ধৈর্য ও মনোসংযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ

 

বাংলাদেশের ক্রিকেটে ক্রমোন্নতির ধারা বেশ কয়েক বছর ধরেই দৃশ্যমান। ওয়ানডে ক্রিকেটে তো বটে, এমনকি টেস্টেও বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা উন্নতির আভাস দিয়ে আসছিলো। কিন্তু সম্প্রতি তাদের টেস্টের উন্নতি অনেকটাই হতাশাজনক। বিশেষ করে ভালো খেলার আশা জাগিয়ে শেষের দিন বা শেষদিকে তাদের হাল ছেড়ে দিতে দেখে দর্শকরা বিরক্ত। এভাবে তীরে এসে তরী ডুবে গেলে সকলেরই খারাপ লাগার কথা। গত গল টেস্টে ঘটেছে এমনই ঘটনা। প্রথম থেকেই বলা হয়েছিলো এই টেস্টে অভিজ্ঞ বাংলাদেশই ফেভারিট। কিন্তু শেষপর্যন্ত তরুণ শ্রীলঙ্কার নিকট তারা হেরে গেলো ২৫৯ রানের বিশাল ব্যবধানে। অথচ পঞ্চম দিনে আগের ৬৭ রান ও ১০ উইকেট হাতে নিয়ে খেলতে শুরু করলেও তারা সম্মানজনক ড্রও করতে পারলো না। ব্যাটিং উপযোগী উইকেট থাকা সত্ত্বেও তারা মাত্র ৪৫ দশমিক ২ ওভারেই কুপোকাত! এইদিন ব্যাটসম্যানদের ড্রেসিংরুমমুখী আসা-যাওয়া দেখে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমী দর্শকমাত্রই বিস্মিত ও মর্মাহত হয়েছে।

শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টের ফলাফল দেখে অনেকে এখন প্রশ্ন করছেন, বাংলাদেশ কি আগের যুগে ফিরে যাচ্ছে? অন্তত আমরা তা মনে করি না। অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম বলেছেন, ব্যাটিং বিপর্যয়ের কারণেই ম্যাচটি হেরেছে বাংলাদেশ। ব্যাটসম্যানদের মানসিকতা তাকে হতাশ করে করেছে। মাত্র ৩৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে। একে একে সাজঘরে ফিরে যান মুমিনুল হক, তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ। এরপর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা যে ছিলো না তা নয়। কিন্তু অধিনায়কের বিদায়ের পর আবার দেখা দেয় বিপর্যয় এবং ১৩ ওভারেই শেষ বাকি চার উইকেট। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সাকিবের মতো বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যানও এই দিন ধৈর্য নিয়ে খেলতে পারেননি।

বাংলাদেশ নতুন শতাব্দীর শুরুতে তথা ২০০০ সালে টেস্ট ক্রিকেটের মর্যাদা লাভ করে। এরপর নিজ দেশে এই বছরের ১০-১৩ নভেম্বর ভারতের সাথে প্রথম টেস্ট খেলে। কিন্তু আমরা ক্রিকেটের এই মর্যাদাকর ভার্শনে এখনও তেমন সাফল্যের দেখা পাইনি। এই পর্যন্ত ৯৯ টেস্ট খেলে মাত্র আটটিতে জয়লাভ করেছে বাংলাদেশ। হেরেছে ৭৬টি। ড্র করেছে ১৫টিতে। তবে এমন কয়েকটি টেস্টও আমরা খেলেছি যেখানে আমাদের জয় বা ড্রয়ের সম্ভাবনা ছিলো ব্যাপক। কিন্তু অনভিজ্ঞতা, অপেশাদারত্ব ও অবহেলায় আমরা সেই সুযোগ হাতছাড়া করেছি। বিশেষ করে টেস্টে ধৈর্য ও মনোসংযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু উপর্যুপরি বিপর্যয়ে ব্যাটসম্যানদের মনস্তাত্ত্বিক যে সমস্যা দেখা দেয় মাঝেমধ্যে, তা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে হবে। আমরা আশা করি, আগামী ১৫ মার্চ কলম্বোতে অনুষ্ঠিতব্য নিজেদের শততম টেস্ট ম্যাচ হতেই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে। সবসময় ইতিবাচক খেলার প্রত্যয় ব্যক্ত করবে। শততম টেস্ট উপলক্ষে বাংলাদেশের ক্রিকেট টিমের প্রতি আমাদের শুভ কামনা।