চুয়াডাঙ্গা পুলিশ পার্কে নাগরদোলা কেন? নদীর তীরে স্থাপিত পার্কটি কি এখন পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যিক বিনোদন কেন্দ্র? তাহলে নিশ্চয় সরকার রাজস্ব পায়। সত্যিই কি রাজস্ব দেয়া হয়? অর্জিত অর্থ কোনখাতে কতোটা খরচ করা হয়? পুলিশ পার্কের বিদ্যুতচালিত চলন্ত নাগরদোলা থেকে আছড়ে পড়ে এক শিশু নিহত হওয়ার পর সঙ্গত প্রশ্নগুলো প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। যদিও বলা হয়েছে, নাগরদোলায় উঠে নিজের মোবাইলফোনে নিজেরই ছবি যাকে নিজস্বী বা সেলফি বলা হয়, তা তুলতে গিয়ে এ দুর্ঘটনার শিকার হয় শিশু রিদু। সে চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্র ছিলো। জেলা শহরের সাদেক আলী মল্লিকপাড়ার অ্যাড. ইমতিয়াজ আহম্মেদ উজ্জ্বল ও শাহীনারা পারভীনের একমাত্র সন্তান।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে যেদিন তার বিদ্যালয় খুলবে সেদিনের আগের দিন অর্থাৎ শুক্রবার বিকেলে চাচাতো, ফুফাতো ও প্রতিবেশী ৪ ভাই-বোনের সাথে পুলিশ পার্কে গিয়েছিলো রিদু। কে জানতো যে সে সুহালে আর বাড়ি ফিরবে না? ওইদিন তার অন্যদের সাথে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে যাওয়ার আবদার ছিলো, সেই আবদারে সাড়া না পেয়ে পার্কে গিয়ে উল্লাসে মেতে মুহূর্তের মধ্যেই বিশাদে ভরিয়ে তোলে। কেন? সেলফি তোলা কি তার শিশু সুলভ আচরণের বাইরে? অবশ্যই না। সে হিসেবে তাকে দোষারোপ করা মানে দায়িত্বশীলদের দায় এড়ানো ছাড়া অন্য কিছু নয়। কেননা, শিশুরা সব সময়ই কৌতূহল প্রবণ। ওরা সুযোগ পেলে বেপরোয়াও বটে। সে কারণে শিশুদের ক্ষেত্রে বাড়তি নজর, বাড়তি সতর্কতার প্রয়োজন পড়ে। যেখানেই শিশুদের বিনোদনের উপকরণ, সেখানেই বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। চুয়াডাঙ্গা পুলিশ পার্কে ঝুঁকিপূর্ণ বিনোদনের উপকরণ সংযুক্ত করা হলেও তাতে শিশুদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা যে করা হয়নি তা চলন্ত নাগরদোলায় শিশুর দাঁড়াতে পারাটাই প্রমাণ। তাছাড়া অতোটুকু বয়সে সেলফি তোলার মতো সেলফোনই বা তার হাতে গেলো কেন? এদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলায় গড়ে তোলা ডিসি ইকোপার্কসহ কয়েকটি বিনোদন কেন্দ্রের প্রমোদতরীও নিরাপত্তাহীন। টিনের তৈরি ছোট্ট নৌকা শ্যালোইঞ্জিন দিয়ে চালানো হয়, অথচ নিরাপত্তা পোশাক বা লাইফ জ্যাকেট নেই। দামুড়হুদার শিবনগর ডিসি ইকোপার্কের বিশাল বিলের বুকে এ নৌকা রোজ যাত্রী নিয়ে চালাচল করলেও ভাগ্যিস এখনও বিপদ হয়নি। সতর্ক না হলে ঘটতে কতোক্ষণ? যেমন চোখের পলকেই চলে গেলো রিদু। যে শূন্যতা ওর পিতা-মাতার মাঝে সৃষ্টি হয়েছে তা কি কোনোভাবেই কোনো ব্যক্তিই পূরণ করতে পারবে?
চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারের কার্যালয় ও বাসভবনের পাশেই মাথাভাঙ্গা নদীর তীরে গড়ে তোলা পুলিশ পার্কটি প্রতিষ্ঠালগ্নে নাগরদোলার মতো ঝুঁকিপূর্ণ বিনোদন উপকরণ সংযোগের নকশা কি ছিলো? তখন নদীতে ছোট নৌকা দিলে তাতেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকির বিষয়টি ফুটে উঠলে তা বন্ধ করে দেন তৎকালীন পুলিশ সুপার। পরবর্তীতে নাগরদোলা যুক্ত করা হয়েছে। আয় বেড়েছে বহুগুণ। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রথমের সেই নামকাওয়াস্তে নেয়া প্রবেশমূল্য একপর্যায়ে বাণিজ্যিকে রূপ পেয়েছে। ঘটনা ঘটেনি বলেই বোধ হয় নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি সামনে আসেনি। নাগরদোলা থেকে শিশু পড়ে নিহত হওয়ার ঘটনাটিকে নিছক দুর্ঘটনা বলে দায় এড়ানোর বদলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণই হবে কর্তব্যরত কর্তাদের দায়িত্বশীলতা।