ব্লাঙ্ক চেকের ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার চক্রান্ত

গাংনীতে সেই মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভের অপতৎপরতা

 

মাজেদুল হক মানিক: মেহেরপুর গাংনীতে মাল্টিপারপাস কেক্রিড কো-অপারেটিভ সোসাইটির নাম ভাঙ্গিয়ে সুদ কারবার চালিয়ে যাওয়া সেই চক্র আবারো অপতৎপরতা শুরু করেছে। ঋণ দেয়ার সময় গ্রহণ করা ব্লাঙ্ক চেককে পুঁজি করে নতুন ফন্দি আটা হচ্ছে। হয়রানি করে বাড়তি অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ফাঁদ পেতেছে বিপিসিএল নামের একটি প্রতিষ্ঠানেরওই সময়ের বামন্দী শাখা প্রধান। এমন অভিযোগ করে সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন বামন্দী এলাকার এক ভুক্তভোগী।

জানা গেছে, বামন্দীর মৃত নিয়ামত আলীর ছেলে আলামিন হোসেনের কাছে সম্প্রতি আইনী নোটিশ প্রেরণ করেছেন একই এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মুনতাজ আলী। ইটের ব্যবসার লেনদেন উল্লেখ করে আলামিনের কাছে তিনি মোটা অংকের অর্থ দাবি করছেন। পরিশোধে ব্যর্থ হলে ব্লাঙ্ক চেকের সূত্র ধরে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ারও হুমকি দেয়া হয়েছে। আইনী নোটিশ পেয়ে সহজ-সরল প্রকৃতির আলামিন এখন দিশেহারা। এই আইনী নোটিশের বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে এক সময়কার বাদিয়াপাড়া মাল্টিপারপাস ক্রেডিট কো-অপারেটিভ সোসাইটির (বিপিসিএল) ঋণ কার্যক্রম ও দেওলিয়া হওয়ার বিষয়টি।

ভুক্তভোগী আলামিন হোসেন জানান, বামন্দী এলাকায় যখন বিপিসিএল ও কয়েকটি সংস্থা রমরমা ঋণের ব্যবসা করছিলেন তখন তিনিও কিছু টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। চড়া সূদ হলেও জরুরি প্রয়োজনে তিনি ঋণ নিতে বাধ্য হন। বিপিসিএল থেকে প্রথমে ১ লাখ এবং তা পরিশোধ করার পর দেড় লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। সংস্থার শর্তানুযায়ী জনতা ব্যাংকের নিজ নামীয় হিসাবের একটি ব্লাঙ্ক চেক প্রদান করেন। যার নম্বর- এসবি ১০ বাই এফডি ৭৭১১৭০০। চেকটি ব্যাংক ইস্যু করে ২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর। বিপিসিএল এর বামন্দী শাখা প্রধান ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মুনতাজ আলী। ঋণ ও সুদের বেশির ভাগ টাকা কিস্তি হিসেবে মুনতাজ আলীর কাছে পরিশোধ করেন আলামিন।

চড়া সূদ, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির অনুমোদন ছাড়াই ঋণ কার্যক্রম ও সমবায় নীতিমালা লঙ্ঘণের ঘটনায় প্রশাসন ও গ্রাহকদের প্রতিবাদের মুখে ২০১২-২০১৩ সালের দিকে বামন্দীর ওইসব সংস্থাগুলোতে ধ্বস নামে। বিপদ আচ করতে পেরে গ্রাহকদের পাশ বই কব্জা করে বিপিসিএল। যার কারণে গ্রাহকদের কাছে টাকা পরিশোধের কোনো দলিল নেই। তবে গ্রাহকদের কাছ থেকে নেয়া ব্লাঙ্ক চেক ফেরত দেয়নি বিপিসিএল। এসব কাগজপত্র নিয়ে এর পরিচালক ও কর্মীরা এক পর্যায়ে আত্মগোপন করেন। এর মধ্যে বিপিসিএল পরিচালক আব্দুল আওয়াল ও বামন্দী শাখা প্রধান মুনতাজ আলীও আত্মগোপন করেছিলেন। কয়েকটি সংস্থা হাজারো গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করার ঘটনায় ভুক্তভোগীরা আদালতে কয়েকটি মামলাও দায়ের করেন। এতে সংস্থাগুলোর যে ঋণ গ্রাহকদের কাছে পড়ে ছিলো তা আদায় বন্ধ হয়ে যায়। ফলে টাকা পরিশোধের কোনো উপায় ছিলো না আলামিনসহ অন্যান্য গ্রাহকদের কাছে।

এদিকে সম্প্রতি মুনতাজ আলী একটি সংগঠনের আড়ালে আবারো সেই ব্যবসা শুরু করেছেন বলে এলাকার বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে। পাশাপাশি যাদের কাছে কিছু ঋণ পাওনা ছিলো তাদেরকে নানাভাবে তিনি হয়রানি করছেন। চক্রান্তের অংশ হিসেবে আলামিনের বিরুদ্ধে ব্যবসায়িক লেনদেনের বিষয় উল্লেখ করে আইনী নোটিশ প্রেরণ করেছেন।

এ বিষয়ে আলামিন বলেন, আইনী নোটিশে যে ব্লাঙ্ক চেকের নম্বর উল্লেখ করেছেন তা ওই সময় ঋণ গ্রহণের জন্য তাদেরকে দিয়েছিলাম। চেক বইটি ২০০৯ সালে ইস্যূকৃত। এর পরে আরো ৩টি চেক বই উত্তোলন করেছি এবং সবগুলো চেক পর্যায়ক্রমে ব্যাংকে ব্যবহার হয়েছে। তাহলে ২০০৯ সালের চেক কিভাবে ২০১৭ সালে দেয়া সম্ভব? বিষয়টি নিয়ে তিনি সংশ্লিষ্ঠ দফতর কিংবা আদালতের আশ্রয় নেবেন বলেও জানিয়েছেন।  তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে মুনতাজ আলীর মোবাইলে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেনি।

এলাকাসূত্রে জানা গেছে, ওই সময়ে আত্মগোপনে যাওয়া সুদ ব্যবসায়ীরা আবারো মাথাচড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। সংগঠন কিংবা ব্যক্তি নামে বেশ কয়েকজন চিহ্নিত ব্যক্তি ঋণ কার্যক্রম শুরু করেছেন। নামে ঋণ কার্যক্রম হলেও কার্যত তা দাদন বা সুদ ব্যবসা। অভাবের তাড়নায় এদের কাছ থেকে টাকাও নিচ্ছেন অনেকে। ফলে দিন দিন তাদের অন্ধকার সুদের ব্যবসার প্রসার ঘটছে। তাই এখনই তাদের এই অবৈধ ব্যবসার লাগাম টেনে ধরা না গেলে পূর্বের সেই ক্রেটিড কো-অপারেটিভ সোসাইটির ব্যবসার মত নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করলেন বামন্দীর এলাকার সচেতনমহল। তবে এসব বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিলেন উপজেলা প্রশাসন, সমবায় বিভাগসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ঠ দফতরের কয়েকজন কর্মকর্তা। অপরদিকে দাদন ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরির কাজে মাঠে নেমেছে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা।