দেশসেরার হয়ে ফিরলো রজনী ও সিনথিয়া

জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় আলমডাঙ্গা কলাকেন্দ্রের আবার কিস্তিমাত

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: এ বছরও  জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় আলমডাঙ্গা কলাকেন্দ্র আবারও কিস্তিমাত করেছে। এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে রাষ্ট্রপতির হাত থেকে দেশসেরার খেতাব ছিনিয়ে ঘরে ফিরেছে কলাকেন্দ্রের শিক্ষার্থী রজনী ও সিনথিয়া।

উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে আলমডাঙ্গা কলাকেন্দ্রের শিক্ষার্থী রজনী ও সিনথিয়া গত ১৬ মে ঢাকা শিশু একাডেমিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। জাতীয় পর্যায়ের এ প্রতিযোগিতায় রজনী খাতুন হামদ-নাতে শীর্ষস্থান অধিকার করে। আর সিনথিয়া পল্লি গীতিতে ২য় স্থান অধিকার করেছে। গত ১৮ মে তাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কৃত করা হয়। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির পরিচালক আনজীব লিটনের সভাপতিত্বে এ পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে রাষ্ট্রপতি আবুল হামিদ তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকি, বাংলাদেশ মহিলা অধিদফতের সচিব নাছিমা বেগম ও বাংলা একাডেমির চেয়ারম্যান কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন। ইতঃপূর্বে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পুরস্কার প্রতিযোগিতা-১৭তে অংশ নিয়ে সারাদেশে ৩য় হয়ে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নিয়ে ঘরে ফেরে রজনী খাতুন। এ বছরই ইসলামী ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে রজনী সারাদেশে শ্রেষ্ঠ হয়ে স্বর্ণপদক লাভ করেছে। ইতঃপূর্বে রজনী খাতুন জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পুরস্কার প্রতিযোগিতা-১৬ তে অংশ নিয়ে সারাদেশে ৩য় হয়ে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নিয়ে ঘরে ফেরে। এছাড়া বিটিভি’র রজত জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় রজনী খাতুন সারাদেশে লালনগীতিতে ২য় ও নজরুলসঙ্গীতে ৩য় হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলো।

৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী সিনথিয়া ইতঃপূর্বে এ বছরই আন্তঃপ্রাথমিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে একক অভিনয়ে দেশসেরা হওয়ার গৌরব লাভ করে। উপজেলার প্রত্যন্ত রায়সা গ্রামের দরিদ্র মাছ বিক্রেতা লিটন আলীর মেয়ে রজনী খাতুন। রজনী খাতুন ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। অন্যদিকে, সিনথিয়া আলমডাঙ্গার আরেক প্রত্যন্ত গ্রাম ভোদুয়ার সাইদুর রহমানের মেয়ে। সে ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী। লেখাপড়ার পাশাপাশি তারা উভয়ে আলমডাঙ্গা কলাকেন্দ্রে সঙ্গীত শিখছে। গত ১৮ জানুয়ারি ও ২৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত যথাক্রমে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় রজনী হামদ-নাত, ভাব সঙ্গীত ও দলীয় জারী গানে ১ম হয় স্থান অর্জন করে। সিনথিয়াও উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় পল্লি গীতিতে ১ম স্থান অর্জন করে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি ছিলো বিভাগীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতা। যশোর জেলা স্কুলে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। বিভাগীয় এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে রজনী হামদ-নাতে ১ম, ভাব সঙ্গীত, দেশাত্ববোধক  ও জারিগানের সবগুলোতে ২য় স্থান অধিকার করে। আর সিনথিয়া? সিনথিয়া পল্লি গীতি গেয়ে ১ম স্থান অধিকার করেছিলো।

তাছাড়া ২০১৬ সালে আলমডাঙ্গা কলাকেন্দ্রের আরেক শিক্ষার্থি তমা বিশ্বাস জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় দেশসেরা হয়ে প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদের হাত থেকে স্বর্ণপদক লাভ করেছেন। কলাকেন্দ্রের আরেক ছাত্রী ঝর্ণা খাতুন একই প্রতিযোগিতায় ভাব সঙ্গীতে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে ১ম স্থান এবং খুলনা বিভাগীয় পর্যায়ে ২য় স্থান অধিকার করে। তাছাড়া কলাকেন্দ্রের প্রাক্তন শিক্ষার্থী পিংকী সম্প্রতি বিটিভি’র নিয়োমিত তালিকাভূক্ত নৃত্যশিল্পী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছে। ২০০৭ সালে বৈশাখী টেলিভিশন আয়োজিত পদ্মকুঁড়ি প্রতিযোগিতায় সারাদেশে প্রথম হয়েছিলো এ কলাকেন্দ্রের সাবেক শিক্ষার্থী কৃপা। সে বর্তমানে স্কলারশিপ নিয়ে জাপানে নাচের ওপর ধ্রুপদী প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।

আলমডাঙ্গা কলাকেন্দ্র বেশ কয়েক বছর ধরে খুলনা বিভাগে শ্রেষ্ঠত্বের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে। জেলার অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক সংগঠণ আলমডাঙ্গা কলাকেন্দ্রের সভাপতি ইকবাল হোসেন এবং সম্পাদক হিসেবে প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে আসছেন রেবা সাহা। ১৯৯০ সাল থেকে নানা চড়াই উতরাই পার হয়ে আজোবধি অবৈতনিকভাবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গীত ও নৃত্যের প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে। এমনকি জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায়ও এ দুজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নিজেদের অর্থে শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহণ করিয়ে আসছেন। এ সংগঠনটি এখন খুলনা বিভাগের অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।