ডাকাতের হেঁসোর কোপে ২ যুবক আহত ॥ ৩ জনকে গণধোলাই

দামুড়হুদার চাঁদপুরে সশস্ত্র ডাকাতদলের হানা ॥ গ্রামবাসীর প্রতিরোধে ডাকাতি চেষ্টা ব্যর্থ

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: দামুড়হুদার উত্তরচাঁদপুর গ্রামে আবারও ডাকাতির চেষ্টা চালিয়েছ সংঘবদ্ধ ডাকাতদল। হুনুমান টুপি পরে মুখে গামছা বেঁধে ৭-৮ জনের সশস্ত্র ডাকাতদল হানা দিলেও গ্রামবাসীর প্রতিরোধের মুখে শেষমেষ পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। গ্রামবাসী ডাকাতদলকে ঘিরে ফেলে মারপিটের এক পর্যায়ে সুমন (১৮) ও হাবিবুর (১৯) নামের দু যুবককে হেঁসো দিয়ে কুপিয়ে কোনোমতে প্রাণ বাঁচিয়ে ফিরে গেছে ওই সংঘবদ্ধ ডাকাতদল। আহত যুবক সুমন গৃহকর্তা আজিজুলের ছেলে এবং অপর আহত যুবক হাবিবুর প্রতিবেশী মুছা করিমের ছেলে। ডাকাতদলের হেঁসোর কোপে রক্তাক্ত জখম ওই দু যুবকের মধ্যে সুমনকে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং হাবিবুরকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ ডাকাতি ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে একজনকে গ্রেফতার করেছে। গত শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে দামুড়হুদার উত্তরচাঁদপুর পশ্চিমপাড়ার আজিজুলের বাড়িতে ওই ডাকাতির চেষ্টা চালায়।
ডাকাতির ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ভুক্তভোগী আজিজুলের স্ত্রী বেলী খাতুন (৩৪) বলেছেন, আমার স্বামী ঘরের বারান্দায় ছিলেন। আমরা তখন বাড়ির সকলেই জেগে ছিলাম। রাত সাড়ে ১২টার দিকে ৩-৪ জন হনুমান টুপি পরা এবং আরও ৩-৪ জন মুখে গামছা বেঁধে বাড়ির মধ্যে ঢুকে আমার স্বামীর গলায় হেঁসো ধরে বলে তাড়াতাড়ি টাকা বের কর। তখন আমি ও আমার স্বামী তাদের বলি যে টাকা কোথায় পাবো। আমাদের কাছে কোন টাকা পয়সা নেই। ওই সময় ডাকাতদলের একজন বলে আমাদের কাছে খবর আছে ঘরে গরু বিক্রির ২ লাখ টাকা আছে। আমরা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা আমার স্বামীকে লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। আমি ঠেকাতে গেলে তারা আমাকেও মারধর করে এবং বলে তাড়াতাড়ি টাকা বের কর। আমি ঘটনাটি প্রতিবেশীদের জানানোর উদ্দেশেই একটু জোরে জোরেই বলতে থাকি আমরা টাকা কোথায় পাবো। আমাদের ঘরে কোনো টাকা পয়সা নেই। এ কথার পর ডাকাতদল আমার স্বামীকে বারান্দা থেকে টেনেহেঁচড়ে বাইরে বের করে ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল আলিম, প্রতিবেশী মুছা করিমের ছেলে হাবিবুর, আমার ছেলে সুমন, আব্দুস ছাত্তারের ছেলে হাবিলসহ গ্রামবাসী ছুটে আসে এবং প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ডাকাতদল এ সময় ২টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। তবে তারা কোনো টাকা পয়সা নিতে পারেনি। উত্তর চাঁদপুরের সাবেক মেম্বার আব্দুল আলিম বলেন, আমার একটি গাভীর বাছুর হয়। এজন্য আমি ও আমার স্ত্রী ওই সময় জেগেই ছিলাম। রাত সাড়ে ১২টার দিকে প্রতিবেশী আজিজুলের বাড়ি থেকে হঠাত কাঁন্নার আওয়াজ শুনতে পাই। কাঁন্নার আওয়াজ শুনে আমার স্ত্রী আমাকে বলে দেখ আজিজুল আজকেও বউকে মারধর করছে। আমি বিষয়টি জানার জন্য টর্চলাইট নিয়ে এগিয়ে গিয়ে দেখি ডাকাতদল ঢুকে আজিজুলকে টেনেহেঁচড়ে বাড়ির বাইরে নেয়ার চেষ্টা করছে। আজিজুলের বাড়িতে ডাকাত পড়েছে। তোমরা সবাই এগিয়ে এসো বলে আমি জোর জোরে চিৎকার শুরু করি। আমার চিৎকারে গ্রামবাসীরা এগিয়ে এলে আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলি। ডাকাতদল ওই সময় ২টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। কিন্তু আওয়াজ খুবই কম। বিস্ফোরিত বোমা ২টি পটকা বোমা বুঝতে পেরে আমরা ডাকাতদলকে ঘিরে ফেলে মারপিট শুরু করি। তিনি আরও বলেন, আমরা একজনকে প্রায় ধরেও ফেলেছিলাম। ডাকাতদল অবস্থা বেগতিক দেখে সুমন ও হাবিবুরকে হেঁসো দিয়ে কোপ মেরে বিত্তিপাতার মাঠ হয়ে ভৈরব নদী পার হয়ে পালিয়ে যায়। ডাকাতদলের ৩ জনকে বাটামপেটা করা হয়েছে। ওই ৩ জনের মধ্যে একজনকে বেদম মারপিট করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আবু জিহাদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত বলেছেন, ঘটনাটি জানার সাথে সাথে আমি তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। বিস্তারিত বিবরণ শুনে ডাকাতি ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে রফিক নামের একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বাড়ি কানাইডাঙ্গায়।