আলমডাঙ্গায় প্রতারকচক্র হাতিয়ে নিচ্ছে বিকাশ গ্রাহকদের টাকা

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: বিকাশে টাকা লেনদেন ভিত্তিক আলমডাঙ্গায় একটি শক্তিশালী প্রতারকচক্র অবাধে গ্রাহকদের সাথে প্রতারণার মাধ্যমে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের মাধ্যমে টাকা লেনদেন ভিত্তিক আলমডাঙ্গায় একটি শক্তিশালী প্রতারকচক্র গড়ে উঠেছে। তারা প্রতিদিন বিকাশ গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করে কৌশলে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতারিত ব্যক্তি জানিয়েছেন, গতকাল শনিবার তিনি আলমডাঙ্গা হাইরোডে অবস্থিত একটি বিকাশ এজেন্টের ঘর থেকে ৫শ টাকা উত্তোলন করেন। পরে একটি জিপি নম্বর থেকে তার কাছে অজ্ঞাত ব্যক্তি মোবাইল করে বলেন, আপনি কেবল ৫শ টাকা তুলে নিয়ে গেলেন না? হ্যাঁ জানালে তিনি বলেন, আমি ওই বিকাশ এজেন্ট থেকে বলছি। একটু ঝামেলা হয়েছে। আপনার একাউন্ট একটু চেক করেন জানান ব্যালেন্স কতো। তিনি ৬ হাজার সামথিং জানালে অজ্ঞাত ব্যক্তি আবার বলেন, আমি ভুল করে আপনাকে ৬ হাজার টাকা দিয়ে দিয়েছি। এখনি মেসেজ পাবেন। বলতে না বলতেই মেসেজ। তখন অজ্ঞাত ব্যক্তি আবার মোবাইলফোনে রিং দিয়ে বলেন, ভাই অতিরিক্ত ওই ৬ হাজার টাকা আমাকে পাঠান। যার টাকা ভুল করে আপনাকে দিয়েছি, তিনি অপেক্ষা করছেন। এমন কথা বলেই তিনি একটা বিকাশ নাম্বার দিয়ে নানা রকমভাবে অনুরোধ করেন। তার অনুরোধে গলে তিনি ৬ হাজার টাকা ফেরত দেন। পরে ব্যালেন্স চেক করতে গিয়ে দেখেন শূণ্য।

মাত্র কয়েক দিন পূর্বের ঘটনা। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীকে তার এক আত্মীয় আলমডাঙ্গার এক বিকাশ এজেন্টের নিকট থেকে টাকা পাঠায়। একটু পরেই অজ্ঞাত ব্যক্তি নিজেকে সংশ্লিষ্ট বিকাশ এজেন্ট দাবি করে তার নিকট জিজ্ঞেস করে ব্যালেন্স কতো আছে। শিক্ষার্থী বিষয়টি বুঝতে পেরে নিজের ব্যালেন্স কেন তাকে বলতে হবে এমন প্রশ্ন করলে অজ্ঞাত ব্যক্তি সাথে সাথেই রিং কেটে দেন। আলমডাঙ্গার মেয়ে ঢাকার একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির পিআরও। তিনিও সম্প্রতি এমন অভিজ্ঞতার কথা জানান। আলমডাঙ্গার এক সাংবাদিক সম্প্রতি জানান, তিনি তার বাপ-মা মরা কলেজপড়ুয়া ভাগ্নিকে কিছু টাকা পাঠানোর পর পরই প্রতারকচক্র তা হাতিয়ে নেয়।

এ বিষয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের বিকাশ সংশ্লিষ্ট বিভাগসহ বিভিন্ন সূত্র জানায়, প্রত্যেক বিকাশ এজেন্টের নিকট প্রতারকচক্রের একজন করে বসে থাকে। তারা বিকাশে টাকা পাঠানো ও উত্তোলনকারীর নাম্বার খাতা থেকে মোবাইলে টুকে নেন অথবা মুখস্ত করে নেন। প্রায় সাথে সাথে একটু আড়ালে গিয়ে এমন প্রতারণার জাল ফেলেন।

সূত্রটি আরও জানিয়েছে, অনেক সময় গ্রাহকদের নাম্বারে মিথ্যা ফ্লেক্সি লোড কিংবা বিকাশ হওয়ার ম্যাসেজ পাঠায় প্রতারক চক্র। এর পরে তারা তাৎক্ষণিক গ্রাহকদের ফোন করে বলে যে ভুলে আমার নাম্বারে টাকা ঢুকাতে যেয়ে আপনার নাম্বারে টাকা চলে গেছে।  টাকাটা ফেরত পাঠাতে অনুরোধ করে তারা। এক্ষেত্রে অনেক গ্রাহক ম্যাসেজ দেখেই টাকা লোড করে দেয়। ফলে প্রতারিত হচ্ছেন অনেকেই। আর এসব কাজ করতে জালিয়াত চক্র ব্যবহার করছে কম্পিউটার সফটওয়্যার।

জানা যায়, আলমডাঙ্গা শহরের বাবুপাড়া ও আনন্দধামভিত্তিক দুটি প্রতারকচক্র রয়েছে। এদের প্রায় ২ ডর্জন কর্মী রয়েছে শহরের বিকাশ এজেন্টের ঘরে ঘরে বসে। প্রতিদিন এ দুটি চক্রের ছড়ানো জালে বেশ কয়েকজন ব্যক্তি নিঃস্ব হচ্ছেন। নির্বিঘ্নে এ দুটি চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা।