মেহেরপুরে এক বছরে ১২২২ তালাক

 

স্টাফ রিপোর্টার: কন্যা সন্তান প্রসব, বাল্যবিয়ে, বাল্যবধূদের সংসারের দায়িত্ব পালনে অক্ষমতা, মাতৃত্বজ্ঞানের অভাব, স্বামী প্রবাসী ও মাদকাসক্ত, যৌতুক, নির্বুদ্ধিতাসহ বিভিন্ন কারণে মেহেরপুরে স্বামী-স্ত্রীদের মধ্যে তালাকের হার বেড়ে যাচ্ছে। এক বছরে বিবাহিতদের ৮৫ ভাগ পরিবারে সম্পর্কছেদের ঘটনা ঘটেছে। মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার জোড়পুকুরিয়া গ্রামের দিনমজুর মহসিন আলীর বড় মেয়ে সোনিয়া অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী থাকাকালে ১৩ বছর বয়সে বিয়ে হয়। তবে পেশায় কৃষক জামাতা রুহুল আমীন ছিলো সাবালক। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে নগদ ৪০ হাজার টাকা দেন দিনমজুর মহসিন। বিয়ের তিন বছরের মাথায় ১৬ বছর বয়সে এক সন্তানের মা হয় সোনিয়া। অপ্রাপ্ত বয়সে মা হওয়ার কারণে রোগ-শোক তাকে পেয়ে বসে। সন্তানের যত্নআত্তি করতে না পারার কারণে তাদের সংসারে নেমে আসে অশান্তি। পারিবারিক অশান্তি চরম পর্যায়ে গেলে গ্রামের মাতবরগণ সামাজিকভাবে ৬০ হাজার টাকায় তাদের তালাক সম্পন্ন করেন। বাল্যবিয়ের কারণে সোনিয়ার বাবা আইনের আশ্রয় নিতে পারেননি। এমন অনেক সোনিয়া অপ্রাপ্ত বয়সে তালাক হচ্ছে। যারা আইনের আশ্রয় নিতে পারছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একই উপজেলার গাড়াডোব গ্রামের এক গৃহবধূ পরপর দুবার কন্যাসন্তানের জন্ম দেয়ার কারণে স্বামী, শ্বশুরসহ পরিবারের লোকজনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন ছিলো নিত্যসাথী। ওই গৃহবধূ নির্যাতন সইতে না পেরে গত রোববার কীটনাশক পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। সে এখন মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাল্যবিয়েমুক্ত মেহেরপুর জেলায় সরকারি হিসেবে ১ হাজার ৪৭৬টি বিয়ের বিপরীতে ১ হাজার ২২২টি তালাকের ঘটনা ঘটেছে। এই পরিসংখ্যান ফেব্রুয়ারি ২০১৬ থেকে ফেব্রুয়ারি ১৭ পর্যন্ত। এই তালাকের পরিসংখ্যান ভাবিয়ে তুলেছে সমাজ সচেতন মানুষকে। মেহেরপুর সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ও আবদুল্লাহ আল আমিন বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রবাসীদের মধ্যে তালাক বেশি হচ্ছে। প্রযুক্তি আসক্ত ফেসবুক, আকাশসংস্কৃতি বিপথগামী করছে যুবক-যুবতী ও নববধূদের। তথাকথিত হিজাব-বোরখার আড়ালে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে উঠছে। ভোগবাদিতা বিষয়টি জানতে পেরে প্রবাসী স্বামী তাদের স্ত্রীদের সাথে সম্পর্কছেদ করছে।