সুযোগ পায় বলেই প্রতারকরা সুযোগ নেয়

একশ একটা গরুর লোভে নিজের কেনা একটা গরু বিক্রির সব টাকা গোচিয়ে দেয়া গোবেচারার খবরটি যতোটা না চমকানো, তার চেয়ে বেশি বিচলিতকর ‘রিকশাচালক জিনের বাদশা সেজে কোটিপতি’ হওয়ার খবর। একজন রিকশাচালকই শুধু নয়, গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় প্রকাশিত এক কলামের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র ফেনী ঢাকা এলাকাতেই রয়েছে দু হাজারের মতো জিনের বাদশা সাজা প্রতারক। যাদের অধিকাংশই মোবাইলফোনে কণ্ঠস্বর মোবাইলফোনের মাধ্যমেই বদলে নিয়ে জিনের বাদশা বলে পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে। এদের শিকার কারা? মাঝে মাঝেই প্রতারিতদের হায় হায় করার খবর পত্রস্থ হয়। মেহেরপুরের নতুন দরবেশপুর স্কুলপাড়ার উদীয়মান সংসারির প্রতারিত হওয়ার বিস্তারিত বর্ণনা গতকাল গুরুত্বসহকারে মাথাভাঙ্গার প্রথম পাতায় তুলে ধরা হয়। ক’দিন আগে জীবননগর হাসাদাহে লটারির কথা বলে প্রতারক হাতিয়ে নেয় টাকা।
সেলফোন তথা মোবাইলফোনে জিনের বাদশা সাজা বা ভীতিকর চরমপন্থি দলের নেতা সাজতে দরগা লাগে না। যেখানে সেখানে বসেই সরল সোজাদের ভয় দেখিয়ে, লোভের টোপে অর্থ হাতিয়ে নেয়া যায়। ওদের মূল অস্ত্র মোবাইলফোন। অথচ এই মোবাইলফোন কে কোথায় কখন কোন ধরনের সেট ব্যবহার করছে, কোথায় কবে অবস্থান করেছে তা শনাক্ত করা অসম্ভব নয়। তাহলে ওরা ধরা পড়ে না কেন? কেন প্রতারকদের প্রতারণা বন্ধ করার মতো শক্ত ব্যবস্থা নেয়া হয় না? মাঝে যখন এক প্রতারক নিজেকে চরমপন্থি দলের নেতা মেজর জিয়া বলে চাঁদা চেয়ে বসে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের কাছে, তখন তা নিয়ে হইচই পড়ে যায়। পরবর্তীতে জানা গেছে, ওই প্রতারকচক্রের কয়েক সদস্য ধরা পড়েছে। যে নম্বর দিয়ে চাঁদাবাজি করা হচ্ছিলো সেই সিম তথা নম্বরটি বিক্রিতে দুর্নীতি করা অভিযোগে বিক্রেতাকেও আইনের আওতায় নেয়া হয়েছে। কারণ জেলা প্রশাসকের নিকট চাঁদা দাবি করা মাত্রই পুলিশকে জানানো হয়েছিলো। পুলিশও বিষয়টিকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়েছিলো। অন্যদের ক্ষেত্রে? হুমকিধামকির পর একাধিকবার পুলিশে নালিশ করেও প্রতিকার মেলে না বলে অনেকের যেমন অভিযোগ রয়েছে, তেমনই অনেকে সে পথে হাঁটতে আগ্রহী হন না। ভাবেন, যখন হারানো টাকা পাবো না তখন ও নিয়ে ছুটে সময় নষ্টের দরকার নেই। ফলে সহজেই পার পেয়ে যায় প্রতারক। তা না হলে কি কয়েক হাজার মানুষ প্রতারণার পথ ধরে? সুযোগ পায় বলেই ওরা সুযোগ নেয়।
যেহেতু কোনো সেলফোন নম্বর তথা সিম রেজিস্ট্রেশন এখন আর রেজিস্ট্রেশনহীন নয়, সেহেতু কোন নম্বর কোন ব্যক্তির নামে তাকে শনাক্ত করা অসম্ভব নয়। তাছাড়া অন্যের জাতীয় পরিচয়পত্র জাল করেও যদি কেউ সিম নিয়ে তা দিয়ে প্রতারণা করে তাও প্রতারকের ব্যবহৃত সেলফোন ট্র্যাকিঙের মাধ্যমে জানা সহজ। তাহলে মোবাইলফোন প্রতারক নিবিঘের্œ দিনের পর দিন প্রতারণা করছে কীভাবে? দেশে আইন আছে। আইন প্রয়োগকারী একাধিক সংস্থা রয়েছে। এসব সংস্থাসমূহের দায়িত্বশীলদের যেমন কর্তব্যপরায়ণতা প্রয়োজন, তেমনই সাধারণ মানুষগুলোকেও সচেতন হওয়া দরকার। জিন-পরী এবং মোবাইলফোন সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা থাকলেই তো প্রতারক চেনা যায়। আর হুমকিধামকি দিয়ে চাঁদাদাবি? সজাগ হলে সেটাও প্রতিহত করা অসম্ভব নয়। বাস্তবতার আলোকে এখন দরকার ভয়কে জয় করার মত সাহস আর লোভের টোপ পরিহারের মানসিকতা।