বৃষ্টি ॥ চুয়াডাঙ্গায় বিদ্যুত বিভাগের নাকানি-চুবানি

শোক

সরোজগঞ্জে বজ্রপাতে শাশুড়ি-পুত্রবধূ আহত ॥ শৈলকুপায় দুজনের মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার: ভরি বৃষ্টি শুরু হতে না হতেই চুয়াডাঙ্গায় বিদ্যুত সরবরাহ পরিস্থিতির নাজুক চেহারা ফুটে উঠেছে। গতকাল সকাল থেকে চুয়াডাঙ্গার বিজিবি ফিডারসহ বিভিন্ন ফিডারে বেহালদশা ফুটে উঠে। একদিকে বৃষ্টি অন্যদিকে বিদ্যুতের বেহালদশায় বিদ্যুত বিতরণ কেন্দ্রে কর্তরত লাইনম্যানদের হিমশিম খেতে হয়েছে। অপরদিকে বজ্রপাতে চুয়াডাঙ্গা সরোজগঞ্জ কিরোণগাছি গ্রামে পাশাপাশি দুুটি রান্না ঘরে বসে রান্না করার সময় বজ্রপাতে শাশুড়ি ও পুত্রবধূ আহত হয়েছেন। ঝিনাইদহের শৈলকুপায় বজ্রপাতে দুজন নিহত হয়েছেন। চট্টগ্রামের সীতকু-ে পাহাড় ধসে নিহত হয়েছে কমপক্ষে ৫ জন। অপরদিকে কার্পাসডাঙ্গাসহ বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গায় ৮৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে টেকনাফ ১৩৮ মিলিমিটার। চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ ২৮ দশমিক শূন্য ও সর্বনি¤œ ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলেও ঘরে ছিলো ভ্যাপসা গরমের ভাস। এ অবস্থায় দফায় দফায় বিদ্যুতের আসা যাওয়া ছিলো প্রায় চুয়াডাঙ্গার সবকটা ফিডারে। তবে বিজিবি ফিডার তথা রেলবাজার থেকে শুরু করে নূরনগর, জাফরপুর, সাতগাড়িসহ বিশাল এলাকায় বিদ্যুত সরবরাহ কোনো রকম স্বাভাবিক করতে সময় লাগে ৯ ঘণ্টারও বেশি। গতকাল সকাল ৮টা ১৮ মিনিকে বিদ্যুত গেলে আসে তিন মিনিটের মাথায়। ৮টা ২৪ মিনিটে যাওয়ার পর আসে ৯টা ১০ মিনিটে। ১০টা ৫৫ মিনিটে যাওয়ার পর আসে ১১টা তিন মিনেট। এরপর ১১টা ২৫ মিনেটে গেলে তা আসতে সময় লাগে রাত ৯টা ১৪ মিনিট। হাজরাহাটি ফিডারের দশা শুরু হয় পরশু রাত ২টা থেকে। তবে এ ফিডারের করুন দশা ফুটে উঠে বিকেলে। বৃষ্টির কারণে হাজরাহাটি স্কুলমোড়সহ কয়েকটি স্থানে সমস্যা হওয়ার কারণে তা মেরামত করে পুণরায় চালু করতে হিমশিম খেতে হয়। কলেজ ফিডারের আসা যাওয়া তো লেগেই ছিলো। বিকেল ৫টা ১৯ মিনিটে বিদ্যুত যায়, আসে ২২ মিনিটে। পরে যায় ৬টা ১০ মিনিটে। আসে ৬টা ২০ মিনিটে। গোরস্থান মোড়ে সমস্যার কারণে এ দশা। ৯টা ২ মিনিটে গেলে তা ঠিক করতে সময় লাগে ২৬ মিনিট। উজিরপুরে সমস্যার কারণে এ ফিডারের গ্রাহকদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। হাসপাতাল ফিডারে বিকেল ২টা ২ মিনিটে যায়, আসে তিন মিনিটের মাথায়। ৫টা ৫০ মিনিটে যায়, আসে ৬টা ৩৯ মিনিটে। বড় বাজার ফিডারের গ্রাহকদেরও কয়েক দফা বিদ্যুত আসা যাওয়ার ভেলকি দেখেছে। মেহেরপুর ফিডারেও সমস্যামুক্ত ছিলো না। কিন্তু কেনো? এ প্রশ্নের জবাবে ওজোপাডিকোর চুয়াডাঙ্গা সুইসবোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত এসএম ওবাইদুল্লাহ বলেন, সারাদিনই ভয়াবহ পরিস্থিতি। দেখছেন তো দুপুরের খাবার খেতে হচ্ছে রাত ১১টায়। প্রায় সকল ফিডারেই ওভার লোডের কারণে ঘন ঘন ট্রিপ করছে। তারপর পুড়ছে ট্রান্সমিটার। সেই সাথে যুক্ত হয়েছে বৃষ্টির কারণে গাছের ডাল পড়ে বা ঠেকে থাকার কারণে সমস্যা। এসবের সাথে যখন যুক্ত হয় ইনকামিং লাইনে অর্থাৎ মেন গ্রিডে তখন অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। গতকাল সকালে চুয়াডাঙ্গা জাফরপুরের ৩৩ কেভি বিদ্যুত সাব গ্রিড অফিস থেকে কয়েক দফা সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। তবে সারাদিন লাগাতার পরিশ্রম করে সম্মিলিতভাবে রাত ৯টার পর সকল ফিডারেই বিদ্যুত সরবরাহ স্বাভাবিক করা সম্ভব হয়।
এদিকে বজ্রপাতে চুয়াডাঙ্গা সরোজগঞ্জের কিরোণগাছি গ্রামের ঠা-ুর রহমানের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম আনু (৫৫) আহত হন। একই সাথে আহত হয়েছেন তার পুত্রবধূ শিল্পি খাতুন। পাশাপাশি দুটি রান্না ঘরে বসে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রান্না করছিলেন। এ সময় বজ্র্রপাতে আহন হন। দুজনকেই উদ্ধার করে কাসার থালা কাঠি দিয়ে বাজাতে বাজাতে নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। বাড়ির পাশের নারকেলগাছটি ঝলসেগেছে। অপরদিকে দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের কোমরপুর গ্রামের সড়কের দুপাশে পানি ও কাঁদায় একাকার। এ কারণে এসব এলাকায় পথচারী, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দারা পড়েছে চরম ভোগান্তিতে। গ্রামবাসীকে প্রতিদিনেই পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে।
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় রতন মোল্লা (৪৫) ও ওয়াজ উদ্দীন (৫৫) নামের দুই কৃষক বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন। শুক্রবার সকালে উপজেলার হরিহরা গ্রামের মাঠে একটি পুকুরে পাট জাগ (পচন প্রক্রিয়া) দেয়ার সময় বজ্রপাতে তারা নিহত হন। এ সময় আহত হয়েছেন নিহত ওয়াজ উদ্দীনের ছেলে আকিদুল ইসলাম (২৫)। তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত রতন হরিহরা গ্রামের ইয়াকুব মোল্লার ছেলে ও ওয়াজ উদ্দীন একই গ্রামের মুনসুর ব্যাপারীর ছেলে বলে পুলিশ জানিয়েছে। শৈলকুপার থানার ওসি আলমগীর হোসেন জানান, সকাল ৯টার দিকে গ্রামের পাশে মাঠে তারা পাটের কাজ করছিলো। এ সময় বজ্রপাতে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
অপরদিকে চট্টগ্রামের সীতাকু-ে পাহাড় ধসে একই পরিবারের ৫ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে কয়েকটি শিশু রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকে প্রবল বৃষ্টিপাতে পাহাড় ধসে নিহতের খবর জানিয়েছে সীতাকু- পুলিশ। সলিমপুর ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় পাহাড় ধসে একই পরিবারের পাঁচজন নিহত হয়। নিহতরা হলেন- রফিকুল ইসলামের স্ত্রী বিবি ফাতেমা ও তার ছেলে ইউনূস এবং জাহিরের স্ত্রী রাবেয়া, তাদের দুই মেয়ে সাত বছর বয়সী সামিয়া ও দুই বছর বয়সী লামিয়া।
নিহতদের আত্মীয়রা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে পাহাড় ধস হলে ঘরের ওপর মাটি এসে পড়ে। পরে লোকজনের কাছ থেকে ঘটনা শুনে তারা আটকা পড়াদের উদ্ধার করে। তাৎক্ষণিক তারা চারটি লাশ উদ্ধার করে। পরে আরও একটি লাশ বের করে আনে। সীতাকু- উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল ইসলাম ভূইয়া জানান, ঘটনার পর জঙ্গল সলিমপুরে ফাঁয়ার সার্ভিস কর্মী, সীতাকু- মডেল থানা পুলিশ ও স্থানীয়রা উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে আবহাওয়া অফিস পূর্বাভাসে বলেছে, মরসুমি বায়ুর অক্ষ রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশের মধ্যঞ্চল অতিক্রম করে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তরবঙ্গ হয়ে বঙ্গপসাগরে বিস্তৃত রয়েছে। মরসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তরবঙ্গ হয়ে বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় বিরাজ করছে।
পূর্বাভাস: রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
তাপমাত্রা: সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
ঢাকায় বাতাসের গতি ও দিক: দক্ষিণ/দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় (১০-১৫)