ঢাকায় র‌্যাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী : জনগণ যেন অহেতুক নির্যাতনের শিকার না হয়

 

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সাধারণ নাগরিকরা যেন অহেতুক নির্যাতনের শিকার না হয় সেজন্য সজাগ থাকতে র‌্যাব সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, জনগণের পয়সায় আমাদের-আপনাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়। আমরা সকলেই জনগণের সেবক। সেই জনগণ যেন কোনোভাবেই নিগৃহীত না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। গতকাল বুধবার সকালে রাজধানীর কুর্মিটোলায় র‌্যাব সদর দফতরে র‌্যাবের ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত দরবারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি সদস্যকে দেশপ্রেম, সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা, দক্ষতা ও পেশাদারত্বের মনোভাব নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করাই র‌্যাব সদস্যদের মূল লক্ষ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইন-কানুন এবং নিয়ম-নীতি মেনে আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন- এটাই আমার প্রত্যাশা।

র‌্যাবের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বাহিনীতে অস্পষ্ট ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ, টেলিফোন সেট ট্রাকিঙের যন্ত্রসহ অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদি সংযোজন করা হয়েছে। যার যেখানে সক্ষমতা আছে সেটা একে অপরকে, বাহিনীগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতা করা উচিত। পরবর্তীতে অন্য ঘাটতিগুলো পূরণ করার আশ্বাস দেন তিনি। র‌্যাবের অভিযানের সাফল্য সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি সিলেটের জঙ্গি আস্তানা আতিয়া মহলকে দক্ষতা ও সাহসিকতার সঙ্গে র‌্যাব বিস্ফোরক মুক্ত করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে। তিনি আতিয়া মহলে অভিযান পরিচালনার সময় নিহত র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে স্বজনদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেন। এছাড়া র‌্যাবের দায়িত্ব পালনকালে নিহত সদস্যদের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের অনেক দেশে একটি নতুন উপদ্রব হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আমরা জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। তিনি বলেন, নিরীহ কোমলমতি যুবকদের প্রলোভন দেখিয়ে বা ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে জঙ্গিবাদের দিকে আকৃষ্ট করা হচ্ছে। এজন্য দমন কার্যক্রমের পাশাপাশি জনসচেতনতা তৈরিতে আমাদের মনযোগ দিতে হবে। র‌্যাব সম্প্রতি কতিপয় বিষয়ে জঙ্গিবাদীদের অপব্যাখ্যা এবং পবিত্র কোরআনের সংশ্লিষ্ট আয়াত ও হাদিসের সঠিক ব্যাখ্যা শীর্ষক একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেছে উল্লেখ করে এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা যে যেখানে আছি সেখান থেকেই জঙ্গিবাদের মোকাবেলা করতে হবে। তা না হলে আমাদের সব অর্জন বিনষ্ট হয়ে যাবে। পাশাপাশি তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে এবং প্রতিকার নয়, প্রতিরোধের দিকেই বেশি নজর দেয়ার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে বাংলাদেশ জঙ্গিবাদ নির্মূলে সফলতা অর্জন করেছে। তিনি বলেন, যারা জঙ্গিবাদ থেকে সরে এসে স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে তাদের আর্থিকভাবে পুনর্বাসন ও আইনি সহায়তা দেবে সরকার।

প্রধানমন্ত্রী র‌্যাব সদর দফতরে পৌঁছুলে মেজর মঞ্জুরুল ইসলামের নেতৃত্বে র‌্যাব ফোর্সেস প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। পরে প্রধানমন্ত্রী র‌্যাব-৯’র জন্য নবনির্মিত হেডকোয়ার্টাস ভবনের ফলক উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, পুলিশের আইজি শহীদুল হকসহ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।