কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবার দুদকের আকস্মিক হানায় ধরা পড়লো ব্যাপক দুর্নীতি
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আকস্মিক পরিদর্শন করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি পরিদর্শন দল। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কমিশনের কমিশনার (তদন্ত) এএফএম আমিনুল ইসলাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরিদর্শন করে কর্তব্যরত ডাক্তাদের অনুপস্থিতি, সিজার রেজিস্টারে গড়মিল, ওয়ার্ডের ভর্তি হওয়া রোগীদের সরকারি ওষুধ প্রদান না করা। ডেপুটেশনের নামে হাসপাতালে ডাক্তার না থাকা, ছুটি নেয়া ডাক্তারের আবেদনে শুভংকরের ফাঁকি, হাসপাতালে ইসিজি, আল্ট্রাসনো মেশিন থাকা স্বত্বে¡ সেখানে রোগ নির্ণয় না করে বাইরে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী পাঠানো ও ওষুধের স্টোর রুম পরিদর্শন করে ব্যাপক অনিয়ম দেখতে পান। এ সময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হওয়া রোগীদের সাথে তিনি কথা বলেন। পরিদর্শন টিমসূত্রে জানা গেছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার (তদন্ত) এএফএম আমিনুল ইসলাম মঙ্গলাবার দুপুরে সরাসরি কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার অফিসে ঢুকে হাজিরা খাতা পরিদর্শন করেন। এ সময় হাসপাতালে কর্মরত ৯ জন ডাক্তারের মধ্যে হাজিরা খাতায় ডা. রিফাত জাহান, ডা. মাহফুজুল আলম সোহাগ, ডা. আলাউদ্দীন, ডা. সম্পা মোদক, ডা. অরুন কুমার দাসকে অনুপস্থিত দেখেন। এদের মধ্যে অরুন কুমার দাস ছুটিতে, ডা. আলাউদ্দীন ডেপুটেশনে ঝিনাইদহে, ডা. সোহাগ নাইট ডিউটি করেছেন বললেও অন্যদের ব্যাপারে উপস্থিত ডাক্তাররা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি পরিদর্শন টিমের কাছে। পরে ডা. সম্পা মোদককে ডেকে আনলে তিনি ওই সময় হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। এছাড়া ছুটি নেয়া ডাক্তার অরুন কুমার দাসের ছুটির আবেদন দেখতে চাইলে ওই আবেদনে শুভঙ্করের ফাঁকি দেখতে পান। আর ডা. আলাউদ্দীনের ডেপুটেশনের ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডা. রাশেদা খাতুনের সাথে কথা বলেন এ কর্মকর্তা।হাসপাতালে ভর্তি হওয়া একাধিক রোগী দুর্নীতি দমন এএফএম আমিনুল ইসলামকে বলেন, তারা হাসপাতাল থেকে কোনো ওষুধ পাননি। হাসপাতালে রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থা থাকলেও বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে বেশি টাকা দিয়ে তাদের রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়েছে। এসব ব্যাপারে কমিশনার (তদন্ত) উপস্থিত ডাক্তার ও নার্সদের প্রশ্ন করলে তারা কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি রোগীদের ময়লা বেড কেন দেয়া হয়েছে এবং সেগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নেই কেন জানতে চাইলে তারও কোনো উত্তর দিতে পারেননি। ভর্তি হওয়া অনেক রোগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে অবস্থিত ডায়াগনোস্টিক সেন্টার থেকে রোগ নির্ণয় করার চাক্ষুস প্রমাণ দেখতে পান কমিশনার (তদন্ত)। তিনি ওষুধের স্টোর রুম পরিদর্শন করেন এবং ওষুধ রোগীদের না দিয়ে বাইরে বিক্রি করে দেন কি-না সে ব্যাপারেও জানতে চান?উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শনের সময় উপস্থিত ছিলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের খুলনা বিভাগীয় ডিরেক্টর আব্দুল হাসান, যশোর দুর্নীতি দমন কমিশনের আঞ্চলিক সমন্বিত অফিসের ডেপুটি ডিরেক্টর জাহিদ হোসেন, ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা. রাশেদা খাতুন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) যাদব সরকার, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আব্দুস সাত্তার, কালীগঞ্জ থানার অফিসার-ইন-চার্জ মিজানুর রহমান খান। এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কশিননের যশোর আঞ্চলিক সমন্বিত অফিসের ডিপুটি ডিরেক্টর জাহিদ হাসান বলেন, পরিদর্শন টিম পরিদর্শন করে বেশ কয়েকজন ডাক্তারকে অনুপস্থিত পেয়েছেন। এছাড়া বেশ কয়েকজন ডা. নিয়মিত অফিস করেন না বলে প্রাথমিকভাবে তদন্তে ধরা পড়েছে। তাদের তদন্ত রিপোর্টের একটি কপি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। সেখান তদন্ত রিপোর্টে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ থাকবে বলে তিনি জানান।