স্টাফ রিপোর্টার: রংপুরের পীরগঞ্জে সিমেন্ট ও যাত্রী বোঝাই ট্রাক উল্টে একই পরিবারের ৪ জনসহ ১৭ জন নিহত ও কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার ভোর ৫টার দিকে উপজেলার কলাবাড়ি এলাকায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। চালক ঘুমিয়ে থাকায় তার সহকারী গাড়ি চালানোয় এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় রংপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার এবং আহতদের ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য জেলা প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রংপুর বিআরটিএ’র সহকারি পরিচালককে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অপরদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন: লালমনিরহাটের কালিগঞ্জের চাপারহাটের উত্তর বত্রিশখালী গ্রামের আনছার আলীর পুত্র ঝন্টু মিয়া (৪২), তার ৯ বছরের কন্যা সুবর্না, আহম্মেদ আলীর পুত্র কোহিনুর ইসলাম বাবু (৩৬), শাহাপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের পুত্র মনজু মিয়া (৪৮), লতাবর এলাকার মফিজ উদ্দিনের ছেলে আলমগীর (৩৫), চব্বিশ হাজারী গ্রামের আশরাফুল ইসলামের পুত্র শহিদুল ইসলাম (৩২), চাপারহাটের মনোয়ার হোসেনের পুত্র মনির হোসেন(২৩), উত্তর বালাপাড়া গ্রামের তাহের উদ্দিনের পুত্র মহসিন আলী (২৮), লতাবর গ্রামের আইয়ুব আলীর পুত্র সাদ্দাম হোসেন (৩৪), সৈয়দ আলীর পুত্র দেলোয়ার হোসেন (২৪), আদিতমারির মহিশখোচা এলাকার আব্দুল খালেকের পুত্র রবিউল ইসলাম (২২), বড়াইবাড়ির আইয়ুব আলীর পুত্র আজিজুল ইসলাম (৩৪), ঝিনাইদহের শৈলকুপার নিজগ্রামের আনিছুজ্জামান (৪৫) ও সামসুন্নাহার (২৮), ময়মনসিংহের ভালুকার বালুজার এলাকার সিরাজ উদ্দিনের পুত্র জসিম উদ্দিন (৩৫) এবং কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ির নওয়াব আলীর কন্যা নাসিদা আখতার (২২)। নিহতদের মধ্যে একই পরিবারের ৪ জন হলেন, আলমগীর, তার শ্যালক দেলোয়ার, চাচাতো ভাই সাদ্দাম ও মনির। এদের সকলের বাড়ি লালমনিরহাট জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার চাপারহাট গ্রামে। এছাড়া নিহত আরেকজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। আহতদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৫ জনের অবস্থা আশঙ্কজনক। হতাহতদের বাড়ি লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ ও আদিতমারী উপজেলায়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশসূত্রে জানা যায়, নিহতদের অধিকাংশই গার্মেন্টস শ্রমিক। ঈদের ছুটিতে তারা গাজীপুর থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়িতে আসার জন্য বাস না পাওয়ায় তারা একটি সিমেন্টের ট্রাকের (রংপুর ট-১১০৩২৮) ওপরে বসে বাড়ি আসছিলেন। একপর্যায়ে ট্রাক চালাতে চালাতে ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন চালক। তখন ট্রাকচালকের সহকারী গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেন। কিন্তু তিনি বেপরোয়া গতিতে ট্রাকটি চালাচ্ছিলেন। যাত্রীদের অনেকে তাকে সাবধানও করেন। একসময় রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার কলাবাড়ি এলাকায় এসে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে ট্রাকটি উল্টে গিয়ে খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ১১ জন নিহত হন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে সেখানে আরও ৬ জন মারা যান। এ ঘটনার পর ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে প্রায় ২ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে।
রংপুর জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান জানান, দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের জন্য তাত্ক্ষণিক আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে দ্রুত তদন্তের জন্য বিআরটিএকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।