স্টাফ রিপোর্টার: জেল-জরিমানার বিধান রেখে দেশে প্রথমবারের মতো সড়ক পরিবহন আইন হতে যাচ্ছে। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভায় এই আইনের খসড়া অনুমোদন করা হয়েছে। এতে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে মোটরযান চালকদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি এবং বয়স ন্যূনতম ১৮ বছর ও পেশাদারের জন্য ২১ বছর রাখা হয়েছে। চালকের সহকারীর যোগ্যতা হবে পঞ্চম শ্রেণি পাস। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও গণপরিবহনে শৃংখলা রক্ষার জন্য প্রণীত এই আইনে শাস্তি দেওয়া যাবে দণ্ডবিধির অধীনে। ভারী যানবাহন চালকের যোগ্যতা এবং ফুটপাতে মোটরসাইকেল চালালে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। ফিটনেস না থাকা মোটরযান চালালে গাড়ির মালিকের শাস্তি সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা। আইনে দণ্ডবিধির সুনির্দিষ্ট ধারার উল্লেখ না থাকলেও বিধিতে সড়ক সংক্রান্ত দুই ধরনের শাস্তির বিধান রয়েছে। দুর্ঘটনায় হত্যা না হলে ৩০৪ ধারা প্রযোজ্য হবে। এক্ষেত্রে শাস্তি যাবজ্জীবন। বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা হলে ৩০৪-এর (বি) অনুযায়ী ৩ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন। মন্ত্রিসভার সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও সংশ্লিষ্ট সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সড়ক পরিবহন আইন পাস করা নিয়ে দীর্ঘ বিতর্ক হয়। কেউ কেউ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করার পক্ষে মত রেখে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পণ্যপরিবহনে অতিরিক্ত চেসিস, অ্যাঙ্গেল সবকিছু ইলেকট্রিক করাত ব্যবহার করে কেটে ফেলার নির্দেশ দেন। মন্ত্রিসভায় বাংলাদেশ মত্স্য ও গবেষণা ইনস্টিটিউট আইন ও মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট সংশোধিত আইনের নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রস্তাবিত আইনে গাড়ি চালানোর সময় চালকদের মোবাইলফোন ব্যবহারে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এর শাস্তি সর্বোচ্চ এক মাসের কারাদণ্ড বা ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ড। পরোয়ানা ছাড়াই ১৪ ধরনের অপরাধে অভিযুক্তকে গ্রেফতারের সুযোগ রয়েছে আইনে। খসড়া আইন অনুযায়ী, সড়কের ফুটপাতে কোনো ধরনের মোটরযান চালানো যাবে না। আইন ভঙ্গের দায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড বা ৩৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে ছয় মাস বা এর বেশি কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা বা এর বেশি জরিমানার মতো অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশ বিনা পরোয়ানায় অপরাধী গ্রেফতার করতে পারবে। লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোর অভিযোগে সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডের বিধান রয়েছে। চালকের সহকারীর লাইসেন্স না থাকলে এক মাসের কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা হবে। জাল লাইসেন্স ব্যবহার করলে সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ড বা তিন লাখ টাকা জরিমানা করা যাবে। গাড়ি ওজনসীমা অতিক্রম করলে সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ড বা ৩ লাখ টাকা জরিমানার বিধান করা হয়েছে। এখানে মালিক ও ড্রাইভার দুই পক্ষকেই অভিযুক্ত করা যাবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে মানুষ আহত বা নিহত হলে তা দণ্ডবিধি অনুযায়ী শাস্তির বিধান রয়েছে। বেপরোয়া গাড়ি চালানো, গাড়ি পাল্লা দেয়ার কারণে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ৩ বছরের কারাদণ্ড বা ২৫ লাখ টাকা জরিমানা হবে। বেপরোয়া গাড়ি চালানো এবং এতে দুর্ঘটনা না ঘটলেও ২ বছরের কারাদণ্ড বা ২ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। মদ বা নেশাদ্রব্য পান করে গাড়ি চালানো বা মোটর শ্রমিকদের গাড়িতে অবস্থান করা, হেল্পারকে দিয়ে গাড়ি চালানো, সড়ক বা মহাসড়কে নির্ধারিত অভিমুখ ছাড়া বিপরীত দিক থেকে গাড়ি চালানো, সড়ক বা মহাসড়কের নির্ধারিত স্থান ছাড়া অন্য কোনো স্থানে বা রং সাইডে মোটরযান থামিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে তিন মাস কারাদণ্ড বা ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা হবে। মোটরসাইকেলে চালক ছাড়া একজনের বেশি যাত্রী বহন, মোটরসাইকেলের চালক ও যাত্রীর হেলমেট ব্যবহার না করা, চলন্ত অবস্থায় চালক বা কন্ডাক্টার কোনো যাত্রীকে গাড়িতে ওঠানো বা নামানো, প্রতিবন্ধীদের জন্য অনুকূল সুযোগ সুবিধা না রাখা, ঝুঁকিপূর্ণভাবে গাড়িতে কোনো যাত্রী বা পণ্য বহন করা যাবে না, কোনো সড়ক বা মহাসড়কে গাড়ি মেরামতের জন্য যন্ত্রাংশ ও মালামাল রেখে যানবাহন বা পথচারী চলাচলে বাধা সৃষ্টি করলেও একই শাস্তি পেতে হবে। খসড়া আইনে সাধারণ নির্দেশাবলী নামে একটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, এখানে ১৪টি অনিয়মের জন্য সর্বোচ্চ ৩ মাস কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ১১টি অনুশাসন না মানলে সর্বোচ্চ এক মাসের কারাদণ্ড বা ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ড পেতে হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পরিবহন খাত এখন জাতীয় ও আর্ন্তজাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আঞ্চলিক যোগাযোগ ছাড়াও আন্তর্জাতিক অনেক বিষয় এখন পরিবহনে যুক্ত। এ জন্য সময়ের ধারাবাহিকতায় যে পরিবর্তন হয়েছে সেগুলো আইনে নিয়ে আনা হয়েছে।