চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার পল্লি তিয়রবিলার ওল্টু দীর্ঘদিনের দাগি। স্থানীয়দের ভাষায় পুরাতন পাপি। বহু আগেই তাকে ধরে আইনের খাঁচায় বন্দি রাখতে পারলে শুধু রামদিয়া-কায়েতপাড়া বাঁওড় মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি জিয়ার প্রাণই রক্ষা পেতো না, বন্ধ হতে রক্তের হলি। বিলম্বে হলেও তাকে ধরতে পুলিশি তৎপরতা শুরু হয়েছে। যতো দ্রুত তাকে ধরে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হবে, ততোই কল্যাণ। অবশ্যই এ প্রত্যাশা এলাকার একাংশের। কেননা, ওল্টুকে এলাকার যে নেতা মদদ দেন, যার ছত্রছায়ায় ভয়ঙ্কর সেই নেতার প্রতিপক্ষ রয়েছে। প্রতিপক্ষও যে তেমন কারো লালন করেন না তা হলফ করে বলা অসম্ভব। এলাকার সচেতন মহলের কাছে বিষয়টি অবশ্যই স্পষ্ট। কোনো কোনো নেতার কেন মতবিরোধ, সেই বিরোধের খেসারত দিচ্ছে কারা তা কি জানে না আমজনতা?
রামদিয়া-কায়েতপাড়া বাঁওড়টি বিশাল। প্রায় ৩শ একর জলকার। মৎস্যজীবী সমিতি এ জলাশয়ে মাছের চাষ করে। এ সমিতির সদস্যরা ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচন করেন। পর পর দু মেয়াদে নির্বাচিত হন জিয়াউর রহমান জিয়া। তাকে গত ১৮ এপ্রিল রাতে বাঁওড়েই গুলি করে খুন করা হয়। খুনের ১৩ দিনের মাথায় পুলিশ বিলের নৈশপ্রহরীদের ধরে জিজ্ঞাসাবাদে বিস্তারিত জানতে পেরেছে। তারা খুনের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। দুজন নিজেদের দোষ এড়িয়ে খুনের সময় খুনিকে চিনতে পেরেছে বলে জানিয়ে জবানবন্দি দিয়েছে। এদের দেয়া তথ্যমতে তিয়রবিলার দীর্ঘদিনের ত্রাস ওল্টু মূল খুনি। তবে ওই ওল্টুই হোতা নাকি জিয়া হত্যা তার মদদদাতার ইচ্ছের প্রতিফলন? তদন্তে পুলিশ নিশ্চয় এসব খতিয়ে দেখতে কুণ্ঠাবোধ করবে না। যদিও ওদিকে কিছুটা হলেও ক্ষমতার আঁচ বিরাজমান। অপরাধীসহ অপরাধীদের লালনকারীরও আইনের দৃষ্টিতে বিচারের মুখোমুখি করতে পারলে তার ইতিবাচক ফল সমাজেই ভোগ করবে।
এক সময়ের রক্তাক্ত জনপদ হিসেবে অপবাদ পাওয়া এলাকায় বাঘা বাঘা সন্ত্রাসী ছিলো। তাদের অনেকেরই পতন হয়েছে। অঞ্চল ভেদে এখনও কিছু ত্রাস দিব্যি ঘুরছে। এদের অধিকাংশেরই দীর্ঘদিন হাজতবাসের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিয়রবিলার ওল্টু তাদেরই একজন। এর আগে প্রকাশ্যে নজরুল ইসলামক খুন হলে ওই ওল্টুকেই মূল খুনি বলে অভিযোগ উঠে। অবশ্য সে দফা খুনের পর পাল্টা আক্রমণ ও অগ্নিকাণ্ডে কারণে ওল্টু অনেকটা আড়াল হয়ে যায়। সেই ওল্টুই আবার খুন করেছে। তার গ্যাঙের সদস্যদের সাথে বাঁওড়ের নৈশপ্রহারীরাও সহযোগিতা করেছে। ঘটনার পর প্রকৃত হত্যাকারীদের মুখোশ উন্মোচন অবশ্যই পুলিশি বিচক্ষণতারই স্বাক্ষর। এ জন্য তদারক ও তদন্ত কর্তা অভিনন্দন পাওয়ার দাবি রাখেন বটে। তবে অপরাধ করার আগেই অপরাধী ধরার মতো পুলিশি বিচক্ষণতা প্রত্যাশী আমরা।