সম্পাদকীয়
শোনা যায়, একটা সময় ছিলো যখন এক এলাকার ডাকাত অন্য এলাকার অর্থশালী পরিবারের সম্পদ লুণ্ঠন করে সাঙ্গপাঙ্গদের মধ্যে বিলি বণ্টনের পাশাপাশি দুস্থদের মধ্যে বিতরণ করতো। এরপর এলো নামধারী চরমপন্থি। অবৈধ অস্ত্রের বলে শ্রেণি শত্রু খতমের নামে রক্তের হোলিতে মেতে আধিপত্য বিস্তারে মেতে উঠতে শুরু করে। পরবর্তীতে তাদেরই উত্তরসূরিরা মেতে ওঠে চাঁদাবাজিতে। পতন অনিবার্য হয়ে ওঠে ওদের। চরমপন্থিদের দাপট কমাতেই মাথাচাড়া দিতে শুরু করে অঞ্চলভিত্তিক গ্যাং। কোনো গ্যাং অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়ে ব্যস্ত হয়ে ওঠে, কোনো কোনো গ্যাং ডাকাতি রাহাজানিতে মেতে জনগণের জানমালের নিরাপত্তাহীন করে তোলে। এখন? ডাকাতির পাশাপাশি পরিবারের সম্ভ্রমহানিতেও মেতে উঠেছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের নবগঠিত নেহালপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামের কয়েকটি পরিবার ওই ডাকাতদলের ভয়ে বাড়ি ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। এরপরও কি ওই ডাকতদলের হোতাদের ধরতে পেরেছে পুলিশ?
চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের নবগঠিত নেহালপুর ও কালুপোল ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে অভিন্ন আচরণসহ ডাকাতির পরিধি বেড়েছে। গতপরশু সোমবার দিনগত রাত ১২টার দিকে জেলা সদরের টেংরামারী ও খেজুরতলা মাঠপাড়ায় দীর্ঘ সময় ধরে যাচ্ছেতাই করেছে ডাকাতরা। অবশ্য মসজিদের মাইকে প্রচার করে গ্রামবাসীকে ডেকে তুলে ডাকাতদলের পিছু নিলেও তাদের টিকি ছোঁয়া সম্ভব হয়নি। উল্টো খেজুরতলা মাঠপাড়ার কয়েকটি বাড়িতে ডাকাতির সাথে সাথে এক বধূকে অস্ত্রের মুখে তুলে নেয়ার চেষ্টা করে। প্রতিরোধের মুখে ডাকাতদল একজনকে মারধরে আহত করেছে। এরপর? আজ আবার কোন এলাকায় ডাকাতদলের তা-বের খবর পাওয়া যাবে কে জানে? একের পর এক ডাকাতি ও সম্ভ্রমহানির পরও পুলিশের তেমন তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। অবশ্য সন্দেহভাজন গ্রেফতারের মধ্যদিয়ে দায় এড়ানোর রেওয়াজ দিন দিন বেড়েই চলেছে। দায় এড়ানোর এ রেওয়াজ থেকে বের হয়ে প্রকৃত অপরাধীদের ধরে আইনে সোপর্দ করার মতো কর্তব্যপরায়ণতায় যে চরম ঘাটতি তা বলাই বাহূল্য।
ভারত সীমান্তবর্তী চুয়াডাঙ্গা জেলায় রয়েছে নানা সমস্যা। মাদক, চোরাচালান ও সন্ত্রাস এই জনপদের বহুদিনের চেনা চিত্র হলেও একের পর এক ডাকাতি, ডাকাতির পাশাপাশি সম্ভ্রমহানি, সড়কে গাছ ফেলে দীর্ঘ সময় ধরে ডাকাতদলের তা-ব অনেকটাই নতুন। এসব কি পুলিশি নিস্ক্রিয়তার কুফল? নাকি পুরোনো চিহ্নিত সেই অস্ত্রধারীদের কেউ কেউ হাজতমুক্ত হয়ে গ্যাং গড়ে নতুন আঙ্গিকে তা-ব শুরু করেছে? যাই করুক, অপরাধীদের অব্যাহত অপতৎপরতা নীরবে মেনে নেয়া যায় না। নিশ্চয় পুলিশের সকল কর্তাই দায় এড়ানোর মানসিকতা লালন করেন না। তাছাড়া পুলিশে পূর্বের মতো অতোটা অপ্রতুলতাও নেই। পরিবহন ব্যবস্থার জোগানই শুধু বাড়েনি, প্রত্যন্ত অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগেরও উন্নতি হয়েছে। এমন কোনো গ্রাম আছে কি যে গ্রামে চার চাকার গাড়ি নির্বিঘেœ নেয়া যায় না? তা হলে পুলিশি টহলে ঘাটতি কেন, কেনই বা গ্রামবাংলায় চরম নিরাপত্তাহীনতা? দায় এড়ানোর যুক্তির চেয়ে কর্তার আশু পদক্ষেপে পুলিশি তৎপরতা বৃদ্ধি নিশ্চয় এনে দেবে স্বস্তি।