গাংনীর সাহেবনগরে গৃহবধুর রহস্যজনক মৃত্যু

গাংনী প্রতিনিধি: মিতা খাতুন (১৭) নামের এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। স্বামীর পরিবার বলছে সে গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। অপরদিকে পিতার পরিবারের অভিযোগ তাকে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজানো হচ্ছে। তবে আত্মগোপন করেছেন অভিযুক্ত স্বামী ও শাশুড়ি। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিজ বাড়িতে মিতার মৃত্যু হয়। মিতা খাতুন মেহেরপুর গাংনী উপজেলার সাহেবনগর গ্রামের বালিকা বিদ্যালয় পাড়ার দিনমজুর সামিরুল ইসলামের স্ত্রী।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইফতারের কিছু সময় আগে নিজ বাড়ির ঘরের ছাউনির আড়ার সাথে গৃহবধূ মিতা গলায় ফাঁস দিয়েছে বলে জানতে পারেন প্রতিবেশীরা। পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে নেয়া হয় স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে। সেখানে তার মৃত্যু হয়। পারিবারিক কলহের জের ধরে সে গলায় ফাঁস দিয়েছে বলে প্রতিবেশীদের জানায় সামিরুলের পরিবার। এদিকে খবর পেয়ে মিতার পিতার পরিবারের লোকজন রাত দশটার দিকে সামিরুলের বাড়িতে পৌঁছায়। এর আগেই গা ঢাকা দেয় সামিরুল ও তার মা ফরিদা খাতুন। নির্যাতনে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মিতার পরিবার। গৃহবধূ মিতার চাচাতো ভাই নজরুল ইসলাম বলেন, মিতার শরীরে আঘাতে চিহ্নি রয়েছে। মরদেহ দেখে সহজেই বোঝা যাচ্ছে যে, তাকে স্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। বিয়ের পর থেকেই মিতার ওপর স্বামী ও শাশুড়ির নির্যাতন চলছিলো অভিযোগ করে তিনি বলেন, চার বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। জামাইকে তারা সাধ্যমতো অর্থ সহযোগিতাও করেছিলেন। কিন্তু মিতার সংসারে সুখ ছিলো না। ছোটাখাটো বিষয় নিয়ে শাশুড়ি ও স্বামীর গালমন্দ শোনা লাগতো। মাঝেমধ্যেই শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতেন মিতা। এ বিষয়ে নিয়ে একাধিকবার উভয় পরিবার সমঝোতা বৈঠক হয়েছে। কিন্তু কোন সমাধান হয়নি।

জানা গেছে, সাহেবনগর গ্রামের কামরুল ইসলামের ছেলে রাজমিস্ত্রির জোগালে সামিরুলের সাথে পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার বাহেরমাদি চর গ্রামের মারফত আলীর মেয়ে মিতা খাতুনের বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে তাদের এক শিশুপুত্র রয়েছে। তার নাম অনিক (২)। সামিরুলের চাচা লাল্টু ও ওরফে লাল্টু কানা এলাকায় ডিবি পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিতি। লাল্টুর সাথে সামিরুল ও তার মা ফরিদা খাতুনের সুসম্পর্ক। এ কারণে তারা দাপটের সাথে চলাফেরা করে। বেশ কয়েকটি বিষয়ে তারা অন্যায় কাজ করলেও লাল্টুর ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করেনি। লাল্টুর ক্ষমতাবলেই তারা মিতার ওপর নির্যাতন চালাতো। পাড়াপ্রতিবেশী এবং মিতার পিতার পরিবারের কাউকে পরোয়া করতো না। এই ক্ষমতাবলেই শেষ পর্যন্ত নির্যাতন করে মিতাকে হত্যা করে থাকতে পারে বলে অভিযোগ মিতার পিতার পরিবারের। এদিকে মিতার পিতার পরিবারের মৌখিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে গতরাত দশটার দিকে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছে। মরদেহ সামিরুলের বাড়িতে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে।

গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, গৃহবধূর পিতার পরিবার হত্যার অভিযোগ করেছেন। আজ বুধবার মরদেহ ময়নাতদন্ত করানো হবে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন সাপেক্ষে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। তবে স্বামীর পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। তাদের আটকের চেষ্টা চলছে।

 

Leave a comment