স্টাফ রিপোর্টার: অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ব্যাংকে যাদের লাখ টাকা রাখার সামর্থ্য আছে তারা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যথেষ্ট সম্পদশালী বলে মনে হয়। এ কারণে বাজেটে তাদের ওপর বাড়তি কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বাড়তি ব্যয়ভারও তারা বহন করতে পারবেন, সমস্যা হবে না। জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনের পর গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, যাদের টাকা এক লাখের উপরে থাকবে কেবল তাদের উপরই একটা কর ধার্য্য করেছি। বড়লোকের ক্ষেত্রে আমাদের করটা ছিল, কিন্তু যারা মিড লেভেলে ছিল তারা এর অন্তর্ভুক্ত ছিল না। একলাখ টাকার নিচে যারা আছেন, তাদের ভার থেকে মুক্ত করাই যথেষ্ট। সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী ছাড়া শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান উপস্থিত ছিলেন। মূল মঞ্চে আরেকটি টেবিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, ইআরডি সচিব কাজী শফিকুল আজম এবং পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. জিয়াউল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, নতুন বাজেট প্রস্তাবে ২০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেনে বিদ্যমান ১৫০ টাকা আবগারি শুল্ক মওকুফ করা হয়েছে। এখন সেটা আর দিতে হবে না। দেশের ভিক্ষুকের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, অভাবের তাড়নায় এখন আর কেউ ভিক্ষাবৃত্তি করে না। কিছু মানুষের মধ্যে ভিক্ষা করার টেনডেন্সি কাজ করে। তারাই ভিক্ষা করছে।
পাচার ঠেকাতে ব্যাংকের টাকায় আবগারি শুল্ক: পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বিদেশে টাকা পাচার ঠেকাতে ব্যাংকে রাখা টাকার ওপর আবগারি শুল্ক বসানো হয়েছে। গতকাল বাজেটোত্তর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, টাকার ধর্ম হলো যেখানে মূল্য পাবে, সেখানে চলে যাবে। এ জন্য আমরা এখন ব্যাংকে টাকা গচ্ছিত না রেখে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করছি। বিদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছি। দক্ষিণ আফ্রিকায় অনেক ব্যবসায়ী বিনিয়োগ করছেন। পরিকল্পনামন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, আমরা যখন ক্ষমতায় আসি, তখন মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ। বর্তমানে তা ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। এতে করে জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। জিনিসপত্রের দাম স্থিতিশীল থাকবে। তিনি বলেন, ১০৪৩ টি পণ্যে ভ্যাট লাগবে না। আগে ৫৩৬ টি পণ্যে ভ্যাট লাগতো না। তাই ভ্যাটের কারণে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না। কিছু পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া সাময়িক বিষয়। আশা করছি সব পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে।
২ মাসের মধ্যে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার পর্যালোচনা: অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার পর্যালোচনা করা হবে। সঞ্চয়পত্রের সুদের হার প্রতি বছর একবার পর্যালোচনা করবো। বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে একথা জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যাংকে সুদের হার ৭ শতাংশ, আর সঞ্চয়পত্রে সুদের হার ১১ শতাংশ। এটি অসম্ভব। এত পার্থক্য থাকা উচিত নয়। সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, নতুন বাজেটে বৈদেশিক সাহায্যের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় বেশি রেখেছি। কারণ এর মধ্যদিয়েই এই টাকা ব্যবহারের সক্ষমতা আমরা অর্জন করবো।
১৫ শতাংশ ভ্যাট হলেও জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না: অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ১৫ শতাংশ ভ্যাট কার্যকর করা হলেও জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না। কারণ অনেক পণ্যে ভ্যাট ছাড় দেয়া হয়েছে। এছাড়া ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ভ্যাট বাড়লে শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য হবে না। গতকাল বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, নতুন বাজেটে বৈদেশিক সাহায্যের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় বেশি রেখেছি। পাইপ লাইনেও অনেক বেশি টাকা আছে। আমরা এই টাকার সদ্ব্যবহার করতে পারি না। টোটাল টাকা ব্যবহার করতে পারছি না। এরপরেও বিদেশি সাহায্যের পরিমাণ বেশি রেখেছি। কারণ, এর মধ্যদিয়েই এই টাকা ব্যবহারের সক্ষমতা আমরা অর্জন করবো।
অতি উৎসাহী কিছু লোক চাল–চিনির দাম বাড়াচ্ছে: শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, বাজারে চালের সংকট নাই। তারপরও চাল ও চিনির দাম বাড়ানো হচ্ছে। কিছু লোক অতি উৎসাহী হয়ে এ কাজ করছে। শিল্পমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ীরা রোজার মাসে মুনাফা ছাড় দেয়। আর বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা রোজার মাসকে মুনাফা লাভের মোক্ষম সময় ধরে নেয়। আমাদের দেশে দেশপ্রেমের অভাব আছে। এর জন্য আইন করতে হবে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের সহযোগিতা প্রয়োজন। আমি আশা করবো আপনাদের নিউজের মাধ্যমে কেউ যাতে মূল্য বৃদ্ধিতে উৎসাহিত না হন। এ বিষয়ে দেশকে সহযোগিতা করার জন্য আপনাদেরও দায়িত্ব রয়েছে।
চালের দাম বাড়লেও ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই আছে: কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, চালের দাম বাড়লেও ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই আছে। মানুষ কিনে খাচ্ছে। এটা নিয়ে মানুষের মধ্যে কোনো উচ্চবাচ্য নেই। বাজোটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, সরকার মজুত বাড়াচ্ছে এবং সেটি মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ভেতরেই থাকবে। সরকারের চাল সংগ্রহ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কৃষি মন্ত্রী বলেন, কৃষকের ধান জোর করে আনব না। তা ছাড়া হাওর অঞ্চলের তিন ভাগের দুই ভাগ ধান তলিয়ে গেছে। অন্যান্য জায়গায় চিটা রোগে ব্যাপক ফসলহানি ঘটেছে। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে চাল কেনার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এছাড়া বিদেশ থেকে জিটুজি চুক্তি করে চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। তিনি বলেন, এ বছর আমরা আউশ উৎপাদনের উপর জোর দিয়েছি। কারণ আউশ ধান উৎপাদনের খরচ কম। এ বিষয়টি নিয়ে কৃষকদের সচেতন করছি আমরা।
বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনের শেষ দিকে অর্থমন্ত্রী বলেন, জীবনের শ্রেষ্ঠ বাজেট দিয়েছি এবার। এজন্য এবার কঠোর পরিশ্রম করেছি। প্রশাসনের কর্মকর্তারা আমাকে ব্যাপকভাবে সহায়তা দিয়েছে। গত দুই বছর ধরে জ্বালাও-পোড়াও নেই। এজন্য আগামী বাজেটে আরও ভাল কিছু প্রতিভাত হবে। তিনি বলেন, আপনারা সব সময় বাজেটকে উচ্চাভিলাষী বলেন। আমি বলতে চাই, উচ্চাভিলাষী না হলে আপনারা উন্নত দেশের পথে কিভাবে হাঁটবেন। এদিকে সংবাদ সম্মেলনে মূল মঞ্চের নিচে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, মুখ্যসচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম ছাড়াও ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।