বজ্রপাতের মওসুম শুরু, সচেতনতার তাগিদ

স্টাফ রিপোর্টার: গত বছর ১৪২ জনের মৃত্যুর পর বজ্রপাতকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করেছিল সরকার। এবারও বিস্তৃত এলাকাজুড়ে বজ্রঝড় হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়াবিদদের তথ্য অনুযায়ী, মধ্য ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলাদেশে শুরু হয়েছে কালবৈশাখী, বজ্রপাত আর বজ্রঝড়ের মৌসুম। এর মধ্যে মার্চে উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে ১-২ দিন মাঝারি বা তীব্র কালবৈশাখী অথবা বজ্রঝড় এবং অন্যত্র ২-৩ দিন হালকা অথবা মাঝারি কালবৈশাখী বা বজ্রঝড় হতে পারে। এপ্রিলে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ৩-৪ দিন মাঝারি থেকে তীব্র কালবৈশাখী বা বজ্রঝড় এবং অন্যত্র ২-৩ দিন হালকা থেকে মাঝারি কালবৈশাখী ও বজ্রঝড় হতে পারে। তাৎক্ষণিক পূর্বাভাস (নাউ কাস্টিং), ব্যাপক প্রচারণা আর জনসচেতনতা সৃষ্টি করা গেলে এ ধরনের দুর্যোগ থেকে প্রাণহানির পরিমাণ কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর বলছে, বজ্রপাতের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আবহাওয়ার পূর্বাভাস প্রচার ও জনসচেতনতায় তৎপরতার পাশাপাশি দেশজুড়ে ১০ লাখ তালগাছ লাগানোর পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছে তারা।

অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সানাউল হক খান জানান, আবহাওয়া সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় পূর্বাভাস অধিদপ্তর সঠিকভাবে দিলেও বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের। বজ্রমেঘ তৈরির ৩০-৪৫ মিনিটের মধ্যে দিক ও সম্ভাব্য স্থান শণাক্ত করে পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব। এসময় নদীবন্দরগুলোকে দৈনিক চার বার পূর্বাভাসও দেওয়া হয়,” বলেন তিনি। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে আবহাওয়া অফিসগুলোর মধ্যে উচ্চপ্রযুক্তির রাডার ও ডফলার রাডার রয়েছে। ২৪ ঘণ্টা আগে পূর্বাভাস দিতে বিমান বন্দরসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অনেক অধিদপ্তর ও স্থাপনার উচ্চ প্রযুক্তিকেও কাজে লাগানো হচ্ছে বলে জানান এ আবহাওয়াবিদ। আমরা এখন স্বল্প সময়ের নাও কাস্টিংও দিচ্ছি। ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসের পর আরও নিখুঁত করে নির্দিষ্ট এলাকা চিহ্নিত করে এসব পূর্বাভাস দেওয়া হয়। কিন্তু পূর্বাভাস দিলেই তো হবে না এগুলো প্রচারে গণমাধ্যমসহ অন্যান্য অধিদপ্তরকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে,” বলেন আবহওয়াবিদ সানাউল।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডব্লিউএফএম রিচার্স ফেলো ও বিলুপ্ত সার্ক আবহাওয়া গবেষণা কেন্দ্রের গবেষক মোহন কুমার দাস বলেন, অধিদপ্তরের যে প্রযুক্তিনির্ভর অবকাঠামো রয়েছে তা দিয়ে আরও নিখুঁতভাবে কয়েকঘণ্টার ব্যবধানে হুমকিপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করা যায়। উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা না বলে জেলা, উপজেলা ও গ্রাম পর্যন্ত পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব। হাওর এলাকায় বজ্রপাত ও বজ্রঝড়ের প্রবণতা বেশি। এসব এলাকাকে চিহ্নিত করে জনসচেতনতায় ব্যাপক উদ্যোগ নিতে হবে।

গত বছর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বজ্রপাতকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করা হয়েছে উল্লেখ করে এক বছরে ১৪২ জনের মৃত্যুর খবর সংসদে দিয়েছিলেন। ওই বছর কেবল মে মাসের দুই দিনেই এ দুর্যোগে ৮১ জনের প্রাণহানি ঘটেছিলো। বাংলাদেশে প্রতি বছর বজ্রপাতে গড়ে দুই থেকে তিনশ মানুষের প্রাণহানি ঘটে।