বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলোর শিক্ষার মান

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কয়েকশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন বহুদিনের। শিক্ষার মান প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার প্রধান কারণ- এইসব বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে পর্যাপ্ত ও যোগ্য শিক্ষক নেই। নেই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, লাইব্রেরি ও ল্যাবরেটরি। এইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ক্লাস হয় না। ক্লাস না করেও অনেকে দ্বিতীয় শ্রেণির সনদ নিয়ে বের হয়েছেন এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম নয়। অনার্স চালু করার পর দুই যুগেও সরকার বা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রতিনিধি এই ধরনের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেননি, যা দুঃখজনক। অনেক কলেজে দুইশ শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক আছেন মাত্র তিনজন। তাদের আবার অধিকাংশই এমপিওভুক্ত নন। ফলে যেসব কলেজের নিজস্ব আয় নেই, সেইসব কলেজের শিক্ষকরা নিয়মিত বেতন-ভাতা পান না। এতে ভালো ও যোগ্য শিক্ষক এইসব কলেজে চাকরি করতে যান না। অন্যদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট নিয়ে বহু লেখালেখির পর এখন এই ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসেছে। কিন্তু সেশনজট কমাতে গিয়ে সিলেবাসের অর্ধেকটা শেষ না করেই কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। এই পরীক্ষা আবার পিছিয়ে দেয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। অর্থাৎ এইরকম বহুমুখী সমস্যায় জর্জরিত এইসব গুরুত্বপূর্ণ কলেজ।

বর্তমানে দেশে ৬৮৫টি অনার্স ও মাস্টার্স কলেজ রয়েছে। গত এক দশকে দ্রুত বেড়েছে এর সংখ্যা। ২০০৫ সালে দেশে বেসরকারি অনার্স কলেজের সংখ্যা ছিলো মাত্র ২০টি। ২০১৫ সালে তা দাঁড়ায় ৩৪৩টিতে। অনুরূপভাবে এই সময়ে সরকারি কলেজের সংখ্যা ৪১ এর স্থলে হয়েছে ১০২টি। ২০০৫ সালে বেসরকারি মাস্টার্স কলেজের সংখ্যা ছিলো ২৮টি। ১০ বছর পর তা ৪৩টিতে গিয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু অনার্স ও মাস্টার্স কলেজের সংখ্যা যে হারে বেড়েছে, সেই হারে অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বাড়েনি। আর এই ধরনের সুবিধা ছাড়া কেন সাধারণ কলেজগুলোতে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু করা হলো, তাও একটি বড় প্রশ্ন। এই ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, স্থানীয়দের চাপেই গ্রামের কলেজগুলোতে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালুর অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কিন্তু এইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সমস্যাগুলোর সমাধান না করলে উচ্চশিক্ষার মান নেমে যেতে বাধ্য।

উচ্চশিক্ষা বিস্তারে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। বিভিন্ন নামকরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট কমানোসহ নানামুখী চাপ কমাতে ১৯৯২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় যার শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০ লক্ষাধিক। কিন্তু অ্যাফিলিয়েটেড কলেজগুলোর দেখভালের ক্ষেত্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি বললেই চলে। ফলে প্রথম থেকেই পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম এই বিশ্ববিদ্যালয়টি তার অধিভুক্ত কলেজগুলোর শিক্ষার মান নিশ্চিত করিতে পারেনি। অন্যদিকে কলেজগুলোতে শিক্ষক সংকটের কথা বলা হচ্ছে। অথচ শিক্ষক নিয়োগে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ক্ষমতা নেই, যেমন অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে। এই ক্ষমতা এখন ন্যস্ত পিএসসির নিকট। অর্থাৎ শুধু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেও এককভাবে দোষ দিয়ে লাভ নেই। আশার কথা হলো- এইসব কলেজের অবকাঠামো উন্নয়নে ৫০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করছে সরকার। এটি যথারীতি বাস্তবায়িত হলে অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে। একই সাথে শিক্ষক নিয়োগ, বদলি ইত্যাদি ক্ষেত্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতায়ন প্রয়োজন। এর ওপর চাপ কমাতে যেমন ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সাতটি কলেজকে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তেমনি বড় বড় বিভাগের বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলোকেও সংশ্লিষ্ট খ্যাতনামা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেয়া যেতে পারে।