চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ে দালাল চক্র সক্রিয় : গ্রাহক হয়রানি

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল রোডে অবস্থিত আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ে দালাল ও প্রতারক চক্র অত্যন্ত সক্রিয়। এ কারণে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ গ্রাহকদের। অতিরিক্ত এক থেকে দুই হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে তাদের। এই চক্রের সাথে পাসপোর্ট কার্যালয়ের এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। আঞ্চলিক এই পাসপোর্ট কার্যালয়ের তিনতলা ভবনের দোতলায় বড় একটি সাইনবোর্ড টাঙানো। তাতে লেখা- দালাল-প্রতারক থেকে সাবধান। পাসপোর্ট ফি জমা দিতে অপরিচিত লোকের সহযোগিতা নেবেন না। প্রতারণার শিকার হতে পারেন। তবে অনেকে ওই ভবনের কাছে পৌঁছানোর আগেই দালাল ও প্রতারক চক্রের শিকারে পরিণত হন। আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে এখানে গ্রাহকসেবা শুরু হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই কার্যালয়ে ২৯ হাজার ৪২৫ জন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। এর মধ্যে ২৭ হাজার ৯৪৪ জনের পাসপোর্ট বিতরণ করা হয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, পাসপোর্ট কার্যালয়ের সংযোগসড়কের প্রবেশমুখেই একটি ব্যানারে লেখা বিনা মূল্যে পাসপোর্টের ফরম বিতরণ ও ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের মাধ্যমে পূরণ করা হয়। অথচ ওই ব্যানারের নিচে বিসমিল্লাহ স্টোর নামের একটি দোকানে পাসপোর্টের প্রতিটি ফরম ১০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। তাছাড়া আশপাশের দোকানে বসে ওই ফরম পূরণ করে দিচ্ছিলেন কয়েক ব্যক্তি। তারা দালাল বলে অভিযোগ রয়েছে। বিসমিল্লাহ স্টোরের মালিক মো. রাসেল বলেন, ফরম বিক্রির বিষয়ে পাসপোর্ট কার্যালয়ের অনুমোদন আছে তার। তবে দালালদের সাথে তার কোনো যোগসাজশ নেই।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চক্রের সদস্যদের কাছে বিভিন্ন পৌরসভার মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান, চিকিৎসক, কলেজশিক্ষক ও প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের নামসংবলিত সিল রয়েছে। তারা পাসপোর্ট ফরম পূরণ ও আনুষঙ্গিক কাজে প্রয়োজন অনুযায়ী সিল মেরে নিজেরাই জাল স্বাক্ষর করেন। সম্প্রতি আলমডাঙ্গা উপজেলার বারাদী ইউপি চেয়ারম্যানের সিল ও স্বাক্ষর জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে তথ্য যাচাইকালে বিষয়টি ধরা পড়ে। ইউপি চেয়ারম্যান তবারক হোসেন বলেন, ওই স্বাক্ষর তার নয়। নিয়মানুযায়ী মূল্য সংযোজন করসহ ৩ হাজার ৪৫০ টাকায় ২১ দিনে সাধারণ ও ৬ হাজার ৯০০ টাকায় ৭ দিনে জরুরি পাসপোর্ট সরবরাহের কথা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে নির্ধারিত টাকা ব্যাংকে জমা দেয়ার পরও অনেকে নিতান্ত বাধ্য হয়ে দালালদের দ্বারস্থ হচ্ছেন। মফিজুর রহমান নামের একজন ভুক্তভোগী বলেন, দালালদের দিয়ে পাসপোর্টের ফরম পূরণ না করায় তাকে দফায় দফায় হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। ছবি তোলা ও আঙুলের ছাপ দিতে গিয়ে কয়েক দিন ঘুরতে হয়েছে। এমনকি পাসপোর্টও দেয়া হয়েছে ভুলে ভরা।

মো. শাহাবুদ্দীন নামের একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী বলেন, দালালদের দৌরাত্ম্যে তারা অতিষ্ঠ। শিগগির দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। কার্যালয়ের কর্মচারীদের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক এসএমএ সানী বলেন, তিনি এখানে যোগদানের পর এই কার্যালয়ে দালালদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। গ্রাহকদের হয়রানির অভিযোগে শহীদুল ইসলাম, সিজার ও হাসিবুল নামের তিন দালালকে তিনি হাতেনাতে ধরেছিলেন এবং লোকজনের কাছ থেকে নেয়া অতিরিক্ত টাকা ফেরত দিতে বাধ্য করেছিলেন। আর কখনো প্রতারণা করবেন না মর্মে তাদের কাছ থেকে মুচলেকাও নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভায় দালালদের দৌরাত্ম্যের বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে। পুলিশ সুপার ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদেরও অবহিত করা হয়েছে। পাসপোর্টে ভুল তথ্যের বিষয়ে তিনি বলেন, গ্রাহকদের অসতর্কতার কারণেই এসব হয়ে থাকে।

Leave a comment