রত্যেককে সতর্কতার সাথে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, এ জেলায় ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে। এজন্য সামাজিক আন্দোলন ও আমাদের সচেতন হওয়া দরকার। বাল্যবিয়ে রোধ করতে হবে। বাল্যবিয়ের কারণে নারী নির্যাতনের হার বেড়েই চলেছে। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করতে হবে। উচ্চ মাধ্যমিক পাসের আগে সন্তানের হাতে অ্যান্ড্রয়েড বা স্মার্টফোন না দিতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান পুলিশ সুপার। তিনি সভাকে জানান, অবৈধ যানের কারণে প্রাণহানির ঘটনা বেড়েই চলেছে। উদ্বেগজনক পরিস্থিতি মোকাবেলায় এখন থেকে অবৈধযানের দুর্ঘটনায়  কেউ মারা গেলে সরাসরি হত্যা মামলা হবে। আলমডাঙ্গায় দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীর মৃত্যুতে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।

সভায় অন্যান্য বক্তাদের আলোচনায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে। চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর কামরুজ্জামান কলেজের প্রধান ফটকের সামনের সড়কে গতিরোধক তৈরির প্রস্তাব দেন। ওয়েভ ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা নুঝাত পারভীন অভিযোগ করেন, সরকারি কলেজে ঠিকমতো পাঠদান করা হয়না। এই সুযোগে ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষার বাইরে অন্যকিছুতে জড়িয়ে পড়ছে। রেলবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি নাসির আহাদ জোয়ার্দ্দার অভিযোগ করেন, ওই বিদ্যালয়ের গেটে ইজিবাইক স্ট্যান্ড করায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। তিনি স্ট্যান্ড সরানোর ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন। জেলা আওয়ামী লীগের উপপ্রচার সম্পাদক শওকত আলী জানান, সোনালী ব্যাংকের কাছ থেকে ফেরিঘাট রোডে যানজট লেগেই থাকে, তাছাড়া ব্যবসায়ীরা ফুটপাত ও রাস্তার ওপরে মালামাল রাখায় চলাচলে সমস্যা হয়। বিশেষ করে ওই পথে চলাচলকারী ছাত্রীরা বেশি সমস্যায় পড়ে। বোরকা ব্যবহারকারীরা যাতে মুসলমানদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বোরকা তৈরি ব্যবহার করেন, সভায় সে বিষয়েও আলোচনা হয়।

সড়ক ও  জনপথ বিভাগ সড়ক সম্প্রসারণের জন্য গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সভায় বেশ কয়েকজন বক্তা গাছের প্রকৃত সংখ্য  জানতে চান এবং শতবর্ষী রেইনট্রি গাছগুলো মাঝখানে রেখে আলাদা লেন করার বিষয়টি ভেবে দেখতে অনুরোধ করেন। বক্তারা উল্লেখ করেন, যশোর জেলায়  শতবর্ষী গাছ বাঁচিয়ে সড়ক সম্প্রসারণের কাজ চলছে। বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ বলেন, এই গাছগুলোর পরিবেশগত মূল্য আর্থিক মূল্যের থেকে বেশি। তিনিও গাছের প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয় করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে বলেন।

জেলা প্রশাসক বলেন, মাথাভাঙ্গা সেতু থেকে টার্মিনালের আগ পর্যন্ত এখন থেকে আর কোনো বাসস্ট্যান্ড ও বা কাউন্টার থাকবে না। এজন্য পরিবহন মালিকদেরকে শ্রমিকদের সাথে আলাপ করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি রাস্তার ওপর নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। মহাসড়কের ওপর পশুহাট যাতে না বসে সেজন্য ব্যবস্থা নিতে ইউএনওদের প্রতি আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক।

এছাড়া আলোচনায় অংশ নেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সী আলমগীর হান্নান, জেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মেহেরুন্নেছা, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি আজাদ মালিতা, চুয়াডাঙ্গা জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক একেএম মঈনুদ্দীন মুক্তা, মানবতার নির্বাহী পরিচালক মানি খন্দকার, জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান নাবিলা ছন্দা। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তরিকুল ইসলাম, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুল হক বিশ্বাস, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৃনাল কান্তি দে, আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজাদ জাহান, জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  সেলিম রেজা, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল হাসান এবং জেলা পর্যায়ের সদস্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।