পূর্বাচলের লেক থেকে বিপুল ভারি অস্ত্র : গোলাবারুদ উদ্ধার

 

স্টাফ রিপোর্টার: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ৬২ এসএমজি, পাঁচটি ৭.৬২ পিস্তল, দুইটি রকেটলঞ্চার, ৪৯ মর্টারশেল, দুইটি ওয়্যারলেস, ১৫২৭ পিস গুলি, ৬০ ম্যাগজিন, ৪৯ গ্রেনেড ও ৪৯ ডেটোনেটর উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। উপজেলার পূর্বাচল উপশহরের ৫নং সেক্টরের ভুইয়া বাড়ি ব্রিজ সংলগ্ন গুতিয়াবো এলাকার লেকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও রূপগঞ্জ থানা পুলিশ শুক্রবার ভোর থেকে বেলা এগারোটা পর্যন্ত টানা যৌথ অভিযান পরিচালনা করে ওই সব অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করে।

অভিযান শেষে বেলা এগারোটায় সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশের মহাপরিচালক (আইজিপি) শহিদুল হক। তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও উন্নয়নে বাধাগ্রস্ত করতে একটি চক্র নাশকতার লক্ষ্যে এসব অস্ত্র গোলাবারুদ মজুদ রেখেছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিষয়টি তদন্ত করে চক্রটিকে আটকের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন- অতিরিক্তি আইজিপি (প্রশাসন) মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ-১ রূপগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক), ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম, জেলা পুলিশ সুপার মঈনুল হক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফোরকান শিকদার, সহকারী পুলিশ সুপার (গ সার্কেল) আব্দুল্লা আল মাসুদ, র‌্যাব-১ এর সিবিসি-৩ কোম্পানি কমান্ডার আবু হানিফ, র‌্যাব-১১ এর এসপি বাবুল আক্তার, নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ডিএডি মামুনুর রশিদ প্রমুখ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের বাগলা এলাকার মোসলেম উদ্দিনের ছেলে শরীফ মিয়ার বাড়িতে বড় ধরনের অবৈধ অস্ত্র রয়েছে বলে পুলিশের কাছে সংবাদ আসে। গত মঙ্গলবার (৩০ মে) সন্ধ্যায় রূপগঞ্জ থানা পুলিশ শরীফ মিয়ার বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে একটি এলএমজি রাইফেল উদ্ধার করে। অভিযান পরিচালনাকালে অস্ত্রবহনকারী শরীফ পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। এরপর পরের দিন বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ চাষাড়া এলাকা থেকে শরীফ মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত শরীফ মিয়ার স্বীকারোক্তিতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)’র ওসি মাহমুদুল ইসলাম ও রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ উপজেলার পূর্বাচল উপশহরের ৫নং গুতিয়াবো আগারপাড়া এলাকার বালুচর থেকে প্রথমে দুটি এসএমজি চাইনিজ রাইফেল উদ্ধার করা হয়। পরে দ্বিতীয় দফায় ভুইয়া বাড়ি ব্রিজ সংলগ্ন লেক থেকে পর্যায়ক্রমে ৬২টি এসএমজি, পাঁচটি ৭.৬২ পিস্তল, দুইটি রকেটলাঞ্চার, ৪৯টি মর্টারশেল, দুইটি ওয়ারলেস, ১৫২৭ পিস গুলি, ৬০টি ম্যাকজিন, ৪৯টি গ্রেনেড ও ৪৯টি ডেটোনেটর উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলের চারদিক অতিরিক্ত র‌্যাব ও পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। অভিযান পরিচালনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন বলেও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়। এদিকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের পর থেকেই আতঙ্কে রয়েছেন পূর্বাচল উপশহরের আশপাশে বসবাসরত এলাকাবাসী। এ ধরনের অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি।

সরজমিনে ঘুরে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্বাচল উপ-শহর এলাকাটি এক সময় জনবহুল এলাকা ছিল। রাজধানীর অতি কাছের এ এলাকাটিতে হাজার হাজার মানুষের বসবাস ছিল। পূর্বাচল উপশহর গড়ে তোলার লক্ষ্যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউক পুরো এলাকাটিকে অধিগ্রহণ করে নেয়। এরপর স্থানীয় বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করে দেয়া হয়। বর্তমানে পুরো পূর্বাচল উপশহরটি ফাঁকা ও নির্জন অবস্থায় রয়েছে। অপরাধীরা নিরাপদ স্থান হিসেবে পূর্বাচল উপশহরকে বেঁচে নিয়েছে। এখানে প্রায় সময়ই লাশ উদ্ধারসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটে থাকে। বিশেষ করে ৫ নং সেক্টরের লেকটি একেবারেই নির্জন ও দুর্গম জায়গা। হয় তো নিরাপদ ভেবে অপরাধীরা এখানে অস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুদ রেখেছে। পূর্বাচল উপশহরের আদিবাসী গুতিয়াব এলাকার মাজহারুল ইসলাম জানান, এই এলাকা লোকজন না থাকায় নিরব পড়ে থাকে। ফলে বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন দামী গাড়ি করে অচেনা লোকজন যাতায়াত করে থাকে। ফলে এই এলাকায় নিত্য নানা অপরাধ ঘটে থাকে।

স্থানীয়দের দাবি এই এলাকার দিন দুপুরে কালো গ্লাস ব্যবহারকারী দামী গাড়ির আনাগোনা থাকে। ফলে কে বা কারা এখানে নিত্য নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে যাচ্ছে। ফলে নিরাপত্তাহীনতা দূর করতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান। জেলা পুলিশ সুপার মঈনুল হক বলেন, লেকে আরও অস্ত্র থাকতে পারে। এজন্য ক্যানেল লেকে সেচে অস্ত্র ও গোলাবারুদ থাকলে তা উদ্ধার করা হবে। দুপুর দুইটার দিকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)’র ওসি মাহমুদুল ইসলাম বলেন, এসবের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের অবশ্যই গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে এবং দেশের স্বাধীনতা ও উন্নয়ন রক্ষা করা হবে।