পাঁচ কারণে চালের দাম বেড়েছে

স্টাফ রিপোর্টার: পাঁচ কারণে চালের দাম বেড়েছে । এগুলো হচ্ছে-কৃত্রিম সঙ্কট তৈরিতে মিলারদের ধান মজুদকরণ, নিয়মিত বাজার মনিটরিং না হওয়া, মোটা চাল মিনিকেট বানিয়ে বিক্রি, চালের আমদানি হ্রাস পাওয়া এবং সর্বশেষ বৃষ্টির পানিতে হাওড়ের ধান নষ্ট হয়ে যাওয়া। গত এক বছরে পাইজাম, লতা, স্বর্ণা এবং চায়না ইরিখ্যাত মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৮-১০ টাকা। মিনিকেট, নাজিরশাইল এবং বাসমতি নামের উন্নতমানের চাল প্রতিকেজি ৪৮-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত এক বছর ধরে অস্থির চালের বাজার। মূল্য সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে গ্রাম পর্যায়ে ডিলারদের মাধ্যমে ১০ টাকা কেজি চাল বিক্রি করা হচ্ছে। শহরেও চালু আছে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খোলা বাজারে (ওএমএস) ট্রাকসেল কার্যক্রম। কিন্তু কোনো কিছুতেই বাগে আসছে না চালের দাম। ভাতে-মাছে বাঙালির কাছে চালের এই উচ্চমূল্য বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চালের দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে। কষ্টে আছে দেশের স্বল্প আয়ের মানুষ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চালের দাম বাড়লেও এর সুফল পায়নি ধান উৎপাদনকারী কৃষক। কারণ কৃষক পর্যায় থেকে ন্যায্যমূল্যের চেয়ে কম দামে ধান কিনে মজুদ করা হয়েছে। এখন মজুদকৃত ধানের দাম বাড়িয়ে চালের বাজার থেকে অতি মুনাফা করছেন মিলমালিকরা। এছাড়া এর সাথে জড়িত রয়েছে স্থানীয় দালাল ও ফড়িয়ারাও।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের অভাবে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্রের ‘আছর’ ভর করছে চালের বাজারে। আর এ কারণে দাম কমছে না। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতসহ বিশ্বের প্রধান ধান উৎপাদনকারী দেশে এখন চালের দাম নিম্নমুখী ধারায় রয়েছে। সরকারী সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, চায়না ইরি, লতা, বিনা-৭, বিআর-২৮, বিআর-৩৯, ৪৯, ৫১ এবং স্বর্ণাগুটি ও পাইজাম জাতীয় মোটা চাল এক বছর আগে প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছে ৩২-৩৪ টাকায়। আর এখন সেই একই চাল কিনতে ৪২-৪৬ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে একজন ভোক্তাকে। এক্ষেত্রে গত এক বছরে দাম বৃদ্ধির হার প্রায় ২৫ শতাংশ। এছাড়া ১০ শতাংশ দাম বেড়ে মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৪-৪৮ টাকা। আর নাজিরশাইল, বাসমতি ও মিনিকেটখ্যাত উন্নতমানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৬০ টাকায় এবং দাম বৃদ্ধির হার প্রায় ৬ শতাংশ। অর্থাৎ টিসিবির তথ্য বলছে, সাধারণ মানুষ খায় এ রকম চালের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে এক বছরে। খাদ্যে বিশেষ করে ধান-চালে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পর এ ধরনের উচ্চমূল্য কারও কাছে প্রত্যাশিত নয় বলে মনে করা হচ্ছে। তাই সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবে দ্রুত চালের দাম কমিয়ে আনতে বাস্তবসম্মত পদেক্ষপ নেয়ার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ইতোমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করেছে। কারণ খতিয়ে দেখতে চালের মিলমালিক, পাইকার, আমদানিকারক এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যবসায়ীদের সাথে দ্রুত বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া খাদ্য এবং কৃষি মন্ত্রণালয় থেকেও এ বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য মনিটরিং সেলের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, রমজান সামনে রেখে ভোগ্যপণ্যের আমদানি, মজুদ, মূল্য পরিস্থিতি এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। সব পণ্যের দাম মোটামুটি স্থিতিশীল থাকলেও চালের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়ে গেছে। কেন দাম বাড়ছে সে কারণ খতিয়ে দেখছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তিনি বলেন, চালের দাম বাড়ার পেছনে ইতোমধ্যে কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ধান ও চালের মজুদের বিষয়টি উঠে এসেছে। মিলাররা চালের দাম বাড়িয়ে দিতে ধান মজুদ করছেন। এ কারণে বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি হয়েছে। এছাড়া আমদানিতে ২৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ এবং মোটাচাল মিনিকেট করার ফলে এক ধরনের সঙ্কট তৈরি হয়েছে। আর এ কারণে মোটা চালের দাম বেড়ে যাচ্ছে।

চালের দাম বাড়লেও কৃষকের মুখে হাসি নেই: চালের দাম বাড়িয়ে সাধারণ ভোক্তার কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হলেও দেশের প্রান্তিক কৃষকের মুখে হাসি নেই। গোলায় ধান না থাকায় দাম বাড়ার কারণে সেই সুফল পাচ্ছেন না কৃষকরা। ধান এখন মিলারদের গুদামে। মরসুমের শেষ দিকে এসে ধান সরবরাহ কমে যাওয়ায় চালের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এখন বাজারে যেসব চাল বিক্রি হচ্ছে তার বেশির ভাগ হলো মজুদদার, মধ্যস্বত্বভোগী বড় বড় মিলার ও পাইকারি ব্যবসায়ীর। এছাড়া আমদানি কমে যাওয়া এবং সিন্ডিকেটের কারণে চালের দাম বাড়ছেই।

পাইকারি চাল ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দেশে বর্তমানে চালের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। তবুও চালকল মালিকরা কয়েক দফায় পণ্যটির দাম বাড়িয়েছেন। তারা বলছেন, অটোরাইস মিলারদের কাছে এখনও বিপুল পরিমাণ ধান-চাল মজুদ রয়েছে। ব্যাংক ঋণ নিয়ে বিপুল পরিমাণ ধান-চাল গুদামজাত করে রেখেছেন তারা। চালের বাজারে দর বৃদ্ধি বা পতন মূলত তাদের ওপরই নির্ভর করছে। ফলে মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করলে কিছুটা হলেও চালের দাম কমত বলে আশাবাদ সাধারণ ক্রেতাদের।

এ প্রসঙ্গে মেসার্স মিলন রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মো.দেলোয়ার হোসেন বলেন, মিলারদের কারণে চালের দাম বাড়ছে। মিল থেকে চাল আনতে পাইকারদের বেশি দাম দিতে হচ্ছে আর এর প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারে।

এদিকে সামনে বোরো মরসুম সামনে রেখেও মিলারদের তৎপরতা বেড়েছে। বোরো ধান সস্তায় কিনতে কৌশল আটছেন তারা। যদিও ইতোমধ্যে সরকার বোরো ধান সংগ্রহের জন্য মূল্য নির্ধারণ করেছেন। আশা করা হচ্ছে, সরকার নির্ধারিত মূল্য কার্যকর হলে মিলারদের অপতৎপরতা কিছুটা কমতে পারে। গতবারের বোরো ধান কাটা শেষ হতেই ধান মিলারদের কব্জায় চলে গেছে। তাই ইচ্ছামতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পায় তারা। আর তাই চালের বাজার অস্থিরতায় মিলারদের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

চাল ব্যবসায়ী নেতারা জানান, আমরা চালকল মালিকদের দিকে তাকিয়ে থাকি। তারা চালের যে দাম ঠিক করেন, আমরা সে দামেই চাল কিনে বিক্রি করি। চালের দাম বাড়া-কমা চালকল মালিকদের ওপর নির্ভর করে। তবে পাইকারি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ অস্বীকার করে চালকল মালিক সমিতির নেতা হানিফ শোয়েব বলেন, ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে সব ধরনের চালের ওপরই প্রভাব পড়েছে। এছাড়াও ভারত থেকে চাল আমদানিতে শুল্ক আরোপের ফলে বন্দর দিয়ে পণ্যটির আমদানি কিছুটা কমে গেছে। অধিক শুল্ক আরোপের কারণে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দেশটি থেকে পণ্য আমদানি প্রায় অর্ধেকে নেমেছে।

এদিকে স্থানীয় সংবাদদাতার মাধ্যমে জানা গেছে, দেশের অন্যতম বৃহৎ মোকাম পাবনার বাজারে দফায় দফায় বাড়ছে চালের দাম। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে বস্তাপ্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। অসাধু মজুদদাররা ধান মজুদ করে রাখায় বেড়েছে চালের দাম। পাবনার ঈশ্বরদীতে ছোট-বড় মিলিয়ে চালকল রয়েছে প্রায় ৭০০। এখানকার উৎপাদিত চাল বাজারজাত করা হয় রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে। কৃষকের গোলায় মজুদ ধান শেষের পথে উল্লেখ করে মিলমালিকরা বলছেন, এখন তাদের বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে মজুদদারদের কাছ থেকে। আর তাতে প্রভাব পড়ছে চালের ওপর। ফলে গত কয়েক মাস ধরে বাড়ছে চালের দাম। তবে মজুদদারদের কারসাজির পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের কোন নজরদারি না থাকায় চালের দাম বাড়ছে বলে অভিযোগ রয়েছে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব)। এ ব্যাপারে বাজারে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করার তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি। এছাড়া চালের বাজার সহনশীল রাখতে খাদ্য বিভাগের খোলা বাজারে চাল বিক্রি কার্যক্রম নিয়মিত চালু রাখার দাবি রয়েছে সাধারণ ভোক্তাদের।

মোটা চাল হয়ে যাচ্ছে মিনিকেট: অনেকটা লম্বা সাইজের চিকন যেই চাল মিনিকেট হিসেবে বিক্রি হয় তা উৎপাদন হয় মোটা চাল থেকেই। এ কারণে বাজারে মোটা চালের সঙ্কট তৈরি হয়েছে বলে মনে করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মরসুম শেষ হওয়ার কারণে এমনিতে ধানের সরবরাহ কমে গেছে। এরপর মোটা চাল হয়ে যাচ্ছে মিনিকেট। সব মিলিয়ে বাজারে মোটা চালের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, এক শ্রেণির চালকল মালিক মোটা চাল ছেঁটে সরু করে ‘মিনিকেট’ বলে বাজারজাত করে বিপুল পরিমাণ মুনাফা লুটে নিচ্ছে।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশে আগে নাজিরশাইল, পাইজাম ও বালাম ধানের চাষ হতো। এসব দেশি সরু ধানের চালের ব্যাপক চাহিদা ছিলো। বরিশালে বালামের সুনাম ছিলো সারা ভারত উপমহাদেশব্যাপী। কালের বিবর্তনে সকল সরু জাতের ধান চাষ উঠে যায়। সরু চালের সন্ধান করতে থাকে ক্রেতারা। এ সময় বাজারে কথিত মিনিকেটের আবির্ভাব ঘটে। ক্রেতারা লুফে নেয় এ সরু জাতের চাল। সুযোগ বুঝে এক শ্রেণির মিলমালিক মাজারি সরু বিআর-২৮, বিআর-২৯ ও বিআর-৩৯ জাতের ধান ছেঁটে ‘মিনিকেট’ বলে বাজারজাত করতে শুরু করে। বর্তমানে সারাদেশে চিকন চাল বলতে এখন ‘মিনিকেট’ই বোঝায়, যার দামও চড়া। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, যশোর, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা ও চুয়াডাঙ্গা জেলাতে কথিত মিনিকেট ধানের চাষ হয়। এর বাইরে দেশের অন্য কোন জেলায় এ ধরনের ধানের কোন অস্তিত্ব নেই বলে জানা গেছে।

আমদানিকৃত চালে ২৫ শতাংশ শুল্ক: সব ধরনের চাল আমদানি ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। মূলত ধানের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে দেশে ধানের দাম কিছুটা বাড়লেও আমদানি কমে গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন ২৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে আমদানি করার ফলে বাজারে চালের দাম বেড়ে যাচ্ছে। শুল্ক উঠিয়ে দেয়া হলে চালের দাম কমে আসবে বলে মনে করেন তারা। চাষীদের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে চলতি বাজেটে চাল আমদানির ওপর শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। চাল আমদানির ওপর বর্তমান ১০ শতাংশ শুল্কের স্থলে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। ওই সময় অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা বর্তমানে খাদ্যশস্য উৎপাদনে একটি উদ্বৃত্ত দেশ। সেই বিবেচনায় চাল আমদানির ওপর বর্তমান ১০ শতাংশ শুল্কের স্থলে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করছি।

এদিকে চালের দাম বাড়লেও এখনই শুল্ক কমানোর কোন চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে না বলে জানা গেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, কৃষকদের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে আমদানিকৃত চালের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এতে চাষীদের স্বার্থ সুরক্ষা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রীর এই ঘোষণায় ক্ষুব্ধ চাল ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের এই শুল্ক দিতে অনীহা রয়েছে। তাই তারা যেকোন মূল্যে এই শুল্ক উঠিয়ে দিতে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরিসহ চালের বাজার অস্থির করতে মাঠে রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টেও এ তথ্য উঠে এসেছে বলে জানা গেছে। শুধু তাই নয়, ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুল্ক প্রত্যাহার না হলে চালের দাম বাড়বেই। তবে ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে চায় সরকার। তাই আগামী বাজেটেও শুল্ক প্রত্যাহার করা হবে না। তবে এবারের চলতি বাজেটে শুল্ক বাড়ানো হলেও আগামী বাজেটে শুল্ক বৃদ্ধির কোন চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে না।

জানা গেছে, পাবনা, কুষ্টিয়া, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ ও সিলেটসহ দেশের অন্যান্য স্থানের ১৫-২০ জনের সিন্ডিকেট চক্রের কাছে জিম্মি দেশের চালের বাজার। চাল মজুদ, আমদানি, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং সরবরাহসহ সব ধরনের কাজ করে থাকে এ চক্রটি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং এবং কঠোর তদারকির মাধ্যমে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এছাড়া নেত্রকোনা, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জসহ দেশের হাওড় এলাকাগুলোতে বৃষ্টির পানিতে ধানক্ষেত তলিয়ে ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণেও ধানের মজুদ বাড়িয়ে দিয়েছেন মিলমালিকরা।

প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে চালের দাম কম: প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে দাম কম হলেও বাংলাদেশে চালের মূল্য বাড়ছে। চাল, ডাল ও পেঁয়াজের ক্ষেত্রে সাধারণত ভারতের বাজারের দিকে মনোযোগ রাখেন এদেশের ব্যবসায়ীরা। ভারতে এই তিনটি পণ্যের দাম বাড়লে বাংলাদেশেও বাড়ে। কিন্তু এবার চালের ক্ষেত্রে এই নিয়ম আর থাকেনি। ভারতে কমলেও এদেশের ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়ে যাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কমায় ভারতীয় চালের দাম কমেছে। গত সপ্তাহে ভারতের ৫ শতাংশ ভাঙা চালের দাম টনপ্রতি কমেছে তিন ডলার। এতে প্রতি টন চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৭৩ থেকে ৩৭৮ ডলার পর্যন্ত। বিশ্ববাজারে কয়েক সপ্তাহ ভারতীয় চালের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও বর্তমানে তা অনেক কমে গেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় চাল রফতানিকারক দেশ ভারত চলতি ২০১৬-১৭ মরসুমে ১০৮ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন টন চাল উৎপাদনের পূর্বাভাস দিয়েছে। অন্যদিকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) জানায়, ২০১৬ সালে ভারতের খাদ্যশস্য রফতানি ১০ শতাংশ কমে হয়েছে ১০ দশমিক ১ মিলিয়ন টন। ভারত মূলত আফ্রিকার দেশগুলোতে নন-বাসমতি চাল রফতানি করে এবং মধ্যপ্রাচ্যে প্রিমিয়ার বাসমতি চাল রফতানি করে।