যথাযথ বাস্তবায়নই হলো মূল কথা

বিশেষ ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রেখে ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৭’র খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ আইনে সাধারণ অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে অষ্টম শ্রেণি পাস হওয়ার পাশাপাশি মহিলা সিটে পুরুষ যাত্রী বসা, গাড়ি চালানোর সময় মোবাইলফোনে কথা বলা, ফুটপাথ দিয়ে মোটরসাইকেল চালানোসহ বেশ কিছু অপরাধের জন্য জেল-জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে আইনটির অনুমোদন দেয়া হয়। এ আইনের অনুমোদনের বিষয়টি অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং যথার্থ।

আইনের অনুমোদন কিংবা প্রণয়নই শেষ কথা নয়, এর যথাযথ বাস্তবায়নই হলো মূল কথা। দেশে সড়ক-মহাসড়কে মৃত্যু-মিছিল থামাতে কিংবা হতাহতের ব্যাপকতা হ্রাসে সড়ক ব্যবস্থাপনার উন্নতি ঘটিয়ে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতেই হবে। বিদ্যমান সড়ক ব্যবস্থাপনা দুর্বল এবং একই সাথে ত্রুটিপূর্ণও। সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি পরিবহন খাতের নৈরাজ্য নিরসনে আইনানুগ কঠোর অবস্থানের বিকল্প নেই। সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের ব্যাপকতা হ্রাস করা যাচ্ছে না কিছুতেই। বলতে গেলে প্রায় নিত্য দেশের সড়ক-মহাসড়কে মর্মন্তুদ চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর বহুমুখী বিরূপ প্রভাব ক্রমেই প্রকট থেকে হয়ে উঠছে প্রকটতর। অথচ জনস্বার্থ ও জননিরাপত্তা সংক্রান্ত এতো বড় বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের কাছে তেমন যেন গুরুত্বই পাচ্ছে না। বিদ্যমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে সরকারি পদক্ষেপের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। সড়ক-মহাসড়কে যে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি পরিলক্ষিত হচ্ছে এবং অদক্ষ-অযোগ্য-স্বেচ্ছাচারী পরিবহনে সংশ্লিষ্টদের কারণে মানুষের জীবন যেভাবে বিপথ-বিপর্যস্ত হচ্ছে তা কোনোভাবেই হতে পারে না। এর আশু কঠোর প্রতিকার জরুরি। স্বেচ্ছাচারিতার লাগাম টেনে ধরতে হবে নির্মোহ অবস্থান নিয়ে।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন চলছে দীর্ঘদিন থেকে। ২০০৩ সালে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস ঘোষণার এতো বছর পরও কেন সড়ক দুর্ঘটনার হার ক্রমেই বেড়ে চলেছে এর কারণ অজানা নয়। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে হলে এই কারণগুলোর প্রতিকারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। সড়কে যাতে ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন চলতে না পারে, অদক্ষ চালক যাতে গাড়ি চালাতে না পারে, ট্রাফিক আইনের যাতে লঙ্ঘন না ঘটে এসব বিষয় নিশ্চিত করার দায়-দায়িত্ব যাদের তাদের অনেকেরই দুর্নীতি ও গাফিলতির বিষয়টিও স্পষ্ট। তাদের ব্যাপারে ইতোমধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী নিজেও একাধিকবার কথা বলেছেন। দুর্নীতিরোধে তার চেষ্টাও স্পষ্টতই পরিলক্ষিত হয়েছে। কিন্তু তারপরও কাঙ্ক্ষিত ফল লাভ সম্ভব হয়নি।

মানুষের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়ে সড়ক পরিবহন সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা-নির্বিকারত্ব কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত করা এবং আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন অত্যন্ত সঙ্গত প্রত্যাশা। প্রতিদিন অপঘাতে-অকাল মৃত্যু মানুষের মনস্তত্ত্বের ওপর যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে এর নিরসন জরুরি। পরিবহন সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়মবিধি ও শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। যে বা যারা এর ব্যত্যয় ঘটাবেন তার বা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে সড়ক অচল করে দেয়ার মতো অশুভ কর্মকাণ্ডে যারা লিপ্ত হবেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নিতে হবে কালক্ষেপণ না করে। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে কেউ কেউ স্বেচ্ছাচারিতা চালাতেই থাকবেন আর এর কোনো প্রতিকার হবে না তা তো হতে পারে না।