চিকুনগুনিয়া: প্রতিরোধে প্রস্তুতি নেই সরকারের

 

স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে আসা রোগীদের একটি বড় অংশই চিকুনগুনিয়া জ্বরে আক্রান্ত। এ সংখ্যা এখন প্রতিদিনই জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। অথচ ভয়াবহ এ প্রকোপ প্রতিরোধে জনসচেতনতামূলক সামান্য কর্মসূচি ছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। এমনকি এ রোগ কতটা ভয়াবহভাবে সারাদেশে ছড়াচ্ছে সে তথ্য সংগ্রহেও সরকার এখনো কোনো কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেনি। অথচ দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য এ রোগটি দ্রুত হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বিষয়টি দ্রুত জাতীয়ভাবে মোকাবেলা করার তাগিদ দিয়েছেন।

একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, চিকুনগুনিয়া ভাইরাসজনিত জ্বর, যা এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এছাড়াও এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে যে কোনো মশা কামড়ালে ওই মশার মাধ্যমেও তা ছড়াতে পারে। তাই এ রোগ প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে এডিস মশার বংশবিস্তার রোধ সবচেয়ে বেশি জরুরি। অথচ খোদ ঢাকাতেই এ ধরনের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন লোকদেখানো সামান্য কিছু জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম চালালেও দেড়কোটি মানুষের এ শহরে এর কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি।

তারা জানান, এডিস মশা পরিষ্কার পানিতে ডিম ছাড়ে। অন্যান্য মশা ময়লা-নোংরা পানিতে বংশবিস্তার করলেও এডিস মশা এর ব্যতিক্রম। সহজে চোখে পড়ে না এমন জায়গার পরিষ্কার পানিতে এ মশা ডিম ছাড়ে। ফলে শহরে বিশেষ করে অভিজাত এলাকায় এডিস মশা বেশি দেখা যায় এবং রোগীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত অভিজাত এলাকার বাসিন্দারা বেশি। তবে দ্রুত এটি শহর কিংবা অভিজাত এলাকার সীমা ছাড়িয়ে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের দিকে এগুচ্ছে।

রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) একজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, এডিস মশাবাহিত চিকুনগুনিয়াকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখলে চলবে না। এটা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সাথে চিকুনগুনিয়া-ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের কথা ভাবতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আমাদের দেশে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া জীবাণুবাহী (প্রধানত এডিস) মশার বিস্তার ঘটছে। মশার বংশবিস্তার রোধ করতে না পারলে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় এটি হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। মশা যাতে বেড়ে উঠতে না পারে সে জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো জরুরি। এ পরিস্থিতিতে সরকারের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা সত্যিকার অর্থেই দুঃখজনক মন্তব্য করেন ওই কর্মকর্তা।