বাংলাদেশ একটি জনসংখ্যাবহুল দেশ। বিপুল জনসংখ্যার কারণে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই সামনে অগ্রসর হতে হয়। দেশে জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার। পুরুষ ও মহিলার সংখ্যা প্রায় সমান। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর চলতি ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারির সর্বশেষ হিসেবে এ তথ্যে পুরুষ ৮ কোটি ১০ লাখ এবং মহিলা ৮ কোটি সাড়ে ৭ লাখ। গত সোমবার বিকেলে শেরেবাংলা নগরস্থ এনইসি অডিটোরিয়ামে পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক রিপোর্ট প্রকাশ করে এ তথ্য জানানো হয়। এটা আমলে নেয়া সমীচীন যে, বিবিএসের তথ্যানুযায়ী, ২০১২ সালে দেশে জনসংখ্যা ছিলো ১৫ কোটি ২৭ লাখ। ২০১৬ সালের ১ জুলাইতে এটি বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ কোটি ৮ লাখে। আর গত ছয় মাসে এটি সাড়ে ৯ লাখ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া গত পাঁচ বছরে লিঙ্গানুপাত কমেছে।
একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা এবং অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে হলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। একই সাথে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, জনসংখ্যাকে জনম্পদে পরিণত করার সার্বিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা। বলাই বাহুল্য যে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই বাংলাদেশের শ্রমিকরা সুনামের সাথে কাজ করছে। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। সংগত কারণেই জনসম্পদ বৃদ্ধি করতে আরও বেশি উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। আর এর জন্য বাড়াতে হবে প্রশিক্ষণ, যেন দক্ষ শ্রমিক রফতানি বৃদ্ধি পায়। এর পাশাপাশি শ্রমবাজার বৃদ্ধিতেও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জারি রাখতে হবে। এছাড়া দেশের কর্সমসংস্থানের সুযোগ বাড়াতেও উদ্যোগী হতে হবে। কেননা বেকারত্ব বাড়লে তা দেশের সার্বিক উন্নয়নের যাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করবে, যা কাম্য হতে পারে না। মানুষের শিক্ষা এবং সচেতনতার হার বৃদ্ধি পেলে জনসংখ্যার হার কমে আসবে এবং এটা আমলে নিতে হবে, বর্তমানে উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নেতিবাচক হয়ে উঠেছে। ফলে জনসংখ্যার হার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করতে পারলে তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে এমন বিষয়কে সামনে রেখে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা আবশ্যক। দেশ শিক্ষা ও সামাজিক সূচকসহ নানা দিক থেকেই এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এতে আত্মতুষ্টিতে না ভুগে বরং এই যাত্রা অব্যাহত রাখতে উদ্যোগী হতে হবে। তেমনিভাবে সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টিও আমলে নিতে হবে।
জনসংখ্যার হার বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে সরকার-সংশ্লিষ্টরা সার্বিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে এমনটি কাম্য। বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন হলেও এটা মনে রাখা দরকার, খাদ্য, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, শিক্ষা, যাতায়াত প্রভৃতি বিষয়ে এখনো নানামুখী সমস্যা বিদ্যমান। এছাড়া জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নের পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করতেও পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। এটা ভুলে যাওয়া যাবে না, জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করতে পারলে তা সব দিক থেকেই দেশের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। সার্বিক বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টরা এমন উদ্যোগ গ্রহণ করুক জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করার মধ্যদিয়ে দেশ ক্রমাগত উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে যায়।