মুখরিত হয়ে উঠেছে লালনের ছেঁউড়িয়া

স্টাফ রিপোর্টার: গত শনিবার লোকসমাগম কম হলেও রোববার বিকেলে আখড়ামুখী ভক্তদের স্রোত নামে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন বাউল, ফকির, সাধু এবং দর্শনার্থীরা। জমজমাট হয়ে ওঠে ছেঁউড়িয়া কালি নদীর পাড়। গতকাল বিকেলে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, উৎসবে আসা সবাই মজে আছেন গান আর আলোচনা নিয়ে। আনন্দ ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন বাউল, সাধু আর দর্শনার্থীরা। পাশ্ববর্তী দেশ ভারতসহ কয়েকটি দেশের বেশ কিছু লালনভক্ত এবার অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন।

লালন একাডেমি সূত্র জানিয়েছে, এবার আগেভাগে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় বেশ সমস্যায় পড়তে হয়। তবে সে শঙ্কা আর আপাতত নেই। সকালে কয়েক হাজার সাধু বাল্যসেবা গ্রহণ করেন। খিচুড়ি, ভাত, সবজি ও মিষ্টি দিয়ে তাদের আপ্যায়ন করা হয়। দুপুরে দেয়া হয় বিশেষ ভোজ। এ ভোজনকে বাউলরা বলেন পূর্ণ সেবা। পূর্ণ সেবার বিষয়ে বাউলরা জানান, লালন জীবিত থাকার সময়ই এ প্রচলন ছিলো। এর বিশেষত্ব হলো, সবার খাবার পরিবেশন শেষ হলে মাজারের খাদেম মাইকে ‘আলেক’ বলে জোরে শব্দ করেন। তখন সবাই খাবার মুখে দেন। এ জন্য তাদের কয়েক ঘণ্টা খাবার সামনে নিয়ে অপেক্ষা করতে হয়।

মাজারের খাদেম মোহাম্মদ আলী জানান, এবার চার থেকে পাঁচ হাজার মানুষ এক সাথে খাবার খেয়েছে। শাদা ভাত, মাছ, সবজি, ডাল ও দই ছিলো তালিকায়।

এ বছর অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করছেন শতাধিক শিল্পী। একাডেমির শিল্পীরা ছাড়াও বাইরে থেকে আসা অনেক শিল্পী গান পরিবেশন করছেন। রাতে চলে লালনের গান। রাত যত গভীর হয়, ততই বাড়ে গানের আবহ। মাজার ছেড়ে সে আওয়াজ চলে যায় বহুদূর। মাজার কমিটির সদস্য সেলিম হোসেন জানান, সন্ধ্যায় আলোচনা সভা শেষ হওয়ার পর শুরু হয় গান।

এ বছর আগেভাগেই পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানোর কারণে একটি চক্র আগের মতো গাঁজার ব্যবসা করতে পারে নি। একাডেমির এক সদস্য জানান, অনুষ্ঠানকে পুঁজি করে বিগত বছরগুলোতে একটি সিন্ডিকেট লাখ লাখ টাকার গাঁজা নিয়ে এসে ব্যবসা করতো। জেলা ও পুলিশ প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করতো। এ বছর পুলিশের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে পাশেই কয়েকটি বাড়িতে অনেককে প্রকাশ্যে গাঁজা সেবন করতে দেখা গেছে।