প্রতিনিয়ত ঠকছে রোগী সাধারণ : দেখার কেউ নেই

দর্শনায় ক্লিনিকগুলো কসাইখানায়  পরিণত : নেই কোনো নিয়মনীতি

 

স্টাফ রিপোটার: বাংলাদেশের নাগরিকের পাঁচটি মৌলিক অধিকারের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চিকিৎসা সেবা পাওয়া। সে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। চিকিৎসা ক্ষেত্রে চরম অনিয়ম, অবহেলা, অনিহা এবং দুর্নীতি জেকে বসেছে চিকিৎসক ও ক্লিনিক মালিকদের মধ্যে। রয়েছে আন্তরিকতার দারুন অভাব। দর্শনা তথা আশপাশ এলাকার ক্লিনিক মালিকদের ক্ষেত্রে চিকিৎসা সেবার নামে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে রূপ দিয়েছে। রোগীর আর্থিক ও পারিবারিক অবস্থার বুঝে নিয়ে যেন ঝোপ বুঝেই কোপ মারার মতো হামলে পড়তে দেখা যায় চিকিৎসকসহ ক্লিনিকে পুষে রাখা দালালদের। আসলে কি ক্লিনিক নাকি চিকিৎসা সেবার নামে কশাই খানা গড়ে তোলা হয়েছে? কোনো নিয়নম কানুনের তোয়াক্তা না করেই বহাল তবিয়তে চলছে চিকিৎসার আড়ালে অপচিকিৎসা। দেখার কী কেউ নেই, নাকি দেখেও না দেখার ভান করে আছে কর্তা বাবুরা? ১৯৩৮ সালে কেরুজ চিনিকল প্রতিষ্ঠার পরপরই শ্রমিক-কর্মচারী, কর্মকর্তাদের চিকিৎসা সেবার জন্য নির্মাণ করা হয় কেরুজ হাসপাতাল। শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের পাশাপাশি এলাকার আখচাষিসহ সাধারণ মানুষগুলো পেতো চিকিৎসা সেবা। ২০০০ সালের দিকে উন্নত চিকিৎসা সেবা দেয়ার লক্ষ্যে দর্শনা ঘুঘুডাঙ্গা পদ্মা ক্লিনিক চালু করা হলেও চিকিৎসা সেবার দিক থেকে পিছিয়ে পড়ার কারণে অল্প দিনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় ক্লিনিকটি। পরপরই স্বল্প পরিসরে দর্শনা মর্ডান ক্লিনিকের কার্যক্রম শুরু করেন ডা. হোসনে আরা জারি আখি ও ডা. তারিকুল আলম। আল্পদিনের ব্যবধানে এ ক্লিনিকের পরিচয় ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় গড়ে তোলা হয় ৫ তলা বিশিষ্ট ভবনের ক্লিনিক। মর্ডান ক্লিনিকের রাতারাতি উন্নতি দেখে হঠাৎ করেই যেন দর্শনায় ৫টি ক্লিনিক গড়ে তোলা হয়। এদের মধ্যে রয়েছে দর্শনা বাসস্ট্যান্ডের শাপলা ক্লিনিক, মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতাল, হেলথ অ্যান্ড হোপ, আমাদের হাসপাতাল ও মুক্তি ক্লিনিক অ্যান্ড লাবীব ডায়াগনস্টিক সেন্টার। হেলথ অ্যান্ড হোপ ও আমাদের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বেশিদিন টিকিয়ে রাখতে পারেননি তাদের চিকিৎসা ব্যবসা। ফলে বন্ধ করে দেয়া হয় ক্লিনিক দুটি। আখচাষিদের অর্থায়নে নির্মাণ করা হয় মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতাল। যেখানে আখচাষিদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করণে অঙ্গীকার নিয়েই এ প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু করলে সে গুড়ে যেন বালি পড়ে। কয়েক মাস ক্লিনিকটি ঢিমেটালে পরিচালিত হলেও শেষ পর্যন্ত হোচট খেতে হয় পরিচালনা পর্ষদকে। ফলে মোটা অঙ্কের টাকায় লিজ দেয়া হয় হাসপাতালটি। যে কারণে মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে আখচাষিরা চিকিৎসা সেবা থেকে রয়েছে বঞ্চিত। ব্যবসায়ীভাবে পরিচালিত হচ্ছে মর্ডান ক্লিনিক, মুক্তি ক্লিনিক, শাপলা ক্লিনিক এবং মা ও শিশু হাসপাতাল। প্রতিটি ক্লিনিকেই রোগীদের কাছ থেকে ডাকাতি করার মতো হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে টাকা। রোগ নির্নয়ের জন্যই খরচা গুণতে হয় প্রচুর টাকা। চিকিৎসকের পরামর্শপত্রের জন্য যে যার মতো নিচ্ছেন টাকা। সেই সাথে পরীক্ষা-নিরীক্ষার বোঝা চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে মাথায়। সেক্ষত্রে অবশ্যই রোগীদের জন্য বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থা করেছে ক্লিনিকগুলোর মালিকরা। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ওষুধপত্রর কেনার জন্য দৌড়াতে হচ্ছে না দুরে কোথাও। প্রতিটি ক্লিনিকেই রয়েছে ডায়াগনস্টিক ও ফার্মেসি। যে কারণে অনেকটাই খেয়াল খুশি মতো রোগীদের পকেট কাটা সম্ভব হচ্ছে। প্রতিনিয়ত ঠকছে রোগী সাধারণ। যেন ভারতের জীবন মুখি শিল্পী নচিকতার সেই গানের কথা মতো দশায় পরিণত হয়েছে। “কশাইতো জবাই করে প্রকাশ্য দিবালোকে ডাক্তারের আছে ক্লিনিক ও চেম্বার”। কোনো ক্লিনিকেই নিয়মিত চিকিৎসক না থাকলেও সকাল ও বিকেলে চিকিৎসা সেবার নামে দোকান খুলে বসেন চিকিৎসকরা। গণহারে রোগীর চিকিৎসার নামে দেয়া হচ্ছে অপচিকিৎসা। কোনো কোনো চিকিৎসক পরামর্শ পত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ওষুধের নাম লিখে শেষ করতে পারেন না, যেন স্কুল কলেজের পরীক্ষার খাতার মতো অবস্থায় পরিণত হয়ে থাকে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ওষুধের পরিমাণ দেখেই রোগীদের রোগ যেন আরও বেড়ে যায়। দর্শনাসহ আশপাশ এলাকার মানুষগুলো ক্লিনিকগুলো ও চিকিৎসকসহ দালালচক্রের হাত থেকে পরিত্রাণ চেয়ে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. রওশন আরা বেগম বলেছেন, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। সে মোতাবেক গ্রহণ করা হবে যথাযথ ব্যবস্থা।