গাংনীতে দু পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে কৃষক লীগ নেতাসহ আহত ৯

 

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলার লক্ষ্মীনারায়ণপুর ধলা গ্রামে দু পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে উপজেলা কৃষক লীগ সভাপতি আতিয়ার রহমানসহ নয়জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে গুরুতর আহত তিনজকে কুষ্টিয়া মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। পূর্ববিরোধ ও বাড়ি যাতায়াতের পথ নিয়ে সাবেক মেম্বার আতিয়ার রহমান ও বর্তমান মেম্বার আজমাইন হোসেন টুটুল পক্ষের মধ্যে গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে আতিয়ার রহমান (৫৬) ও তার বড় ভাই মহাব্বত আলী (৬৫), চাচাতো ভাই বাসারুল ইসলাম (৫৫), বাসারুলের ভাই সাহারুল ইসলাম (৪০) ও সাহারুলের স্ত্রী মদিনা খাতুন (৩৫)। এদের মধ্যে মহাব্বত আলী, বাসারুল ইসলাম ও মদিনা খাতুনকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। ঘাড়ে ধারালো অস্ত্রের কোপে আশঙ্কাজনক অবস্থায় মহাব্বত ও বাসারুলকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। অপরদিকে আজমাইন হোসেন টুটুল (৪০) ও তার ভাই এনামুল হক ললো (৩৬), ললোর স্ত্রী বিলকিছ খাতুন (২৮) ও মামাতো ভাই জাহারুল ইসলাম (৪৩) আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন টুটুল। আহতরা গাংনী কিংবা মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হননি। গ্রেফতার হওয়ার আশঙ্কায় গোপনে চিকিৎসা নেয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছেন টুটুল মেম্বার।

স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, কাথুলী ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড লক্ষ্মীনারায়ণপুর ধলা গ্রামের সাবেক মেম্বার ও উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি আতিয়ার রহমান পক্ষের সাথে একই গ্রামের বর্তমান মেম্বার আজমাইন হোসেন টুটুল পক্ষের বিরোধ বেশ কয়েক বছর আগে থেকে। বিবাদমান দুটি পক্ষের মধ্যে গত কয়েক দিন ধরে কয়েকটি বিষয় নিয়ে টান টান উত্তেজনা চলছিলো। এরই সূত্র ধরে গতকাল রাতে টুটুল মেম্বারের বাড়ির সামনে দু পক্ষের লোকজনের মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে তা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। এতেই ঘটে জখমের ঘটনা।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার সৈকত রায় বলেন, প্রথমে হাসপাতালে আসেন মহাব্বত আলী। তার ডান কাধে বড় ধরনের কোপের দাগ রয়েছে। পিঠেও আরেকটি ছোট কোপ রয়েছে। দুটি ক্ষত স্থান থেকে ব্যাপক রক্তক্ষরণ হচ্ছিলো। কাঁধে অনেকখানি জায়গাজুড়ে ক্ষত হওয়ায় রক্ত বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। দ্রুত তাকে কুষ্টিয়া মেডিকেলে রেফার করা হয়। এরপরে হাসপাতালে আসেন বাসারুল ও মদিনা খাতুন। বাসারুলের ডান কাঁধ ও মদিনা খাতুনে মাথায় ধারালো অস্ত্রের কোপের ক্ষত দাগ রয়েছে। এদের দুজনকেও কুষ্টিয়া রেফার করা হয়। এর কিছুক্ষণ পরেই আসেন আতিয়ার রহমান ও সাহারুল। তাদের দুজনের মাথায় লাঠি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এদের দুজনকে গাংনী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে গতরাত দুইটায় এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মহাব্বত আলীর অপারেশন চলছিলো। তার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছন স্বপনরা।

কুষ্টিয়া হাসপাতালে অবস্থানরত মহাব্বত আলীর বেয়াই নিয়াজুল ইসলাম বলেন, প্রচুর রক্তক্ষরণের ফলে তার জীবন সঙ্কটাপন্ন অবস্থা। কুষ্টিয়া হাসপাতালে রক্ত দেয়া হচ্ছে। আড়াই ঘণ্টার ওপরে অপারেশন চলছে। অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হলে শারীরিক অবস্থা বোঝা যাবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাবেক মেম্বার আতিয়ার রহমানের চাচাতো ভাই সাহারুল ইসলাম তার বাড়ির পাশে আব্দুল মান্নানের চার কাঠা জমি কিনেছেন। ওই জমির আগ্রহী ক্রেতা ছিলেন টুটুল মেম্বার পক্ষের মহির উদ্দীন। জমি ক্রয়ের বিষয়টি নিয়েই মূলত কয়েক দিন ধরে দু পক্ষের বিরোধ চাঙ্গা দিয়ে উঠেছিলো। এতেই ঘটে গতকালের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ।

এদিকে সংঘর্ষের খবর পেয়ে গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় রাখতে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বর্তমানে গ্রামের পরিবেশ শান্ত রয়েছে। আহতদের পক্ষ থেকে মামলা দিলে আসামি গ্রেফতার করা হবে।