স্টাফ রিপোর্টার: গুজব এখনও পিছু ছাড়েনি। যদিও গুজব সম্পর্কে গণসচেতনতার নানামুখি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পুলিশও হয়েছে তৎপরতা। এরপরও গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় দামুড়হুদার পুরাতন হাউলী ও জীবননগর আন্দুলবাড়িয়া এলাকায় গুজবে কান দিয়ে স্থানীয়রা ছুটে হয়রান হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। গুজবে কান দিয়ে আন্দুলবাড়িয়াতেও এক মানসিক প্রতিবন্ধীকে মারপিট করা হয়েছে। এসব ঘটনা গুজবে কান দিয়ে হুঁচুকে মাতার কারণেই হচ্ছে বলে দাবি পুলিশের।
দামুড়হুদা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদায় সন্ধ্যারাতে পুরাতন হাউলী গ্রামে ৪ জন অপহরক একটি পানবরজে ঢুকেছে এমন গুজবে স্থানীয়রা সংগঠিত হয়ে পুরোমাঠ তন্নতন্ন করে খুঁজেও ধরতে পারেনি কাউকেই। খবর পেয়ে পুলিশও তাৎক্ষণিক ছুটে যন য়ঘটনাস্থলে। কে দেখেছে জানতে চাইলে বাঁধে গোলকধাধা। এ বলে ও দেখেছে আর ও বলে অমুক দেখেছে। স্থানীয় লোকজন বলেছেন, গতকাল রাত ৮টার দিকে দামুড়হুদার পুরাতন হাউলী গ্রামে টর্চলাইট মারতে মারতে ৪ জন মাঠের মধ্যদিয়ে গ্রামে ঢুকছে। জনৈক এক মহিলার এ খবরে স্থানীয়রা যে যার মত লাঠিসোটা নিয়ে রেবিয়ে পড়ে ওই ৪ জনকে ধরতে। পুরাতন হাউলী গ্রামবাসির চিৎকার চেচামেচিতে এগিয়ে যায় নুতন হাউলীর প্রায় ২ শতাধিক গ্রামবাসী। দু গ্রামের লোকজন টর্চলাইট আর লাঠি হাতে নেমে পড়ে মাঠে। এ সময় পুরোমাঠ টর্চ লাইটের আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে। পুরাতন হাউলীর চাঁনতারার পানবরজে ঢুকেছে ওই ৪ অপহরক। লোকজন পানবরজসহ পুরোমাঠ তন্নতন্ন করে খুঁজেও কাউকে না পেয়ে শেষমেষ নিজেরাই বলতে থাকে সব গুজব। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান দামুড়হুদা মডেল থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই আনোয়ার হোসেন, এসআই আমজাদ হোসেন ও এসআই লিয়াকত আলী। তারা গ্রামবাসির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ফিরে আসেন। এর আগে সন্ধ্যা ৭ টার দিকে খবর আসে জয়রামপুরে জঙ্গী ধরা পড়েছে। পরে থানায় ফোন দিয়ে যায় ওটাও গুজব। এছাড়া গত মঙ্গলবার রাতে কেশবপুরের দুজন অপহরক এক গৃহবধূকে মুখ চেপে ধরে নিয়ে যাচ্ছিল এমন খবরে তটস্থ হয়ে ওঠে গ্রামাবাসী। পরে কাউকেই ধরতে পারেনি গ্রামবাসী। দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আবু জিহাদ বলেছেন, একটি বিশেষ দলের লোকজন এ ধরনের গুজব ছড়িয়ে এক ধরনের ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে এলাকার লোকজনকে আতঙ্কগ্রস্ত করার চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। তবে ভয় বা আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
আন্দুলবাড়িয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ছেলে ধরা, অপহরক, ডাকাত ও জঙ্গি উপস্থিতির খবর রটানোর ঘটনায় জীবননগরের আন্দুলবাড়িয়া এলাকায় গত মঙ্গলবার দিনগত রাতে হইচই রৈরৈ মধ্যে নির্ঘুম রাত কেটেছে কয়েকটি গ্রামের মানুষের। আন্দুলবাড়িয়া স্টেশনপাড়ায় রাত সাড়ে ১২টার দিকে সন্দেহভজন এক মানসিক প্রতিবন্ধীকে ধরে মেরে কাহিল করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। অপরদিকে অনন্তপুর গ্রামে সন্দেহভজন কয়েক ব্যক্তির উপস্থিতি দেখা গেছে, এ গুজব রটনায় কয়েকটি গ্রামের মানুষ সংঘটিত হয়ে মাঠ,ঘাট তল্লাসী চালিয়ে কোন সত্যতা মেলেনি। আন্দুলবাড়িয়া মাঠপাড়ার এক গৃহবধু ঘুমের ঘোরে অপহরণ আতষ্কে জ্ঞান হারিয়েছে। এঘটনার গুজবের ডালাপালা ছড়িয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে। নানা কানাঘুসো, আলোচনা সমলোচনার মাঝে জনমনে আতষ্ক দিনদিন এলাকায় বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকে আতষ্ক ও নিরাপত্তার অভাববোধ করায় সন্ধ্যার পর ঘরের দরজা, জানালা ও গেট বন্ধ করে অজানা আতষ্কর মধ্যে রাত কাট”েছন। নিকটজন ও প্রতিবেশীরা প্রয়োজনে ডাকাডাকি করে ভিতর থেকে তেমন কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে নিরাশ হয়ে ফিরছেন।
এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে এক মানসিক প্রতিবন্ধ (৪৫) আনছারবাড়িয়া রেল স্টেশনের আখ সেন্টারের সামনে রেললাইনের ওপর বসে ছিলেন। পাড়ার কয়েক ব্যক্তির সন্দেহ দেখা দিলে বাড়ি কোথায় জানতে চাই? গাফরগাঁও, এতোরাতে এখানে কেন প্রশ্নের উত্তরে ঐ ব্যক্তি নিরব থাকায় তাকে ধরে মেরে রক্তাক্ত জখম করা হয়। খবর পেয়ে শাহাপুর ক্যাম্প ইনর্চাজ এসআই ওয়ালিয়ার রহমান সঙ্গীয় র্ফোস সহ তাকে মারাত্মক আহত অব¯’ায় জনতার নিকট থেকে উদ্ধার করে রাতেই জীবননগর থানায় হস্তান্তর করেন। পুলিশের হেফাজতে সে পরিচয় দিতে গিয়ে বলছেন, নাম জামাল, পিতা আব্দুল কুদ্দুস খা, গ্রাম ১ং কদম রসুলপুর, পোষ্ট আমলীতলা উপজেলা গফঁরগা জেলা ময়মনশিংহ। এসআই ওয়ালিয়ার রহমান জানান, র্জীনশীর্ন চেহারা লোকটি দেখে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে সে মানসিক প্রতিবন্ধি ও নেশাগ্রস্ত। বেতার বার্তার মাধ্যমে তার পরিচয় জানা চেষ্টা চলছে। তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে গতকাল বুধবার আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। একই সময়ে আন্দুলবাড়িয়া স্টেশনপাড়ার সামসুল আলম গেলার স্ত্রী ৩ সন্তানের জননী সাহিদা খাতুন (৩৫) প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গেলে কচু বাগান থেকে তার মুখে স্প্রে করা হয় বলে দাবী করেন। ওই গৃহবধু এঘটনায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সোমবার রাত ৮ টার দিকে স্টেশনপাড়ার মহিদুলের সেগুনবাগানে মোবাইল ফোনের পিটপিটে আলো ও ফিসফিসানী কথা শুনে পাড়ার মানুষের মাঝে গুজব রটনায় আতষ্ক দেখা দেয়। অবশেষে পাড়ার লোকজন মহড়া দিয়ে সেগুনবাগান ঘেরাও করে গুজবের কোন সত্যতা মেলেনি। অপরদিকে অনন্তপুর গ্রামের এরশাদ আলী জানান, গ্রামের রবিউল নামের এক ব্যক্তি রাত ১০ টার দিকে আলমসাধু গাড়িতে ৭/৮ জন অপরিচিত ব্যক্তি গ্রামের ভিতর ঢুকতে দেখেছেন। একথা শুনে গ্রামবাসী লাঠি, দা, খুন্ত নিয়ে হৈহৈ রৈরৈ ধর, ধর, ওই গেল, ওই গেল বলে চিতকার দিয়ে গোটা এলাকা শোরগোল করে তটস্থ করে তোলেন। সর্বশেষে জনতা গ্রাম, মাঠ সহ বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালিয়ে কোন ব্যক্তির হদিস মেলেতে পারেনি। চিতকার ও চেঁচামেচিতে বাজদিয়া, কর্চ্চাডাঙ্গা ও আন্দুলবাড়িয়া খাপাড়ার লোকজন রাতভর তল্লাশি অভিযানে অংশ নেয়। গত সোমবার রাতে আন্দুলবাড়িয়া-সরোজগঞ্জ সড়কে মাঠপাড়ায় খেদের আলীর স্ত্রী আতষ্কে ঘুমের ঘোরে চিতকার চেঁচামেচি করার পর জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। ওই গৃহবধূকে নিয়ে এলাকায় নানা গুজব ছড়িয়ে পড়ে। একটি বিশেষ মহল হাট, বাজার, পাড়া, মহল্লা ও চায়ের দোকানে নানা গুজব রটিয়ে নানা সমলোচনায় মত্ত হয়ে পড়েন।
তথ্য অনুসন্ধান নিয়ে জানা গেছে, এসব গুজব রটিয়ে রটনাকারীরা সমাজে বিশেষ ফয়দা লুটার চেষ্টা করছেন। এলাকার সচেতন মহল বলছেন, ইত:পুর্বে ছেলে ধরা, রক্তচুষা, পদ্মা সেতু নির্মাণে মানুষের মাথা নিচ্ছে এ ধরনের বিভিন্ন প্রপাগান্ডের ঘটনা রটিয়ে সমাজে আতষ্ক সৃষ্টি করা হয়েছে। তার কোন সত্যতা মেলেনি। এ ধরনের অপপ্রচার ও গুজব রটিয়ে যারা জনমনে ভীতি ও আতষ্ক সৃষ্টি করছে। সেই গুজব রটনাকারীদের অবিলম্বে চিহিৃত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণসহ জনমনে ভীতি ও আতষ্ক দূর করতে এলাকায় সভা, সমাবেশের মাধ্যমে গণসচেতনা বৃদ্ধির জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছে।
পিছু ছাড়েনি গুজব ॥ দামুড়হুদা ও জীবননগরের পৃথক স্থানে তল্লাশি শেষে দীর্ঘশ্বাস
