ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: হরিণাকুণ্ডু শহরের সলিম উদ্দীন ছিলেন রাজাকার। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বহু মুক্তিযোদ্ধাকে তিনি পাকবাহিনীর সহায়তায় হত্যা করেছেন। মানবতা অপরাধের সাথে জড়িত সেই সলিম উদ্দিনকে নতুন তালিকায় মুক্তিযোদ্ধা বানানো হয়েছে। কথাগুলো বলার সময় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন হরিণাকুণ্ডুর সাবেক ডেপুটি কমান্ডার জামাল উদ্দীন।
তিনি অভিযোগ করেছেন, অন লাইনে আবেদনকৃত দাবিদার মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ঝিনাইদহের হরিণাকুণণ্ডুতে যে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তা কোনো ক্রমেই মেনে নেয়া যায় না। অর্থের বিনিময়ে রাজাকার ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় নাম ওঠানো হয়েছে বলেও তিনি অভিযোগের তীর ছুড়ে দেন।
এদিকে শনিবার গভীর রাতে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশ করেছেন। এই তালিকা দেখে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছেন।
তথ্য নিয়ে দেখা গেছে, অনলাইনে আবেদনকৃত ২৩৫ জনের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ‘ক’ শ্রেণিতে ৬৩ জন, সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ‘খ’ শ্রেণিতে ৩৭ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাদ দেয়া হয়েছে ১৯ জনকে। এই তালিকা প্রকাশের পর যাচাই-বাছাই বোর্ডের সদস্যরাও হতভম্ব হয়ে পড়েছেন। তালিকায় মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী রাজাকারও স্থান পেয়েছেন। এছাড়া ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের ছড়াছড়ি রয়েছে এ তালিকায়।
হরিণাকুণ্ডু উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার জামাল উদ্দীন জানান, মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে রাজাকার সলিম উদ্দীনকে অনৈতিকভাবে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। বোর্ডের সভাপতি ও সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে অনৈতিক অর্থলেনদেনের বিষয়টি মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছে এখন হরিণাকুণ্ডু শহরে।
যাচাই-বাছাই বোর্ডের সভাপতি নুরুদ্দীন আহাম্মেদ বলেন, সলিম উদ্দীনকে আমি তালিকাভুক্ত করতে চায়নি। কিন্তু ফতেপুর গ্রামের মছির ভাইয়ের সুপারিশ ও চাপাচাপিতে করতে বাধ্য হয়েছি। তিনি বলেন, হরিণাকুণ্ডুর ইউএনও খুব ভালো বলে বোর্ডের প্রায় সব সদস্যদের বিরোধীতার মুখেও আমি চূড়ান্ত তালিকা করতে পেরেছি। তিনি অবৈধ লেনদেন সম্পর্কে বলেন, কারো কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়েছে এমন প্রমাণ নেই। তবে আমার সুনাম ক্ষুণ্ণ করতে এমন অপবাদ ছড়ানো হচ্ছে।
সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, হরিণাকুণ্ডুতে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে গ্রুপিং আছে। এই তালিকা করতে গিয়ে যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্যরা আমাকে ৪-৫ বার বয়কট করেছেন। তারপরও যে আমি সম্পূর্ণ ভালো করতে পেরেছি তা বলবো না। তবে বলা যায় সরকারি নীতিমালা ও আইনের মধ্য থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বোর্ডের সদস্য সচিব হরিণাকুণ্ডু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন বলেন, বোর্ড সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে এখানে আমার কিছুই করার নেই। কে কার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে তার সাথে এই কমিটির নুন্যতম কোনো সম্পর্ক নেই বলেও তিনি দাবি করেন।