কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানোর পর ১২ শিক্ষার্থী অসুস্থ : শিক্ষকদের ঘরে আটকে ঝুলিয়ে দেয়া হয় তালা

চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার নতিডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের অসুস্থতার খবরে ক্ষুব্ধ অভিভাবকমহল

 

স্টাফ রিপোর্টার: প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কৃমিনাশক ট্যাবলেট সেবন করানো কর্মসূচি সরকারের। এ কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে গতকাল চুয়ডাঙ্গা আলমডাঙ্গার নতিডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ সহকারী শিক্ষকদের জনরোষে পড়তে হয়েছে। বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে অবরুদ্ধ থাকতে হয়েছে প্রায় এক ঘণ্টা। সরকারের সরবরাহকৃত কৃমিনাশক ট্যাবলে খাওয়ানোর পর বিদালয়ের ১২ শিশু শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে অভিভাবকসহ স্থানীয় সাধারণ মানুষ বিদ্যালয়ে চড়াও হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে শেষ পর্যন্ত সেখানে উপজেলা শিক্ষা অফিসারসহ পদস্থ অনেকেরই যেতে হয়েছে।

গত কয়েকদিন ধরেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের কৃমিনাশক সেবন করানো হচ্ছে। কুষ্টিয়া ও ঝিনাইহের পর গতপরশু চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গায় বিদ্যালয়ের শতাধীক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। উপজেলা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে নেয়া হয়। উত্তেজনা দানা বাধলেও পরিস্থিতি পরশু তেমন বেসামাল না হলেও গতকাল আলমডাঙ্গার নতিডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দীর্ঘসময় শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে। চিকিৎসকদের অভিমত, কৃমিনাশক ট্যাবলেটে ক্ষতি নেই। গুরুতর অসুস্থ হওয়ারও ঝুঁকি নেই। এরপরও তীব্র গরমে অনেকে খালি পেটে খেয়ে বমিসহ মাথা ঘোরায় আক্রন্ত হচ্ছে। এরপরই তা গণহিস্ট্রোরিয়ায় রূপ নিচ্ছে। তাতেই অভিভাবকদের মধ্যে ছড়াচ্ছে আতঙ্ক। অবশ্য অভিভাবকদের অভিমত ভিন্ন। অসুস্থ হবে কেন? প্রশ্ন তুলেই উত্তেজিত হচ্ছেন তারা।

গতকাল সকাল ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার নতিডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সহকারী শিক্ষকদের কৃমিনাশক ছাত্রছাত্রীদের খেতে দেয়ার জন্য বলেন। কৃমিনাশক সেবনে অসুস্থতার খবরে সহকারী কয়েক শিক্ষক কিছুটা আপত্তিও করেন। যেহেতু সরকারি সিদ্ধান্ত, সরকারি কর্মসূচি সেহেতু তা পালনে বদ্ধ পরিকর প্রধান শিক্ষক। তিনি বলেন, শিশু শিক্ষার্থীদের স্বার্থেই তো কৃমিনাশক সেবনের জন্য সরকারি উদ্যোগ। সহকারী শিক্ষকমণ্ডলী ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে কৃমিনাশক ট্যাবলেট তুলে দেন। সেবন করার কিছুক্ষণ পরই একে একে ১২ ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। খবর ছড়িয়ে পড়তেই অভিভাকদের একাংশ বিদ্যালয়ে হাজির হন। উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। শিক্ষকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণও শুরু করেন। একপর্যায়ে অফিসকক্ষে শিক্ষকদের তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। বলা হয়, এলাকার একজন ছেলেমেয়েরও যদি ক্ষতি হয় কোনো শিক্ষককে ছাড়া হবে না। অবশ্য এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ইউপি মেম্বার ওবাইদুর রহমান বলেন, শিক্ষকদের নিরাপত্তার জন্যই কক্ষে তালা মেরে রাখা হয়।

খবর পেয়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন উপজেলা শিক্ষা অফিসার মহিউদ্দিন। তিনি এ ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এতে শিক্ষকদের তো কোনো দোষ নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাসুদ রানা বলেন, কৃমিনাশক ট্যাবলেট খেয়ে সামান্য মাথাঘোরা ঘোরা বা বমি বমি হতে পারে। কিন্তু এছাড়া কিছু হওয়ার কথা নয়। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

দামুড়হুদা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদায় কৃমিনাশক ট্যাবলেট খেয়ে আবারও দু শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় জয়রামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দু শিক্ষার্থী কৃমিনাশক ট্যাবলেট খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (চিৎলা হাসপাতালে) নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। অসুস্থ ওই দু শিক্ষার্থীকে চিকিৎসা দেয়ার পর বিকেলে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। এছাড়া গত রোববার কৃমিনাশক ট্যাবলেট খেয়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৮৫ জনের মধ্যে ৭৯ জন ওই দিন বিকেলে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যায়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা ৬ জন শিক্ষার্থীও সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হয়ে গতকাল সোমবার সকালে বাড়ি ফিরে গেছে।

উল্লেখ্য, গত রোববার সকালে কৃমিনাশক ট্যাবলেট খেয়ে কার্পাসডাঙ্গা হাদিকাতুল উলুম বালিকা দাখিল মাদরাসার ৬৫, বড়বলদিয়া হাফিজিয়া মাদরাসার ৪, গোবিন্দহুদা ব্র্যাক স্কুলের ৫ জন, চন্দ্রবাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ এবং পীরপুরকুল্লাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ এই ৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সর্বমোট ৮৫ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদেরকে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করা হয়।

দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডা. আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল জানান, তাপমাত্রা বেশি থাকার পাশাপাশি যাদের কৃমির পরিমাণ বেশি মূলত তারাই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ার পর কিছুক্ষণ ঠাণ্ডা জায়গায় বিশ্রামে রাখলে এমনিতেই ঠিক হয়ে যায়। তারপরও অসুস্থদের স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আগে শুধুমাত্র প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানো হতো। এবার সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরদেরও কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে।