ইজিবাইক চালকসহ ৪ জন ধর্ষণ করলো এক স্কুলছাত্রীকে

আলমডাঙ্গা থেকে চুয়াডাঙ্গায় কথিত প্রেমিকের সাথে দেখা করতে এসে ইজিবাইকের ভাড়া না দিতে না পেরে হেনস্থ

 

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গায় এক স্কুলছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। ইজিবাইক চালকের ভাড়া মেটাতে না পারার কারণে ওই যুবক চালক তাকে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করে। পরে একে একে আরও তিন যুবক ধর্ষণ করে ওই স্কুলছাত্রীকে। গভীর রাতে আলমডাঙ্গার জেহালা ইউনিয়ন পরিষদের এক মেম্বারের আশ্রয়ে থাকে সে। সকালে তার অভিভাবকরা মেম্বারের হেফাজত থেকে বাড়িতে নিয়ে যায়। তবে পরিবারের লোকজন মামলা করতে চাইলেও বিভিন্ন কারণে তারা এখনও মামলা করতে যায়নি থানায়। এদিকে অভিযুক্ত ধর্ষকদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী। তাদেরকে গ্রেফতার পূর্বক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।

এলাকাবাসী ও ধর্ষিতার মুখ থেকে জানা গেছে, আলমডাঙ্গার নবম শ্রেণির এক ছাত্রী রোববার বিকেলে আলমডাঙ্গা রেলস্টেশন এলাকা থেকে একটি ইজিবাইক আড়াইশ’ টাকায় রিজার্ভ করে। ইজিবাইক যোগে সে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের শিশুস্বর্গ নামক পার্কের কাছে যায়। সেখানে ওই স্কুলছাত্রীর কথিত প্রেমিক আসার কথা ছিলো। সে এসে ইজিবাইকের ভাড়া মেটাবে কথা ছিলো এমনটি।

স্কুলছাত্রী জানায়, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সাতগাড়ি গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে সাইফুল ইসলাম তাকে চুয়াডাঙ্গায় আসতে বলেছিলো। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রতীক্ষা করেও সে না আসায় ভাড়ায় নেয়া ইজিবাইকেই ফিরে যাচ্ছিলো ওই স্কুলছাত্রী। আলমডাঙ্গার দক্ষিণ গোবিন্দপুর গ্রামের আশাদুল হকের ছেলে ইজিবাইক চালক সোহেল রানা ভাড়ার টাকা না পেয়ে স্কুলছাত্রীর দুর্বলাতার সুযোগ নেয়। সে তার আরেক বন্ধু ইজিবাইক চালক পার্শ্ববর্তী বড় পুঁটিমারী গ্রামের সেকেন্দার আলীর ছেলে ইউসুফকে ডেকে নেয়। তারা উপজেলার মুন্সিগঞ্জ পশুহাট-বেতবাড়ীয়া সড়কের মাঠের ভুট্টাক্ষেতে নিয়ে যায় রাত ৮টার দিকে। সেখানে সোহেল ও ইউসুফ পালাক্রমে উপর্যুপরি ধর্ষণ করে ওই স্কুলছাত্রীকে। পরে তারা স্কুলছাত্রীকে নিয়ে দক্ষিণ গোবিন্দপুর-বেতবাড়ীয়া মোড়ে পৌঁছুলে স্কুলছাত্রীকে পুনরায় মাঠে নিয়ে যায় দক্ষিণ গোবিন্দপুর গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে রনক ও ছানোয়ার হোসেনের ছেলে মাসুম আলী। তারাও তাকে ধর্ষণ করে। এরা দুজন রাতে গ্রামের কয়েকজনের বাড়িতে ধর্ষিতাকে রাতটুকু রাখার চেষ্টা করলে গ্রামে হইচই শুরু হয়।  গ্রামের আক্কাচ ও ফয়েজের বাড়িতে মেয়েটিকে রাখার চেষ্টা চালাই রনক ও মাসুম। তখনও স্কুলছাত্রী ধর্ষণের বিষয়টি কাউকে বলতে চায়নি ভয়ে। গ্রামের লোকজন রাতে স্থানীয় মুন্সিগঞ্জ ফাঁড়ি পুলিশকে জানায়। কিন্তু পুলিশ তেমন আমল দেয় না। পরে গ্রামের লোকজনের জেরার মুখে পড়ে ধর্ষিত স্কুলছাত্রী। তাকে কেউ কেউ তার চরিত্র নিয়ে কটু কথাও বলে। কয়েকজনের অনুরোধে স্থানীয় ইউপি মেম্বার হাসিবুল হক তার বাড়িতে রাত ১২টার দিকে নিয়ে যান ধর্ষিতকে। তার বাড়িতে রাত যাপনের পর গতকাল সোমবার সকালে তার পরিবারের কাছে খবর পাঠানো হয়। তার পরিবারের লোকজন এলে তাদের হাতে স্কুলছাত্রীকে তুলে দেন ইউপি মেম্বার হাসিবুল হক। তিনি বলেছেন, রাতে আমার হেফাজতে থাকা মেয়েটি ধর্ষণের ব্যাপারে দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে।

অভিযোগ রয়েছে, স্কুলছাত্রীর পরিবার মামলা করতে গেলেও বিভিন্ন মহল থেকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে মুন্সিগঞ্জ ক্যাম্প ইনচার্জ এসআই হাকিম জানান, রাতে একটা ঘটনা শুনেছিলাম। সকালে গিয়ে মেয়েটাকে আর পাইনি। তার পরিবারের লোকজন তাকে নিয়ে যাওয়ার কারণে বিস্তারিত জানতে পারিনি।

আলমডাঙ্গা থানার ওসি আকরাম হোসেন বলেন, আমার থানায় এ ব্যাপারে কেউ অভিযোগ করতে আসেনি। বিষয়টি আমার নলেজেও নেই। তবে এখন শুনলাম ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ফোর্স পাঠাচ্ছি।’ চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) তরিকুল ইসলাম দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, ‘অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এটি কথিত প্রেমিকের ষড়যন্ত্রও হয়ে থাকতে পারে। ঘটনা সত্যি হলে অবশ্যই ধর্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’