মাথাভাঙ্গা মনিটর: লন্ডনে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে দুটি সন্ত্রাসী হামলায় এক পুলিশ সদস্যসহ তিনজন এবং পুলিশের গুলিতে হামলাকারী নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এর মধ্যে পার্লামেন্ট ভবন ওয়েস্টমিনস্টার প্যালেসের কাছের সেতুতে গাড়িচাপা দিয়ে পথচারী নারীসহ দুজনকে হত্যা ও অন্তত ২০ জনকে আহত করে হামলাকারী। এর পরপরই ওয়েস্টমিনস্টার চত্বরে ঢুকে ছুরি মেরে এক পুলিশ সদস্যকে হত্যার পর হামলাকারীকেও গুলি করে হত্যা করেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। পার্লামেন্ট ভবনের কাছে ওয়েস্টমিনস্টার সেতুতে ঘটে গাড়ি দুর্ঘটনাটি; আর ওয়েস্টমিনস্টার প্যালেসের প্রাঙ্গণে ছুরি নিয়ে চড়াও ব্যক্তিকে ধাওয়া করে গুলি করে নিরাপত্তা বাহিনী। দুটি ঘটনার যোগসূত্র এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। ওই ব্যক্তি কি গাড়িটি থেকে নেমেই পুলিশের ওপর চড়াও হয়েছিলেন কি-না, তাও জানা যায়নি।
তবে লন্ডন মেট্রোপলিটান পুলিশ এক বিবৃতিতে বলেছে, কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে রয়েছেন। অন্য কিছু না জানা পর্যন্ত আমরা এটাকে সন্ত্রাসী ঘটনা হিসেবেই দেখছি। একটি শিরোনামে ঘটনাটি লেখা হয়েছে সন্ত্রাসী ঘটনা; ‘হামলা’; ‘গাড়িহামলা, গুলি, ছুরিকাঘাত’। তবে পুরো ঘটনা স্পষ্ট করতে পারেনি কেউই। হামলাকারী একাধিক বলে খবর ছড়ালেও লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার মার্ক রোলে সাংবাদিকদের বলেছেন, হামলাকারী একজনই ছিলো। সম্ভবত সে মারা গেছে। এই ঘটনায় মোট চারজন নিহত এবং ২০ জন আহত হয়েছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। ঘটনার সময় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে পার্লামেন্ট ভবনেই ছিলেন; তাকে নিরাপদে সরিয়ে আনা হয় বলে তার মুখপাত্র জানিয়েছেন। ঘটনার পরপরই পার্লামেন্ট অধিবেশন মুলতবি করা হয়। বিকেলে পার্লামেন্টে অধিবেশন চলার সময় হঠাৎ বিকট একটি শব্দে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এর পরক্ষণেই কয়েকটি গুলির শব্দ পাওয়ার কথা পার্লামেন্ট সদস্য ও কর্তব্যরত সাংবাদিকরা টুইটারে জানালে সাথে সাথে তা গণমাধ্যমের শিরোনামে চলে আসে। ধারণা করা হচ্ছে, বিকট শব্দটি হতে পারে সেতুর কাছে রেলিংয়ে গাড়িটির ধাক্কা। আর এর পরপরই ছুরি হাতে চড়াও ব্যক্তিকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের করা গুলির শব্দ শুনতে পান সবাই। এই ঘটনায় নিহতদের মধ্যে একজন নারীর কথা জানিয়েছে স্কাই নিউজ, যিনি গাড়ির ধাক্কায় নিহত হন। একজন পুলিশের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে একটি সংবাদমাধ্যম, যার মৃত্যু ঘটে ছুরিকাঘাতে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ছুরিহাতে একজন পুলিশের ওপর চড়াও হলে তাকে গুলি করা হয়। ছুরি হাতে এক ব্যক্তিকে প্রাসাদের প্রাঙ্গণে দৌড়াতে দেখা যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানিয়েছে বিবিসিও। তার পেছনে তখন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ছুটছিলেন। হাউস অব কমন্সের নেতা ডেভিড লিডিংটন জানান, পুলিশের ওপর হামলাকারী ওই ব্যক্তিকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা গুলি করেছে। এক সাংবাদিক বলেন, হঠাৎ বিকট শব্দের পর তিনি পার্লামেন্ট ভবন প্রাঙ্গণে দুজনকে পড়ে থাকতে দেখেন। ধারণা করা হচ্ছে, ছুরিকাঘাতের পর পুলিশ সদস্য এবং গুলিবিদ্ধ হামলাকারীকে পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। নিহত ব্যক্তি কে, তিনি কী কারণে চড়াও হয়েছিলেন পুলিশের ওপর- সে বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানা যায়নি। সাংবাদিক কোয়েন্টিন লেটস বলেন, হামলাকারী খোলা গেট দিয়ে ঢুকে পড়েন, তারপর পুলিশের উপর চড়াও হয়েছিলেন। একজন পুলিশ সদস্য লুটিয়ে পড়েন। তারপর হামলাকারী দৌড়াতে থাকে এমপিরা যে গেট দিয়ে পার্লামেন্টে ঢোকেন, সে দিকে। ২০ গজের মতো দৌঁড়ানোর পর তাকে শাদা পোশাকে থাকা দুই নিরাপত্তার গুলিতে তিনি পড়ে যান। এক আলোকচিত্রী বলেছেন, এই ঘটনায় ডজনখানেক ব্যক্তিকে আহত অবস্থায় দেখেছেন তিনি। তার তোলা ছবিতে কয়েকজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়; এর মধ্যে এক নারী গাড়ির নিচে চাপা পড়েন। আহতদের মধ্যে ফ্রান্সের কয়েকটি স্কুলশিশুও রয়েছে। আহতদের যে ছবি গণমাধ্যমে এসেছে, তাদের রক্তাক্ত অবস্থায় সড়কে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। যা দেখে মনে হচ্ছে, তারা গাড়িটির ধাক্কায় জখম হন। সাংবাদিক অ্যালান প্যারি বলেন, সেতুর রেলিংয়ে একটি গাড়ি আঘাত হানে, সেখানে একজন পথচারী অথবা সাইকেল আরোহীকে পড়ে থাকতে দেখেন তিনি।
পার্লামেন্ট ভবনে অবস্থানরত এক সাংবাদিক বলেন, ফটকের ভেতরে আহত দুজনকে চিকিৎসা দিতে দেখেছেন তিনি। ঘটনার সময় সেতুর ওপর বাসে থাকা এক পর্যটক বলেন, আমি দেখলাম একটি গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেতুর পাশে পথচারীদের ওপর উঠে যাচ্ছে। বেশ কয়েকজন লুটিয়ে পড়ে তখন। অন্তত ১০ জনকে আমি দেখেছি। হামলার পর ওই এলাকায় সড়ক বন্ধ করে দেয় পুলিশ। সরিয়ে নেয়া হয় অন্যদের। লন্ডনের ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জানানো হয়েছে বলে তার মুখপাত্র জানিয়েছেন। তবে এ নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ট্রাম্পের কোনো বক্তব্য আসেনি।