স্ত্রীর শরীরে আগুন ধরিয়ে ঘরের দরজা দিয়ে পালিয়েছে লম্পট স্বামী 

চুয়াডাঙ্গা বেগমপুরের বোয়ালিয়ায় পরকীয়ায় জড়িয়ে সাতসকালে স্বামীর নৃশংসতা

 

স্টাফ রিপোর্টার: স্ত্রী লিমা আক্তার অন্তরার শরীরে আগুন ধরিয়ে দিয়ে আত্মগোপন করেছে স্বামী নাজমুল মল্লিক। গতকাল সোমবার সকালে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের বোয়ারিয়া বটতলাপাড়ায় রোমহর্ষক এ ঘটনা ঘটেছে। অগ্নিদগ্ধ অন্তরাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কর্তব্যরত চিকিৎসক গতকালই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেয়ার পরামর্শ দিলেও নেয়া সম্ভব হয়নি। আজ  মঙ্গলবার তাকে ঢাকায় নেয়া হতে পারে। অপরদিকে গতকাল থানায় মামলা করতে গেলে সেন্টি নাকি ওসির কক্ষ পর্যন্ত পৌছুতে না দিয়ে বলেছে, পরে এসেন।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের বেগমপুর ইউনয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের সানোয়ার মল্লিকের ছেলে নাজমুল মল্লিকের সাথে ৫ বছর আগে পার্শ্ববর্তী তিতুদহের বলদিয়া মাদরাসাপাড়ার আলম আলীর মেয়ে লিমা আক্তার অন্তরার সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় অন্তরা হিজলগাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী ছিলো। দেখতে গিয়ে বিয়ে হয়। শুরু হয় সংসার। দু আড়াই বছরের মাথায় সংসারে আসে পুত্র সন্তান। তার নাম রাখা হয় আবির। ওর বয়স এখন আড়াই বছর। গতকাল সকালে লিমা আক্তার অন্তরা তার স্বামীর বাড়িতেই ছিলো। সকালে রান্নার কাজ রাননাঘরে ছিলো। প্রয়োজনীয় কিছু নিতে ঘরে গেলে পেছন থেকে তার পরনের শাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে ঘরের দরজা আটকে স্বামী নাজমুল মল্লিক পালিয়ে যায়। অগ্নিদগ্ধ হয়ে লিমা আক্তার অন্তরা চিৎকার করতে থাকে। প্রতিবেশীসহ পরিবারের সদস্যরা উদ্ধার করে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করায়। এ সময় লিমার শ্বশুরসহ এক মামা শ্বশুর লিমাকে প্রকৃত ঘটনা গোপন রাখতে বাধ্য করে। পরে যখন লিমার নিকটজনেরা তার শয্যাপাশে হাজির হয়। তখন সে মুখ খোলে। প্রকৃত ঘটনা জানায়।

লিমা আক্তার অন্তরা বলেছে, যখন ক্লাস এইটে পড়ি, তখন একদিন হঠাত করেই বিয়ের লোকজন বাড়ি হাজির হলো। ছেলে নাকি ভালো। এ কথা শুনে আমার পিতাপক্ষ তড়িঘড়ি করে বিয়ে দিলো। বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি গিয়ে শুনি, স্বামী তার এক মামির সাথে ধরা পড়েছে বলেই তাড়িঘড়ি করে বিয়ে দিয়েছে। এ কথা শুনেও স্বামীকে সুপথে রেখে সংসার শুরু করি। বিয়ের সময় মোটরসাইকেল দিতে হয়েছিলো। তখন ডিশ ব্যবসা করতো। পরে কিনে দিতে হয়েছে অটো। ভালোভাবেই সংসার করছিলো। গত ৪ মাস ধরে সেই মামির সাথে আবারও অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলে। আমার সাথে খারাপ আচরণ করতে থাকে। তারপরও স্বামীকে সুপথে ফেরানোর চেষ্টা করতে থাকি। বুঝতেই পারিনি স্বামী আমাকে এইভাবে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারবে। কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেছেন, লিমা আক্তার অন্তরার শরীরের নিম্নাংশের প্রায় ৬০ শতাংশ পড়েছে। ফলে দ্রুত ঢাকায় নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

কীভাবে আগুন দিলো? অন্তরা ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছে, রান্নাঘরে রান্না করছিলাম। এর মাঝে কিছু নেয়ার জন্য শোয়ার ঘরে গেলাম। এ সময় স্বামী পেছন থেকে পরনের শাড়িতে আগুন ধরিয়ে ঘরের দরজা দিয়ে চলে যায়। আমি আগুন নেভাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। দাউ দাউ করে জলে আমার শরীর পড়ে যায়। বাড়ির লোকজন ছুটে আসে। উদ্ধার করে। স্বামী যে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে তা বলতে বারণ করে শ্বশুর। ওনারাই আমাকে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করানোর পর আমার পিতাকে খবর দেয়।

লিমা আক্তার অন্তরার পিতাপক্ষ গতরাতে বলেছেন, সকাল হলেই ঢাকায় নিতে হবে। রাতে থানায় গেলাম বিষয়টি জানাতে। থানা থেকে বলা হলো, আজ আর কিছু হবে না। আগামীকাল আসেন। এ কথা শুনে ফিরে এসেছি।

Leave a comment