মুঠোফোনভিত্তিক ইন্টারনেটের মূল্য আগামী ছয় মাসের মধ্যেই হ্রাস পাবে বলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন। ইন্টারনেটের মূল্য নিয়ে জনমনে যে প্রশ্ন বা বিভ্রান্তি রয়েছে তা দূর করতে মুঠোফোন অপারেটরসহ ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলিকে নির্দেশ দেয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। ইন্টারনেট-সেবার সাথে যুক্ত সকল পক্ষকে নিয়ে সচিবালয়ে গত বুধবার যেই সভা অনুষ্ঠিত হয়, তার পর প্রতিমন্ত্রী এই ঘোষণা দেন। বিটিআরসির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬ কোটি ৭২ লাখ। এর মধ্যে মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছয় কোটি ৩১ লাখ। অর্থাৎ শতকরা ৯৪ ভাগ ব্যবহারকারী মুঠোফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে। তাই সর্বাধিক ব্যবহারকারীর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এই পদক্ষেপ অভিনন্দনযোগ্য। এর পূর্বে এপ্রিল মাসেই বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এই সংক্রান্ত কস্ট মডেলিঙের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলো। সেবাপ্রদানের খরচ, যথাযোগ্য মুনাফা, গ্রাহকসংখ্যা, সেবার মান ইত্যাদি অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণের পদ্ধতি হলো কস্ট মডেলিং। এতোদিন মোবাইলফোন অপারেটরদের নির্ধারিত মূল্যেই গ্রাহকরা মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে আসছিলেন। তাতে গ্রাহকস্বার্থ সংরক্ষিত হচ্ছিলো না। তাই সর্বাধিক ব্যবহারকারীর অধিকার রক্ষার স্বার্থে কস্ট মডেলিঙের বিষয়টি সম্পন্ন করা অত্যন্ত জরুরি ছিলো।
বাংলাদেশে ইন্টারনেটের মূল্য বর্তমানে পৃথিবীর তৃতীয় সর্বনিম্ন। তথাপি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের পক্ষ থেকে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের মূল্য হ্রাস করার প্রচেষ্টা চলছে। বিশেষত ইন্টারনেটের মূল্যের সাথে কর ও মূল্য সংযোজন কর হ্রাস করতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হবে। তবে মূল্য হ্রাস পেলেও সেবার মান উন্নত হবে কি-না সেই চ্যালেঞ্জ কিন্তু থেকেই যাবে। কারণ মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গেলে নানা সমস্যা উপস্থিত হয়। মুঠোফোনের মধ্যে ইন্টারনেট ডাটা ব্যবহার করতে গেলে যে গতি পাওয়া যায়, তা সন্তোষজনক নয়। অবশ্য যারা অনেক দামি স্মার্টফোন ব্যবহার করে থাকেন, তারা কিছুটা সুবিধা পেয়ে থাকেন এই ক্ষেত্রে। কিন্তু সাধারণ স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে শ্লথগতি একটি নিয়মিত অভিজ্ঞতা। অন্যদিকে ইন্টারনেটের গতি কেবল ধীরই নয়, হঠাত হঠাত ইন্টারনেটের সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এই সংকটের সমাধান কী?
গ্রাহক বর্তমান মূল্যে হোক কিংবা ভবিষ্যতের হ্রাসকৃত মূল্যে হোক, ইন্টারনেট ডাটা কিনে তার যদি সদ্ব্যবহার নাই করতে পারেন, তবে তারা এক ধরনের প্রতারণারই শিকার হবেন। ইন্টারনেটের সংযোগ পাওয়া তথ্যসমাজের নাগরিকের এক প্রাথমিক অধিকার, কিন্তু দ্রুতগতির ইন্টারনেট পাওয়াও আরেক অধিকার বটে। মূল্যহ্রাসের পাশাপাশি সরকারকে মোবাইলফোনে দ্রুতগতির ইন্টারনেটের ওপর নজর দিতে হবে। মোবাইল অপারেটররা এইক্ষেত্রে কেন দ্রুতগতির ইন্টারনেট প্রদান করতে ব্যর্থ হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখতে হবে। পরস্পরের সাথে যোগাযোগই কেবল নহে, মানুষ অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অনেক জরুরি কাজকর্ম এখন কক্ষে বসিয়া ইন্টারনেটের মাধ্যমেই সমপন্ন করে থাকেন। ফলে মুঠোফোনে ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধি পাওয়া প্রয়োজন। আবার বহু মানুষের ইন্টারনেট সংযোগের অন্যতম বা একমাত্র মাধ্যমই হলো মুঠোফোন। মূল্যহ্রাসের পাশাপাশি ইন্টারনেটের গতিবৃদ্ধির বিষয়টিকেও গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিতে হবে।