গমের পর এবার বোরো ধানেও ব্লাস্ট ॥ শুকিয়ে যাচ্ছে শীষ

চুয়াডাঙ্গা সদরের বিভিন্ন মাঠের ধানের আবাদ করে কৃষকদের মাথায় হাত

নজরুল ইসলাম: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বিভিন্ন মাঠে এবার বোরো ধানে ব্যাপক আকারে ছত্রাকজনিত ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। থোড়মুখি ধান শুকিয়ে যাচ্ছে। থোড় বের হওয়া ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে। জমির ধান নষ্ট হওয়ায় কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। আগাম ব্যবস্থা নেয়া হলে ক্ষতির পরিমাণ কম হতো। কিন্তু কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মকর্তারা এর ব্যবস্থা নেননি এবং যথাসময়ে মাঠেও যাননি বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে চাষিদের। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকৃতির ওপর কারো হাত নেই। তাই মাঝে হঠাৎ শীত ও গরম পড়ার কারণে ধানে রোগটি দেখা দেয়। যা ধানের ফলনে প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা থেকেই কৃষি বিভাগ তৎপরতা শুরু করেছে।
চলতি বোরো মরসুমে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় বোরো ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছিলো ৫ হাজার ২৫০ হেক্টর জমি। কিন্তু ধানচাষ হয়েছে ৫ হাজার ৩৯০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চাইতে বেশি রোপণ হয়েছে ১৪০ হেক্টর জমি। আর ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ২৫৫ মেট্টিক টন। হঠাৎ করে ছত্রাকজাতীয় নেক ব্লাস্ট রোগের সংক্রামণে ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে উপজেলার বেগমপুর ও নেহালপুর ইউনিয়নের কুন্দিপুর, দোস্ত, সুবদপুর, কৃষ্ণপুর, বোয়ালমারী, কোটালী. হিজলগাড়ি, নেহালপুর, যদুপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের মাঠের জমিতে ধানের থোড় (শীষ) শুকিয়ে যাচ্ছে। দুর থেকে দেখে মনে হচ্ছে ধান পেকে গেছে। নিকটে গিয়ে ধানের শীষ হাতে নিয়ে দেখা গেছে ধান সব চিটা। দোস্ত গ্রামের চাষি ইব্রাহীম হোসেন, সাইদুর ব্যাপারী, মনুমিয়া, হানিফ শিকদার, হালিম শিকদার, জয়নাল ব্যাপারী, রবিউল ইসলাম, আমির হোসেন, ইসমাইল হোসেন, তোতা মিয়া, বোরহান মৌলভী, নুর ইসলাম, সুরুজসহ অনেকেই বললেন, বোরো মরসুমে ধানচাষ করি পরিবারের বছরের খাদ্য মজুদ করা এবং বেচা বিক্রি করে ঋণশোধ দেয়ার জন্য। আমাদের সব শেষ। ধানের জমিতে গিয়ে দেখি শীষের নিচের অংশে কালো হয়ে পচে গেছে। আর ওপরের শীষ শুকিয়ে গেছে। সম্পূর্ণ শীষ চিটে হয়ে গেছে। ধান না হলে আমরা মাঠে মারা যাবো। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অভিযোগ, কৃষকের ধান রোগে আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হলেও কৃষি বিভাগের কাউকে সঠিক সময়ে পাওয়া যায় না। তারা কোনো খোঁজখবরও নেয়নি। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার উপক্রম শ শ একর জমির ধান। আগাম প্রচার-প্রচারণা এবং পরামর্শ থাকলে হয়তো এতোটা ক্ষতি হতো না আমাদের। ফলে বছরের বাকি দিনগুলো পরিবারের সদস্যদের খাদ্য উৎপাদন যেমন ঘাটতি হবে তেমনি চাষাবাদ করতে যে ঋণ হয়েছে তা পরিশোধ করাও কষ্টসাধ্য হবে। কৃষকদের অভিযোগ অস্বীকর করে দায়িত্বরত কৃষি অফিসাররা বলেন, চাষিদেরকে আগে-ভাগেই ওষুধ দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছিলো। যারা গ্রহণ করেছে তাদের খুব একটা ক্ষতি হয়নি।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি অফিসার তালহা জুবায়ের বলেন, হঠাৎ তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় ধানে ছত্রাকজনিত নেক ব্লাস্ট সংক্রামণ দেখা দিয়েছে। কৃষকদের আগে থেকেই সতর্ক করা হয়েছিলো। অনেকে পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ প্রয়োগ করেননি। ছত্রাকের আক্রমণ থেকে রক্ষায় ধানক্ষেতে নাটিভো, ফিলিয়া, ট্রোপার, প্রভিফেন জাতীয় ছত্রাকনাশক ওষুধ দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছিলো বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক নির্মল কুমার দে জানান, মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে রাতে ঠা-া ও দিনে গরম আবহাওয়া ছিলো। ওই সময় তাপমাত্রার পার্থক্য ছিলো বেশ। আবহাওয়ার এই তারতম্যের কারণে ওই সময়ে বের হওয়া ধানের শীষ ব্লাস্টরোগে আক্রান্ত হয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের আগাম সতর্ক করা হয়েছিলো। যারা পরামর্শমতো খেতে ওষুধ ব্যবহার করেছেন তাদের সমস্যা হয়নি। তিনি আরও বলেন, আমরা কৃষকদের আগাম সতর্ক, সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ, মসজিদে মাইকিং করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। নতুন করে আক্রান্ত না হলে ফলন বিপর্যয় হবে না বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।