স্বস্তির বৃষ্টিতে চুয়াডাঙ্গায় রকমারি সঙ্কট

স্টাফ রিপোর্টার: ক’দিন ধরেই আকাশে মেঘের ঘনঘটা। দক্ষিণের সফেদ মেঘগুলো চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরের ওপর দিয়ে ভেসে গেলেও দু এক ফোটা বারি ঝরানো ছিলো খানেকটা তামাশারই মতো। গতকাল বিকেলের মেঘ তেমন ছিলো না। সন্ধ্যার আগে আগে গুমরামুখো মেঘে বৃষ্টি ঝরিয়ে শুধু পথের ধূলোই মারেনি, আমের মুকুল রক্ষায় হয়েছে সহায়ক। যদিও মাটি পুড়িয়ে ইট প্রস্তুতকারদের গুনতে হয়েছে ক্ষতির পরিমাণ। আর বৃষ্টির সময় সামান্য বাতাসে বিগড়ে যাওয়া বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থা ব্যাহত করেছে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা। দফায় দফায় বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধের কারণে গ্রাহক সাধারণের নাভিশ্বাসও ওঠে। তাছাড়া বৃষ্টির কারণে চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রধান সড়কগুলোর বিভিন্ন স্থানে স্যাঁতস্যাঁতে কাদায় দুর্ঘটনার ঝুঁকির মধ্যে ফেলে। ইটভাটার জন্য নেয়া এঁটেল মাটির কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
চুয়াডাঙ্গায় ঠিক কতোটুকু বৃষ্টি হয়েছে তা নিশ্চিত করে জানা সম্ভব হয়নি। তবে তা ৩ মিলিমিটারের কম নয়। দীর্ঘদিন পর বৃষ্টিতে ফাগুনের বাতাস হয়ে ওঠে শীতল। গতকাল দেশের সর্বাধিক বৃষ্টি কক্সবাজারে ৬৯ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়। মংলায় রেকর্ড করা হয় ১১ মিলিমিটার বৃষ্টি। বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের আগে থেকেই চুয়াডাঙ্গায় বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থার নাজুক পরিস্থিতি ফুটে ওঠে। যার সবাধিক বিরূপ প্রভাব পড়েছে সদর হাসপাতালে। কারণ গতকাল থেকে জেনারেটরের তেলও ফুরিয়ে গেছে। এ বিষয়ে হাসপাতালের ডায়নামাচালক মোতালেব হোসেন বলেছেন, গত বছরের ২০ নভেম্বর ৭০ লিটার তেল দেয়া হয়েছে। এরপর আর তেল পাইনি। এখন শুনছি বকেয়ার দায়ে পাম্প থেকে তেল দিচ্ছে না। ফলে বিদ্যুত চলে গেলে জরুরি প্রয়োজনেও এখন আর ডায়নামা চালু করার জো নেই। গতকাল চুয়াডাঙ্গায় বিদ্যুতের যাওয়া আসার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ওজোপাডিকো চুয়াডাঙ্গার সহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রহমান বলেন, বিদ্যুতের ঘাটতি নেই। বিতরণ কেন্দ্রে ও গ্রিড সাবস্টেশনে অল্প সময়ের ব্যবধানে সামান্য ত্রুটির দেখার কারণেই কয়েক দফা কিছু সময়ের জন্য বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ করতে হয়।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, ফাল্গুনের শেষে এসে অবশেষে জীবননগরবাসী বৃষ্টির দেখা পেয়েছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার পূর্ব থেকে শুরু হয় এ বজ্রবৃষ্টি। সাথে বয়ে গেছে হিমেল হাওয়া। এ বৃষ্টিতে ইটভাটার ইট বিনষ্ট হলেও সবজিসহ অন্যান্য ফসলের জন্য ভালো বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। এবার শীত মরসুমজুড়ে এ উপজেলাবাসী বৃষ্টির দেখা পায়নি। দীর্ঘদিন পর অনেকটা হঠাৎ করেই সন্ধ্যার পূর্ব থেকে বজ্রবৃষ্টি নামে। শীতের শেষে এ বৃষ্টি হিমেল বাতাসও বয়ে আনে। হঠাৎ নেমে আসে এ বৃষ্টিতে উপজেলার প্রায় অর্ধশতাধিক ইটভাটার ইট বিনষ্ট হলেও সবজিসহ উঠতি ফসলের জন্য উপকার বয়ে এনেছে বলে কৃষকরা জানিয়েছে।
ভালাইপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গার ভালাইপুর মোড়ে ৩টি ইটভাটার মাটি আনা নেয়ার ফলে রাস্তার এঁটেল মাটি পড়ে আজকের এই হালকা বৃষ্টিতে স্যাঁতস্যাঁতে কাদা কয়েকটি মোটরসাইকেল আছড়ে পড়লে গুরুতর আহত হয়ে ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় হাসপাতালে ভতি করা হয়েছে বলে জানা যায়। দুর্ঘটনার পর তাৎক্ষণিক ফায়ার সার্ভিস হাসপাতালে নেয়ায় আহতের নাম জানা সম্ভব হয়নি।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সড়কের ভালাইপর মোড়ে জুড়ানপুর ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেনের ইটভাটা এমএফআইবি ও হালিম মিয়ার এসবিএম ইটভাটার কারণে রাস্তার এ বেহালদশা। এদিকে ভালাইপুর হাটবোয়ালী সড়কের খাদিমপুর মোড়ে মশিউর রহমানের কেড়িবি ইটভাটার কারণে রাস্তার এঁটেল মাটি পড়ে মারণফাদ হয়ে পড়েছে।

Leave a comment