সরোজগঞ্জের একটি বাড়ির ভাড়াটিয়া নারীর লাশ উদ্ধার ॥ নানা প্রশ্ন ঋণ করে টাকা দিয়ে প্রতারিত হওয়ায় কি প্রবাসী স্ত্রীর প্রাণনাশের কারণ?স্টাফ রিপোর্টার/সরোজগঞ্জ প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা সরোজগঞ্জে ভাড়াবাড়িতে বসবাস করা প্রবাসীর স্ত্রী শিউলী আক্তার (৩০) অবশেষে লাশ হয়েছে। বিদেশ থেকে স্বামীর পাঠানো টাকাই শুধু নয়, গ্রামীণ ব্যাংকসহ বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নেয়া টাকা অন্যের হাতে তুলে দিয়ে মনকষ্টে ভোগার একপর্যায়ে রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে তার। শিউলী আক্তারের মৃত্যুর জন্য স্থানীয়রা যাকে দায়ী করেছে, সেই যাদবপুরের ডিমব্যবসায়ী মনোয়ার হোসেন মণ্টুই শিউলীর মৃতদেহ ঘর থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়। পরে অবশ্য কৌশলে সটকে পড়ে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে শিউলী আক্তারের মৃতদেহ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এরপরই মৃতদেহ রেখে সরে পড়ে মনোয়ার হোসেনসহ তার সাথে থাকা লোকজন। প্রশ্ন ওঠে, শিউলী আক্তারের অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে। মৃতদেহ গতরাতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালেই রাখা ছিলো। আজ বুধবার ময়নাতন্ত করা হতে পারে। মায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে একমাত্র ছেলে ৯ম শ্রেণির ছাত্র লাবলু নির্বাক হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে ঋণ নিয়ে তার মা অতো টাকা দিয়ে কি করেছে, কারো হাতে তুলে দিয়েই কি প্রতারিত হওয়ার কারণে অকালে মরতে হয়েছে? এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে শুরু করেছে স্থানীয়দের প্রায় সকলে। জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার খাসবাগুন্দা স্কুলপাড়ার আয়ুব আলীর মেয়ে শিউলী আক্তারের সাথে পার্শ্ববর্তী ঝিনাইদহ হরিণাকু-ুর বরিশখালীর ইস্রাফিলের সাথে আনুমানিক ১৫ বছর আগে বিয়ে হয়। বিয়ের পর দাম্পত্য জীবন শুরুর বছর দেড়েকের মাথায় কোলজুড়ে আসে সন্তান। ছেলের নাম রাখা হয় লাবলু। শিশু সন্তানসহ স্ত্রীকে চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ বাজারের সরোজগঞ্জের আত্মীয় ছাদেমান উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু সালেহর বাড়ির দুটি ঘরভাড়া নিয়ে রেখে যান। সেই থেকে ওই বাড়িতেই একমাত্র সন্তানকে সাথে নিয়ে শিউলী আক্তার বসবাস করে আসছিলেন। দীর্ঘ প্রায় এক যুগ ধরে স্বামী ইস্রাফিল মালয়েশিয়া প্রবাসী। ছেলে বড় হয়ে এখন নবম শ্রেণির ছাত্র। শিউলী আক্তারের সাথে ডিমব্যবসায়ী যাদবপুরের আনোয়ার হোসেন মন্টুর অবাধ মেলামেশা সমালোচিত হলেও তা নিয়ে তেমন কেউ মাথা ঘামায়নি। এরই মাঝে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে যখন ওই মনোয়ার হোসেনই প্রবাসীর স্ত্রী শিউলী আক্তারের ভাড়াবাড়ির ঘর থেকে উদ্ধার করে বলেন, গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে, তখন স্থানীয়দের ঘোর কাটে। সন্দেহ দানা বাধে। অসাড় দেহ নিয়ে মনোয়ারসহ কয়েকজন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাডতালে নেয়। এরপর লাশ ফেলে তাদের দ্রুত আড়াল হওয়ায় ঘটনার নতুন মোড় নিতে শুরু করে। প্রশ্ন ওঠে, তবে কি ওই মনোয়ারই সব জানে? তাছাড়া বিভিন্ন এনজিও ও ব্যাংক থেকে ঋণ করে কার কাছে দিয়েছে সে টাকা। ওই ঋণের কিস্তি আদায়ের চাপেই কি শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা? স্থানীয়রা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছে। অবশ্য গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তেমন কেউ পুলিশে নালিশ করেনি। হাসপাতাল থেকে সদর থানায় লাশের তথ্য দেয়া হয়েছে। সরোজগঞ্জ ফাঁড়ি ইনচার্জের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছেন, একজন নারীর অপমৃত্যুর বিষয় শুনেছি। তবে কেউ অভিযোগ করেনি।